লড়াকু: সুবাসিনী। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি হাসপাতালে শয্যা মেলেনি, আর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সামর্থ্য ছিল না বলে স্বামীর চিকিৎসাও করাতে পারেননি। বিনা চিকিৎসায় স্বামী সাধন মিস্ত্রির মৃত্যুর পরে আনাজ বেচে, নিজের পরিশ্রমেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন সুবাসিনী মিস্ত্রি।সেই ৭৩ বছরের সুবাসিনীকেই আজ দেশের ভোল বদলে দেওয়া অন্যতম মহিলা হিসেবে স্বীকৃতি দিল নীতি আয়োগ। রাষ্ট্রপুঞ্জ ও নরেন্দ্র মোদীর ‘মাই গভ’-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে নীতি আয়োগ ‘উওমেন ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া’ পুরস্কার চালু করেছে। আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সুবাসিনী-সহ দেশের ১২ জন মহিলার হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন।
আরও পড়ুন: গুরমিতকে নিয়ে আরও অভিযোগ
নীতি আয়োগের বক্তব্য, কমবয়সি না হয়েও, শিক্ষা বা অর্থের অভাব সত্ত্বেও যে সাফল্য পাওয়া যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাঁসপুকুরের সুবাসিনী তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, আশা করার সাহস, পরিশ্রম ও মনের জোর থাকাটাই যথেষ্ট। সুবাসিনীর স্বামী, দিনমজুর সাধনবাবু যখন মারা যান, তখন বাড়িতে সঞ্চয় ছিল না। চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে লোকের বাড়ি কাজ করা, বাচ্চাদের নিয়ে ধাপার মাঠে ময়লা ঘেঁটে কয়লা তুলে বিক্রি করা শুরু করেন। তার পর শুরু ঠেলাগাড়িতে আনাজ বেচা। কোলের বাচ্চা ছাড়া বাকি তিন জনকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দেন। ধান জমিতে কোমর জল ঠেলে মাথায় মাটি নিয়ে ফেলে হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু করেন। তাঁকে দেখে আশপাশের মানুষ এককাট্টা হয়ে ট্রাস্ট তৈরি করেন। ঠাকুরপুকুর বাজার লাগোয়া হাঁসপুকুরের ১৯ কাঠা জমির উপর ৪৫ শয্যার ‘হিউম্যানিটি হসপিটাল’-এ গরিব রোগীদের চিকিৎসা, ওষুধে কোনও টাকা লাগে না। আইসিসিইউ, ভেন্টিলেশন, আউটডোর ছাড়াও মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, আই, ইএনটি, ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, ইউরোলজি-সহ একাধিক বিভাগ রয়েছে। পুরস্কার বাছাই কমিটিতে নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানগড়িয়া, সিইও অমিতাভ কান্ত ছাড়াও ছিলেন প্রাক্তন বিদেশসচিব নিরুপমা রাও, অ্যাথলিট পি টি উষা, বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার পূজা ঠাকুর ও রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তা ইউরি আফানাসিয়েভ। কমিটির মতে, ওই হাসপাতাল সুবাসিনীর ইচ্ছাশক্তির জোর এবং অতুলনীয় জেদের প্রতীক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy