মন্দারমণিতে তৃণমূল নেতার মৃত্যুরহস্যে নয়া মোড়। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
মন্দারমণিতে তৃণমূল নেতার মৃত্যুরহস্যে নতুন মোড়। হোটেলের কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আবুল নাসার নামের ওই তৃণমূল নেতা এবং তাঁর এক বন্ধু বান্ধবীদের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে ঢুকেছিলেন। হোটেলের দু’টি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন তাঁরা। তবে শনিবার সকালে হোটেলের ঘর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার বাসিন্দা ওই তৃণমূল নেতার মৃতদেহ উদ্ধারের পরেই প্রকাশ্যে আসে দুই যুগল আসলে দম্পতি নয়। স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে ওঠা দুই মহিলা আসলে আবুল এবং তাঁর বন্ধুর বান্ধবী!
হোটেলের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দুই যুগল হোটেলে আসার পর থেকে চার জনের আচার-আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা নজরে আসেনি। বৃহস্পতিবার দিনভর হুল্লোড় করে কাটান তাঁরা। শুক্রবার আবুলের বন্ধুর সঙ্গে থাকা বান্ধবী অসুস্থতার কারণে হোটেল ছাড়েন। তবে আবুল, তাঁর সঙ্গী মহিলা এবং আবুলের বন্ধু হোটেলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় আবুল তাঁর বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে বন্ধুর ঘরে মদ্যপানের আসরে যোগ দেন। সেখানেই ঝামেলার সূত্রপাত বলে হোটেলকর্মীদের একাংশ দাবি করেছেন।
আবুলের বান্ধবী হোটেল কর্মীদের জানিয়েছেন, মদ্যপানের সময়েই দুই বন্ধুর মধ্যে পুরনো কোনও বিষয় নিয়ে বিবাদ চলছিল। রাতে মহিলা উঠে শৌচাগারে চলে যান। পরে তিনি ফিরে আবুলের ঘরে গিয়ে দেখেন সেখানে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে আবুলের দেহ। আতঙ্কিত হয়ে সঙ্গের বন্ধুকে খবর দিলে তাঁরা দু’জনে মিলে দেহটিকে বিছানায় নামান। পরে হোটেল কর্মীদেরও বিষয়টি জানান তাঁরা। খবর পেয়ে সকালে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
সাধারণত হোটেলে আসা পর্যটকদের প্রত্যেকের নাম রেজিস্টার খাতায় লেখা হয়। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি সাধারণত রেজিস্টারে উল্লেখ করা হয় না। তবে পুলিশের নির্দেশ মতোই রেজিস্টারে স্বাক্ষর করা পর্যটকদের মধ্যে থেকে এক বা দু’জনের পরিচয়পত্রের প্রত্যয়িত কপি রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনও পর্যটক তাঁর বান্ধবীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে নিয়ে আসছেন কি না তা যাচাই করার কোনও সুযোগ হোটেল কর্তৃপক্ষের নেই। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতার মৃত্যুরহস্য উন্মোচন করতে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ইতিমধ্যেই হোটেলের রেজিস্টার খাতাটিকে বাজেয়াপ্ত করেছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুর এলাকার প্রতিটি হোটেলকে সেখানে আসা পর্যটকদের তথ্য পোর্টালে আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে পর্যটকদের প্রকৃত পরিচয়পত্রও সঠিক ভাবে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
অন্য দিকে, তৃণমূল নেতার রহস্যমৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর বান্ধবী এবং অন্য বন্ধু। তৃণমূল নেতার বান্ধবীকে আটক করে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর স্থানীয় হোটেল থেকে পাকড়াও করা হয় এক যুবককে। তিনি ওই বান্ধবীর প্রেমিক বলে জানা যাচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের অনুমান, এই মৃত্যুর নেপথ্যে ত্রিকোণ সম্পর্কের জটিলতা থাকতে পারে। মৃতের মায়ের দায়ের করা লিখিত অভিযোগেও ধৃত যুবকের নাম পাওয়া গিয়েছে। পরিকল্পনা করে ৩৪ বছরের তৃণমূল নেতাকে মন্দারমণিতে নিয়ে এসে খুন করা হয়েছে কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ বলে জানাচ্ছে পুলিশ। আপাতত ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য রবিবারই তাঁদের আদালতে হাজির করানো হবে।
শনিবার সকালে মন্দারমণির একটি হোটেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় আমডাঙার তৃণমূল নেতা আবুলের ঝুলন্ত দেহ। আবুল বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। আবুলের বান্ধবী পুলিশকে জানিয়েছেন, তৃণমূল নেতার সঙ্গে বছর দুয়েক ধরে ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি লাগোয়া কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন হোটেলে তৃণমূল নেতার সঙ্গে তাঁর যাতায়াত ছিল। পাশাপাশি, ধৃত যুবতী স্বীকার করেছেন যে, একাধিক পুরুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। ধৃত যুবক তাঁর প্রেমিক এবং তৃণমূল নেতার ভাল বন্ধু বলে দাবি করেছেন তিনি।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধৃত যুবক প্রোমোটারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ধৃত যুবতীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ওই তৃণমূল নেতার সূত্রে। তবে মাস কয়েক আগে যুবতীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে যুবতীকে সম্পর্কে থাকতে বাধ্য করছিলেন তৃণমূল নেতা আবুল। এ জন্য কি দু’জনে মিলে আবুলকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন? জানা যাচ্ছে, আবুলকে মন্দারমণি বেড়াতে আসার প্রস্তাব দেন ধৃত যুবকই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy