কলকাতায় সায়েন্স সিটির কাছে ৩৮ তলার বহুতল বানাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংস্থা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রুবির মোড় থেকে ইএম বাইপাস ধরে সায়েন্স সিটির দিকে যাওয়ার পথে বহুতলের অভাব নেই। তবে বাঁ দিকে সায়েন্স সিটি লাগোয়া একটি লোহার ফটকে হঠাৎ নজর আটকায়। আমেরিকার প্রাক্তন তথা হবু প্রেসিডেন্ট স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম সোনালি হরফে জ্বলজ্বল করছে কালো দরজার গায়ে। যাঁরা জানেন না, তাঁদের খটকা লাগতে পারে। ব্যাপার কী! আমেরিকার ট্রাম্প কলকাতার বহুতলের ফটকে কেন!
তবে এত দিনে ততটা চমকও আর নেই। বাইপাসের ধারে ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর কথা অনেকেই জানেন। কেউ কেউ রীতিমতো অগ্রিম দিয়ে সেই বহুতলে ফ্ল্যাটও ‘বুক’ করে রেখেছেন। এখনও অবশ্য কাজ শেষ হয়নি। ৩৮ তলা মাথা তুলেছে বটে, তবে কাজ এখনও কিছু বাকি। ট্রাম্পের সংস্থা ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজ়েশন’ এই বহুতল তৈরি করছে। ট্রাম্পের নামেই দিন দিন দর বাড়ছে ফ্ল্যাটের। ট্রাম্পের দেশ আমেরিকার খবরের কাগজ ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স’ বিশদে বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছে কলকাতার এই বহুতলকে নিয়ে।
কয়েক বছর আগে স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা ‘ইউনিমার্ক’ সায়েন্স সিটির গা ঘেঁষে এই বহুতল বানানোর কাজ শুরু করেছিল। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের সংস্থার সঙ্গে ইউনিমার্কের চুক্তি হয় এবং সমগ্র প্রকল্পের নাম বদলে যায় ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এ। বহুতলের কাজ দেখতে এসেছিলেন ট্রাম্পের পুত্র ডোনাল্ড জন ট্রাম্প জুনিয়র। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতার বুকে ডোনাল্ডের ‘ট্রাম্প কার্ড’-এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত তা পিছিয়েছে। এখনও চলছে ‘বুকিং’। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করলে কলকাতার ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এ ফ্ল্যাট ‘বুক’ করা যাবে।
ট্রাম্পের নাম দেখেই অনেকে নির্মীয়মান বহুতলে ফ্ল্যাট ‘বুকিং’ সেরে ফেলেছেন। কিন্তু সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তাঁরা কিছুটা উদ্বেগে। ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর কাজ কত দূর এগিয়েছে, খোঁজ নিতে গিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কালো ফটক পেরিয়ে সোজা এগোতেই ডান দিকে দেখা গেল সংস্থার অফিসঘর। সেখানে টেবিলের উপর রাখা ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর মডেল। বহুতলের নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে তা কেমন দেখতে লাগবে, নিখুঁত ভাবে সেই মডেলে ধরা আছে তার ছবি। যেমন প্রায় সমস্ত নির্মাণের ক্ষেত্রেই থাকে। দেওয়ালে টাঙানো সারি সারি ছবি। ট্রাম্প-পুত্রের নামও চোখে পড়ল একঝলক।
‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় অবশ্য এর অবস্থান। প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে কিছুটা এগোলেই ‘মা’ উড়ালপুল। উল্টো দিকে বাসন্তী হাইওয়ে। একটি রাস্তা সোজা চলে গিয়েছে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের দিকে। ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর পাশে একটি বিলাসবহুল জোড়া বহুতল রয়েছে। নাম ‘অ্যাটমসফিয়ার’। এ ছাড়া ধারেপাশে আর কোনও গগনচুম্বী বহুতল নেই। ফলে ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ থেকে কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ দেখা যায়।
৬০ বছরের পুনম দত্ত ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এ একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ২০১৮ সালে ফ্ল্যাট বাবদ সাড়ে ৪ কোটি টাকা তিনি দিয়ে রেখেছেন। নিউ ইয়র্ক টাইম্সকে পুনম বলেছেন, ‘‘ট্রাম্পের নাম দেখেই আমরা ওই বহুতলের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলাম। ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এ ফ্ল্যাট থাকা আমাদের কাছে বিরাট ব্যাপার।’’ কলকাতায় চাকুরিরত সুমিত ভালোটিয়া ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এ ফ্ল্যাটের জন্য দিয়েছেন প্রায় ৬ কোটি টাকা। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ফ্ল্যাটে যে খুব ভাল পরিষেবা পাব, এ ব্যাপারে আমার কোনও সন্দেহ নেই। কাজের সূত্রেও সেটা আমার দরকার।’’
‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এর ওয়েবসাইট বলছে, সেখানে তিন কামরা, চার কামরা এবং পাঁচ কামরার ফ্ল্যাট রয়েছে। দাম ৩ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকার মধ্যে।
‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজ়েশন’ কলকাতাতেই প্রথম বহুতল নির্মাণ করছে, বিষয়টা তেমন নয়। এর আগে মুম্বই এবং পুণেতে পর পর দু’টি ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ মাথা তুলেছে। কলকাতার পাশাপাশি আরও একাধিক শহরে এই ধরনের ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে ট্রাম্পের সংস্থা। আমেরিকায় ক্ষমতায় ফেরার আগে ভারতের কোনায় কোনায় ‘ট্রাম্প কার্ড’ ছড়িয়ে দিচ্ছেন হবু প্রেসিডেন্ট। আর তাঁর নামের চৌম্বকীয় টানে ক্রেতারা এসে জড়ো হচ্ছেন ‘ট্রাম্প টাওয়ার’-এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy