Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
Kolkata International Book Fair

এ বার দোচালায় আসুন, ‘বাঙালি-বিরোধী’ তকমা মুছতে বইমেলায় অভিনব কৌশল পদ্ম-পাক্ষিকের

বঙ্গ বিজেপি নিয়ন্ত্রিত এই পাক্ষিক পত্রিকা প্রথম বার বইমেলায় নয়। ২০১৪ সাল থেকে স্টল পাচ্ছেন তাঁরা। এত দিন পরে হঠাৎ ‘স্টল’কে ‘দোচালা’ বলার কৌশল কেন?

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২১
Share: Save:

কারও মতে বাঙালিয়ানার সেরা বাৎসরিক উদ্‌যাপন। কারও মতে বাঙালি সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ বার্ষিক উৎসব। কিন্তু সেই আঙিনায় বছর বছর হাজির থেকেও ‘অপাঙ্‌ক্তেয়’ তকমা ঘুচছিল না বিজেপি-আরএসএস পরিবারের। গত কয়েক বছরে মেলাপ্রাঙ্গণে তাদের ‘অযাচিত’ বলে দাগিয়ে স্লোগান দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ২০২৫ সালের কলকাতা বইমেলায় তাই কৌশল বদল। বিজেপি নিয়ন্ত্রিত পাক্ষিক ‘ভারতীয় জনবার্তা’র স্টলকে এ বার ‘স্টল’ বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে ‘দোচালা’। পোস্টার, ই-কার্ড, হোয়াট্‌সঅ্যাপ, সমাজমাধ্যম সর্বত্র আহ্বান— ‘বইমেলায় আসুন দোচালায়’।

২০১৪ সাল থেকে কলকাতা বইমেলায় তাদের স্টল বসছে। এ বার সেই স্টলকে ‘দোচালা’ বলার সিদ্ধান্ত কেন? সঙ্ঘ পরিবারের ছত্রছায়ায় থাকা কয়েকটি সংগঠনের স্টল ঘিরে গত কয়েক বছরে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে বইমেলা চত্বরে। কখনও সে বিক্ষোভ করেছে বামেদের ছাত্র সংগঠন। কখনও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর নাম করে অন্য কোনও সংগঠন। সেই কারণেই কি স্টলের বদলে দোচালার ‘আবির্ভাব’?

পত্রিকার কার্যকরী সম্পাদক সাধন তালুকদার অবশ্য বলছেন, ‘‘অন্য কে কী করবে, সে সব ভেবে কেন নামকরণ করতে যাব? আমরা নিজেরা যা ভালবাসি, সেই অনুযায়ী নামকরণ হয়েছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বাংলা ভাষার মাধুর্যকে ভালবেসে এই নামকরণ। স্টল তো ইংরেজি শব্দ। আমাদের কাছে এই অস্থায়ী তাঁবুর এত সুন্দর একটা বাংলা প্রতিশব্দ রয়েছে। সেটা কেন ব্যবহার করব না?’’

বইমেলার আগে এই ই-কার্ডই ছড়াচ্ছে বিজেপি।

বইমেলার আগে এই ই-কার্ডই ছড়াচ্ছে বিজেপি। —নিজস্ব চিত্র।

দলের গা থেকে ‘বহিরাগত’ তকমা মুছে ফেলতে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব গত কয়েক বছর ধরে সচেষ্ট। প্রকাশ্য ভাষণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আচরণেও বাঙালি আদবকায়দার ছাপ আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে। পয়লা বৈশাখ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উদ্‌যাপিত হচ্ছে। ‘দিওয়ালি’ শুধু নয়, কালীপুজোর শুভেচ্ছাও জানানো হচ্ছে। দলীয় কর্মসূচিতে নিরামিষের একাধিপত্য সরিয়ে আমিষ খাবারের বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। বইমেলায় স্টলের নামকরণও কি সেই ধারাবাহিকতা মেনেই? রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রথমে বললেন, ‘‘এই নামকরণটা ওই পাক্ষিকের কার্যকর্তাদেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁরা বিজেপির ভাবধারায় বিশ্বাসী। সেই ভাবধারা থেকেই এই নামকরণ।’’ কোন ভাবধারার? সুকান্তের জবাব, ‘‘বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রকৃত ধারক-বাহক বিজেপিই। কারণ, বিজেপি হল ভারতব্যাপী ছড়িয়ে থাকা একমাত্র দল, যা একজন বাঙালির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।’’

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সমস্ত প্রতিপক্ষই তাদের গায়ে ‘বাঙালি বা বাংলা-বিরোধী’ তমকা লাগাতে ছাড়ে না। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলছেন, ‘‘মূলত সিপিএম ওই সব কথা বলে। যার জবাবে বাংলার মানুষ সিপিএমের মুখে বার বার ঝামা ঘষে দিচ্ছেন। আর তৃণমূল যা বলছে, ক্ষমতার দম্ভে বলছে।’’ ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভোটপ্রাপ্তির হিসাব তুলে সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘আমরা যে ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ভোট পেয়েছি, সে তো বাঙালিরাই দিয়েছেন। বারো মাসে তেরো পার্বণ পালন করা বাঙালিই তো বিজেপিকে ভোট দেয়। আপন না ভাবলে ভোট দিতেন?’’ সেই ভোটপ্রাপ্তিই কি আরও বেশি ‘বাঙালিয়ানা’ করতে শেখাল বিজেপিকে? সুকান্তের জবাব, ‘‘কাজের স্বীকৃতি পেলে কার না ভাল লাগে। বাংলার মানুষ এত বিপুল সংখ্যায় বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন। উৎসাহিত হওয়ারই কথা।’’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের অবশ্য দাবি, এ সব ‘কৌশলে’ কোনও লাভ হবে না বিজেপির। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে বাঙালি হয়ে ওঠা যায় না। যেটা যে নামে পরিচিত, তাকে সেই নামেই ডাকতে হয়। বইমেলায় স্টলকে সবাই স্টল নামেই চেনে। তার বদলে দোচালা, না কী-চালা বললে কোনও লাভ হবে না।’’ কুণালের মতে, ‘‘বিজেপি আগাগোড়া বঙ্গসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা একটা দল। তাদের নেতৃত্বের এই সব দিশাহারা পদক্ষেপ বাঙালির মন ছুঁতে পারবে না।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘‘দোচালা কেন, আটচালা করলেও কিছু যায়-আসে না। বিজেপির যে দোলাচল, সেটা বাংলার মানুষ ধরে ফেলেছেন। এ রাজ্যে বলে নাম দিচ্ছে দোচালা। হরিয়ানা হলে নাম রাখত চৌপাল (মূল শব্দ ‘চৌপল’। অর্থাৎ, চার কোণা বিশিষ্ট। উত্তর ভারতে চারপাই বা খাটিয়াকে এই নামে ডাকা হয়ে থাকে)।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার সাংস্কৃতিক চেতনা নবজাগরণের মধ্যে দিয়ে তৈরি। বিজেপি-আরএসএস যা কিছু বলে, সে সবই নবজাগরণের চেতনার উল্টো। পাঁচতারা হোটেলে একটা গরুর গাড়ির চাকা সাজিয়ে রাখলে হোটেলটা গরুর গাড়ি হয়ে যায় না। গরুর গাড়িটাও পাঁচতারা হোটেল হয়ে যায় না। তাই বিজেপি স্টলকে দোচালা বলল না আটচালা, তাতে বাংলার কিছু যায়-আসে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata International Book Fair Kolkata Book fair Kolkata Book Fair 2025 BJP West Bengal Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy