প্রতীকী ছবি।
সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট খুললেই ‘ওয়ালে’ দেখা দিচ্ছে ঋণ সংস্থার দেওয়া একের পর এক বিজ্ঞাপন। ব্যবহারকারী ভেবেই পাচ্ছেন না, তাঁর যে টাকার প্রয়োজন, তা ফেসবুক জানল কী করে! গত কয়েক দিনে যে তিনি ঋণ প্রদানকারী একাধিক সংস্থার ওয়েবসাইট দেখছেন, সেটাই বা কোনও সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা জানল কী করে?
বর্ষবরণের রাতে আবার ফেসবুকে একটি অনলাইন গেমে মজেছিলেন ব্যবহারকারী। ওই গেমের দাবি ছিল, এক বার ক্লিক করলেই জানা যাবে, নতুন বছরে কী রকম সঙ্গী পাবেন তিনি। তার ফলাফল দেখে অবাক ব্যবহারকারী। যাঁদের সঙ্গে গত এক মাসে লাগাতার ব্যক্তিগত কথাবার্তা চালিয়েছেন, ছবি-সহ সেই সব নামই ‘ওয়ালে’ ভেসে উঠেছে! আর একটি এমন গেমের সূত্রে ব্যক্তিগত ভাবে বলা পেশাদার জগতের কথাবার্তাও গেম-রেজাল্ট হিসাবে বাইরে চলে আসায় অপদস্থ হয়েছেন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মুহূর্তে এমন ঘটনার ছড়াছড়ি বলেই জানাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। যা দেখে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর কোনও কিছুই আর ব্যক্তিগত থাকছে না? সম্প্রতি ফেসবুকের শাখা সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ তার ব্যবহারকারীর তথ্য ফেসবুককে দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পরে এ নিয়ে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। অনেকেরই দাবি, ‘‘এর জেরে তো তা হলে কার কঙ্গে কথা বলছি, কী বলছি বা কোথা থেকে বলছি, সে সবের কোনও কিছুই আর ব্যক্তিগত থাকবে না! এই সব মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত আলোচনাও তো তবে নিরাপদ নয়!’’
আরও পড়ুন: করোনায় প্রথম মৃত্যু ঠিক এক বছর আগে
আতঙ্ক বাড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়া গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বহু দিন থেকেই ব্যবহারকারীর কোনও ব্যক্তিগত তথ্যই আর গোপন থাকছে না। তথ্যের বাজারে সবটাই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য শেয়ার শুরু করলে যা আরও বাড়বে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘কিছু দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি খেলা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। যাতে দাবি করা হচ্ছিল, বয়সকালে কাউকে কেমন দেখতে হবে সেটা জানা যাবে এক ক্লিকেই। বহু ব্যবহারকারী ওই গেম খেলতে গিয়ে নিজের অজান্তেই নিজস্ব ছবি সংশ্লিষ্ট অ্যাপ সংস্থাটিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। এখন ওই ছবি কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে বা অপরাধ সংগঠিত করার কাজে যদি ব্যবহার করা হয়?’’
তথ্যের হাতবদল এড়াতে
• গুরুত্বপূর্ণ বা ব্যক্তিগত কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়
• সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিয়ো পাঠাবেন না
• যে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া গেম এড়িয়ে চলুন
• শেয়ার এবং কমেন্ট করা নিয়ে সতর্ক হোন
• কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের ‘কুকি’ বা হিস্ট্রি নিয়ম করে সাফ করুন
• কোনও অ্যাপকে লাইভ লোকেশন ব্যবহার করতে দেওয়া নিয়ে সতর্ক হোন
কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার এক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বললেন, ‘‘যে কোনও অনলাইন সাইটে ঢুকলেই সেই সাইট সংক্রান্ত ছোট মেমরি তৈরি হয়। যা ‘কুকি’ হিসেবে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের হার্ড ডিস্ক বা মেমরি কার্ডে জমা থাকে। এর পরে সেই কুকিই সোশ্যাল মিডিয়াকে গ্রাহকের চাহিদা বুঝতে সাহায্য করে। যে চাহিদা সংক্রান্ত তথ্য মোটা টাকায় বিক্রি হয় তথ্যের বাজারে। ফলে কেউ ঋণদানকারী সংস্থার ওয়েবসাইটই দেখুন বা অন্য কিছু, সোশ্যাল মিডিয়া সব জানে।’’
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পদবি কেন ভিন্ন, চিত্রশিল্পী তৌসিফ হককে প্রশ্ন লজে!
‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত আবার জানালেন, আগে যে কোনও সংস্থা সমীক্ষার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগের উপরে জোর দিত। তার ভিত্তিতে তৈরি হত বিজ্ঞাপন। এখন ব্যক্তিগত যোগাযোগের থেকেও কে, কতক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাচ্ছেন, তার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। কোনও নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের চাহিদা কী, তিনি কী করছেন, কী খাচ্ছেন বা তাঁর পছন্দ-অপছন্দ— সবই সোশ্যাল মিডিয়ার হাতের মুঠোয়। এই সব তথ্যই সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলি কোটি কোটি টাকায় বিক্রি করে নানা সংস্থাকে। তথ্য কেনে রাজনৈতিক দলগুলিও!
সন্দীপবাবুর কথায়, ‘‘এক-দু’টি সংস্থা এখন এই কাজ বলে করছে বলে এত আলোচনা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির কারবার বহু দিন ধরেই চলছে। ভুয়ো খবরের যুগে কারও সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য জেনে তাঁকে সেই মতো ভুয়ো খবর দিলে বিপদ কতটা, তা ভাবতে পারছেন?’’
তা হলে উপায়?
সন্দীপবাবুদের মতে, দেশে ‘ডেটা প্রোটেকশন অ্যান্ড প্রাইভেসি’ বিল পাশ না করা পর্যন্ত কোনও সুরাহা নেই। ফলে ব্যক্তিগত সতর্কতাই আপাতত ভরসা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy