বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে সংক্রমণের হার। ছবি: পিটিআই
রাজ্যে গত বেশ কয়েক মাস বেশ স্তিমিতই ছিল করোনা পরিস্থিতি। ইতিউতি কয়েক জন আক্রান্ত হলেও তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্য মহলের। কিন্তু গত কয়েক দিনের সরকারি পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার, রাজ্যে অল্প অল্প করে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। স্বাস্থ্য দফতরের রবিবারের করোনা বুলেটিন অনুযায়ী পরীক্ষার ৩.৫০ শতাংশ নমুনায় করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬২ জন। কলকাতার বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার পরিসংখ্যানেও সংক্রমণ বাড়ার ছবিই উঠে আসছে। আগের মতো ভয়াল না হলেও হাসপাতালে ভর্তিও হতে হচ্ছে অনেককেই।
আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩ জুন থেকে ৯ জুনের মধ্যে ২৬ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক জন। ১০ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে ২৩ জনের পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে তিন জন করোনা আক্রান্ত বলে ওই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর।
কমবেশি একই রকম চিত্র কলকাতার আরও কিছু বেসরকারি হাসপাতালে। দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক শাখায় জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক পাঁচ থেকে দশ জন করোনা পরীক্ষার জন্য আসতেন। সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নীচেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু জুনের তৃতীয় সপ্তাহে এই হাসপাতালে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এখন দৈনিক পরীক্ষা বেড়ে ২০ থেকে ২৫টি হয়েছে বলে ওই হাসপাতাল সূত্রে খবর। তবে পরীক্ষার কড়াকড়ি না থাকায় হাসপাতালে গিয়ে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ফুলবাগানের এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক দেবরাজ যশের মতে, করোনার গত তিনটি স্ফীতির ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল। এখন সেই নিয়ম শিথিল হয়েছে। করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদেরই এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দিনে আনুমানিক ২০ থেকে ২২ জনের করোনা পরীক্ষা করে জনা পাঁচেকের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ছে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে পারে। দেবরাজের কথায়, এই বারে করোনা আক্রান্তদের বেশির ভাগ রোগী পেট খারাপ, জ্বরের মতো সমস্যায় ভুগছেন।
ই এম বাইপাস লাগোয়া এক বেসরকারি হাসপাতালের এমডি ও চেয়ারম্যান অলোক রায় জানান, করোনার পরীক্ষা আগের থেকে কম হচ্ছে। তবে এই মাসের প্রথম দিকে যেখানে এই হাসপাতালে দৈনিক নমুনা পরীক্ষায় এক জনও করোনা আক্রান্ত পাওয়া যেত না, সেখানে এখন এক-দু’জন করে সংক্রমিতের সন্ধান মিলছে। করোনার পরিস্থিতির ছবি আবার বদলাতে পারে ভেবেই “একটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ওয়ার্ড কোভিড রোগীদের আইসোলেশনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে,” বললেন অলোক।
মে বা জুন মাসের প্রথম দিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেমন কম ছিল, তেমনই হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন কম রোগী। কোনও কোনও হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ছিল রোগীশূন্য। তবে আবার করোনা ওয়ার্ডে একটি-দু'টি করে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত ফুলবাগানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন দুই রোগী। এ ছাড়াও আরও ছ'জনের চিকিৎসা চলছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে গত সপ্তাহে দু’জন রোগী করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন। সোমবারে এক লাফে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ছ'জন।
আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ডিরেক্টর ও সিইও রুপালি বসু জানান, গত দু’সপ্তাহে যে পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তার সঙ্গে সংক্রমণের হারের পার্থক্য অনেকটাই। “জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে যেখানে হাসপাতালে মোট পরীক্ষার ৩.৮ শতাংশ পজিটিভ হয়েছিলেন, পরের সপ্তাহে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৪ শতাংশে। পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার, এক সপ্তাহের মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে,” বললেন রুপালি।
দশ দিন আগেও রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০-র গণ্ডির মধ্যেই আটকে ছিল। ৯ জুন রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৫ জন। সংক্রমণের হার ছিল ১.২৪ শতাংশ। আর একটু পিছিয়ে গেলে পরিসংখ্যান ছিল আরও স্বস্তিদায়ক। ১ জুনের হিসাব অনুযায়ী ৩৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। মোট নমুনার ১ শতাংশেও করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। জুনের প্রথম দিনে সঙ্ক্রমণের হার ছিল ০.৪৯ শতাংশ।
বেশ কয়েকটি চড়াই-উৎরাই পেরোতে পেরোতে করোনার তিনটি স্ফীতি কাটিয়ে মানুষের মনোবল বেড়েছে। কোভিড বিধি মানার শর্তেই যে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল, তা-ও এখন স্মৃতি। অতিমারির গোড়ার দিকের আতঙ্কের প্রহরগুলি যাতে আবার ফিরে না আসে, তার জন্য এখনই সতর্ক হতে হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাতেই আটকে দেওয়া যেতে পারে করোনার গতিকে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy