খুনের ঘটনায় মোমবাতি মিছিল জিয়াগঞ্জ হাইস্কুলপাড়ার বাসিন্দাদের। —ফাইল চিত্র।
ভাঙেনি, তবে ছাব্বিশ ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় জেরার পরে সে যে কিঞ্চিৎ মচকেছে তার ইঙ্গিত মিলল তদন্তকারীদের কথায়।
দশমীর সকালে, জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানে, সপরিবার শিক্ষক খুনের ঘটনায় যার গতিবিধি ঘিরে ঘনিয়েছে কুয়াশা, তদন্তকারীরাও যাকে মনে করছেন রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু— সেই সৌভিক বণিক, পুলিশি জেরায় শেষ পর্যন্ত টাকা ধার নেওয়ার কথা কবুল করেছে বলেই দাবি করল পুলিশ।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেশ কয়েক দফায় সৌভিক যে খুন হয়ে যাওয়া বন্ধুপ্রকাশ পালের কাছ থেকে টাকা নিয়েও ফেরত দেয়নি তা মেনে নিয়েছে।’’ তবে খুনের পিছনে সৌভিকের প্রচ্ছন্ন বা প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। বন্ধুপ্রকাশের একদা ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ সৌভিককে লেবুবাগানের বাড়িতে নিয়ে গেলেই সে ব্যাপারে আঁচ পাওয়া যেতে পারে বলে পুলিশের অনুমান।
কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় দিনের বেলায় সৌভিককে নিয়ে যেতে ভরসা পাচ্ছে না পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘ওকে নিয়ে গেলেই এলাকার বাসিন্দারা ছেঁকে ধরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’’ রবিবার গভীর রাতে তাই ঘটনার পুনর্নির্মাণের কথা ভাবছে পুলিশ।
তবে খুন যে-ই করুক না কেন, দশমীর দিন সকালে লেবুবাগানের বাড়িতে খুনি যে পরিচিত কারও হাত ধরেই এসেছিল, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পুলিশ। তাদের অনুমান, ভাড়া করা কোনও খুনিকে আশপাশের গ্রাম থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল ওই বাড়িতে। শনিবার রাতে বীরভূমের বগটুই গ্রাম থেকে দু’জন ‘সমাজবিরোধী’কেও আটক করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন, বগটুই গ্রাম কিন্তু সমাজবিরোধীদের আখড়া।’’
শুক্রবার রাত থেকে, কখনও নিজের বাবা, কখনও বা বন্ধুপ্রকাশের ভাই কখনও বা পাল পরিবারের পরিচারিকার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়েছে সৌভিককে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার কথায় যথেষ্ট অসঙ্গতিও ধরা পড়েছে। না ভাঙলেও সে যে মচকেছে, তা মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। এ দিন বন্ধুপ্রকাশের এক মাসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে মুখোমুখি জেরার সময়ে ধার নেওয়া টাকার অঙ্ক নিয়ে রীতিমতো ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে সৌভিক। এক শীর্ষ পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘তার গলার স্বরই বলে দিচ্ছে অনেক কথাই আড়াল করতে চাইছে সে।’’
তদন্তে নেমে সৌভিকের ফোনের কল-তালিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বন্ধুপ্রকাশের ফোন না-মিললেও তাঁর স্ত্রী বিউটির ফোনটি পাওয়া গিয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সেই ফোনের কল-তালিকাও। তদন্তকারীরা জানান, বিউটি ষষ্ঠীর দিন সকালেও সৌভিককে ফোন করেছিলেন। কিন্তু সে ফোন ধরেননি সৌভিক।
এ দিন ওই শিক্ষকের বাড়ির পরিচারিকা সুনীতা দাসকেও দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। লেবুবাগানের বাড়িতে, সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা কাজ করতেন সুনীতা। কিন্তু দশমীর দিন তাঁকে কেন বেলা ১০টার মধ্যেই ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন বিউটি, তা-ও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি এ দিনও সিআইডি এবং ফরেন্সিক কর্তারা জিয়াগঞ্জের ওই বাড়িতে যান। বেশ কিছু নমুনা এ দিনও সংগ্রহ করেন তাঁরা।
পুলিশি কপালে ভাঁজ, দুশ্চিন্তার ভাঁজ জিয়াগঞ্জের মানুষের কপালেও। এ দিন সন্ধ্যায় জিয়াগঞ্জের রাস্তায় মোমবাতি মিছিল করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মোমবাতি হাতে নিঃশব্দে এলাকা ঘোরেন পড়শিরা, দাবি একটাই— এ বার পাল পরিবারের খুনের কিনারা হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy