ডেঙ্গি নিয়ে পথ-নাটক
পথ-নাটকের মাধ্যমে ডেঙ্গি নিয়ে মানুষকে সচেতন করল স্কুল পড়ুয়ারা। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথার মোড় ও রেল স্টেশন চত্বরে ‘হও সচেতন’ নামে একটি পথ-নাটক অভিনয় করে ঝাড়গ্রাম শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। ঝাড়গ্রামের ‘এসো নাটক করি’ এবং ‘কুরকুট’ সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই পথ-নাটিকায় মশার ভূমিকায় ‘ডেঙ্গি ডান্স’ করে নজর কাড়ে খুদে পড়ুয়ারা। একাদশ শ্রেণির কয়েকজন পড়ুয়া পুরকর্মী, চিকিৎসক সেজে গানে গানে সচেতন করে পড়ুয়াদের। গানের কথায় ছিল, “দ্যাখো রে সবাই, বোঝোরে সবাই, একটু ভুলে মশা বাড়ছে যে সাঁই সাঁই।” সেই গানের সঙ্গে সঙ্গে মশারূপী খুদেরা পাল্টা গেয়ে ওঠে ‘ভন ভন পোঁ পোঁ ভন ভন পোঁ পোঁ...... ডেঙ্গি ডান্স, ডেঙ্গি ডান্স।’ -সংলাপে ছিল মশারি ব্যবহারের আবেদন। নাটকটি দেখার জন্য ভিড় করেছিলেন বহু পথচলতি মানুষ।
প্রকাশিত মুখ
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বনগাঁ থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ‘মুখ’। আগে ইছামতী, সীমান্ত, মুক্তিযুদ্ধ, মেলাকে বিষয় করে কাজ করেছে এই পত্রিকাটি। অগস্ট মাসে প্রকাশিত এই পত্রিকাটির শেষ সংখ্যার বিষয় ‘ছুটি’। পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক পার্থসারথি দে ও দীপঙ্কর দাস। পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘কোনও বিষয়কে সামগ্রিক ভাবে জানার জন্য পাঠকের আগ্রহ রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা করি।’’ ঝকঝকে কাগজে ছাপা পত্রিকাটি ১৪৯ পাতার। লিখেছেন মোট ৩৯ জন। লেখক তালিকায় রয়েছেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী, সুব্রত ভৌমিক, মৃণালকান্তি জানা, সৌম্য সিংহ প্রমুখ। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘‘সে ছিল এক দিন। ছুটি। ছুটি। চার পিরিয়ডে হঠাৎ ঘণ্টা। মানে মুফতে পাওয়া ছুটি। চলো নিরুদ্দেশ। উদাস। উদাস।……।’’
লোকায়ত উৎসব
দুর্গাপুজোকে বাঙালির সেরা উৎসব বলা হয়। সেই উৎসবকে নিজেদের রীতি অনুযায়ী আপন করে নিয়েছে জঙ্গলমহলের উপজাতি গোষ্ঠীগুলি। ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইলের তালাই গ্রামে রয়েছে দেবী জয়চণ্ডীর থান। সারা বছর শবর সম্প্রদায়ের দেহুরি (পূজারি) জয়চণ্ডীর পুজো করলেও দুর্গাপুজোর সময় শবরেরাই ব্রাত্য হয়ে যান। তখন পুজোর দায়িত্বে ব্রাহ্মণ। পুজোয় এখানে মেলা বসে। মোষ বলি হয়। শবরেরা তখন বলিদানের দায়িত্বে থাকেন। বেলিয়াবেড়ার বালিপাল গ্রামে আবার স্তূপীকৃত পোড়ামাটির হাতি-ঘোড়ার ‘ছলনে’ দুর্গাপুজো করেন বাগদি দেহুরি। লোকশ্রুতি, এখানে দেবীর স্বপ্নাদেশে কেঁদগাছের জঙ্গলে পুজো শুরু হয়েছিল। তাই দেবীর নাম ‘কেঁদুয়া’। একটি গর্তের মধ্যেই দেবীর অধিষ্ঠান। দুর্গাপুজোর সময় সেই গর্তে দেহুরি নিজের হাত চিরে কয়েক ফোঁটা রক্ত দেন। জামবনির যুগিবাঁধে পোড়া মাটির হাতি ঘোড়ায় প্রতীকী ভাবে পূজিতা হন ‘দুর্গামণি’। এখানে পুজোর দায়িত্বে থাকেন শবর দেহুরি। হতদরিদ্র শবর সম্প্রদায়ের মতো দুর্গা এখানে দুয়োরানি। জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে জামবনি পরগনার এক সামন্ত রাজা চিল্কিগড় মৌজা থেকে শবরদের তাড়িয়ে দেন। শবরেরা যুগিবাঁধের কাছে গভীর জঙ্গলে ঘর বাঁধেন। তার পর সেখানে তাঁদের ‘গরামদেবী’ (গ্রামদেবী) দুর্গামণিকেই সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঝাড়গ্রামের গুপ্তমণি এলাকায় শবরদের আরাধ্যদেবী গুপ্তমণি দুর্গারূপে পূজিতা হন। খড়্গপুরে গ্রামীণ এলাকার সীমানা ঘেঁষা গুপ্তমণি এলাকার বুক চিরে চলে গিয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। রাস্তার ধারেই রয়েছে গুপ্তমণিদেবীর মন্দির। ঝাড়গ্রাম রাজার উদ্যোগে তৈরি হয় এই মন্দির। জনশ্রুতি, শবর সম্প্রদায়ের শিলাময়ী দেবীই পরে দুর্গায় উন্নীত হয়েছেন এখানে। বংশানুক্রমে শবর সম্প্রদায়ের লোক এই মন্দিরের দেহুরি ও সেবাইতের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এই মন্দিরে দেবীর লোকায়ত ও শাস্ত্রীয় দুই রূপ রয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে দুর্গা ও জগদ্ধাত্রীর মূর্তি এবং একটি পোড়া মাটির হাতি রয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে শ্যাওড়া গাছের তলায় রয়েছে সিঁদুর লেপা শিলা খণ্ড, পোড়ামাটির হাতি-ঘোড়ার ‘ছলন’। মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথিতে বিশেষ পুজো হয়।
মননে বেড়ি
‘‘যা কিছু রক্ষিত আর যা কিছু অরক্ষিত কথা/ পাহাড়ে ধ্বনিত হচ্ছে পাহাড়/ বুকের মাঝখানে কোন অজুহাতহীন বেড়ে ওঠা গুহা গিরিপথ সহ/ লাবণী সমুদ্রের দিকে চোখের অনন্ত জল বাড়িয়ে দিয়েছ।’’ বনগাঁ শহরের চাঁপাবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা অর্ঘ্য মণ্ডলের হাত থেকে বের হয়েছে এ রকম অনেক মন ভাল করে দেওয়া লাইন। স্পষ্টভাষী এই কবি মনে করেন, মূর্খের মতো সব বিষয় নিয়ে কবিতা লেখা উচিত নয়। পাঠককে নতুন কিছু দিতে পারলে তবেই কলম ধরা উচিত। বছর একচল্লিশের অর্ঘ্যবাবু কবিতা লিখছেন সেই ১৯৯৪-৯৫ সাল থেকে। এই রাজ্যে তো বটেই, বাংলাদেশের বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্য পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অসংখ্য কবিতা। ১৯৯৯ সালে বের হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাত্রি নিজেকে লিখছে।’ তার পর একে একে বেরিয়েছে হলুদ তোমাকে, অগোছালো, এবং লোকায়ত নানান সাহস। তাঁর কথায়, ‘‘নিজেকে সুস্থ রাখতেই কবিতা লিখি।’’ কবি ইদানীং কবিতা লেখা কমিয়ে দিয়েছেন। বাড়ির কাছে একটি কম্পিউটার সেন্টার খুলেছেন। দিনের বেশিরভাগ সময় সেখানেই দেন। কবিতার প্রতি অভিমান করেছেন নাকি? কয়েক মুহূর্ত ভেবে কবির উত্তর, ‘‘আগে মনে হত যে কোনও বিষয় নিয়েই লেখা যায়। কিন্তু এখন জীবনবোধে বদল এসেছে। তাই কম লিখি।’’ কবিতার সংখ্যা কমলেও কবির কলম কিন্তু থামেনি। বরং আরও পরিণত হয়েছে। কারণ তিনি জানেন, একমাত্র কবিতা লিখলেই তিনি ভাল থাকেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy