Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দাদাকে দাহ করে ফেরার পথে মৃত ৬ ভাই

শেষকৃত্যের পরে আর বাড়ি ফেরা হল না ওঁদের। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ছয় ভাইয়ের। শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার চাপড়ার চারাতলা এলাকায় করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কে।

শোকার্ত পরিজনেরা।

শোকার্ত পরিজনেরা।

সুস্মিত হালদার, কল্লোল প্রামাণিক
কৃষ্ণনগর ও করিমপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

শেষকৃত্যের পরে আর বাড়ি ফেরা হল না ওঁদের। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ছয় ভাইয়ের।

শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার চাপড়ার চারাতলা এলাকায় করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম রথীন বিশ্বাস (৫২), প্রকাশ বিশ্বাস (৫০), পঞ্চানন বিশ্বাস (৪৭), বিশ্বনাথ বিশ্বাস (৪৫) ও তাঁদের জেঠতুতো ভাই সুশান্ত বিশ্বাস (৫০) এবং প্রশান্ত বিশ্বাস (৪৫)। সকলেরই বাড়ি হোগলবেড়িয়ার দেওয়ানপাড়ায়। প্রকাশবাবুর ভাইপো বছর বত্রিশের কার্তিক বিশ্বাসকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতেরা সকলেই চাষাবাদ করতেন। রথীনবাবুর জেঠতুতো দাদা হীরেন বিশ্বাস (৭৪) ক্যানসারে ভুগছিলেন। শনিবার তিনি মারা যান। বাদকুল্লার বাড়ি থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নবদ্বীপ শ্মশানে। খবর পেয়ে বিকেল চারটে নাগাদ নিজেদের ছোট ম্যাটাডোরে করে দেওয়ানপাড়া থেকে ওই চালক-সহ আট জন রওনা দেন শ্মশানের উদ্দেশে। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁদের জামাই মানব মণ্ডল।

নবদ্বীপে দাহপর্ব মিটে গেলে তাঁরা ওই রাতেই বাড়ি ফিরছিলেন। গাড়ির কেবিনে ছিলেন চালক-সহ কার্তিকবাবু ও প্রশান্তবাবু। বাকিরা গাড়ির পিছনে ঘুমিয়েছিলেন। ভোর তিনটে নাগাদ চাপড়ার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি রাস্তার পাশে একটি গাছে ধাক্কা মারে। সকলেই মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই ছ’জন। গুরুতর জখম অবস্থায় কার্তিকবাবু ও চালক মানববাবুকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত পৌনে তিনটে নাগাদ বিকট শব্দে জেগে ওঠেন চারাতলা এলাকার লোকজন। ঘটনাস্থলেও তাঁরা ছুটে আসেন। খবর যায় চাপড়া থানাতে। তারপরেই পুলিশ এসে আহতদের প্রথমে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। গাড়ির চালক মানববাবু জানান, উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাককে পাশ কাটাতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এমন বিপত্তি। ঘটনার পরে তিনিই বাড়িতে ফোন করে খবরটা জানিয়েছিলেন।

পুলিশ জেনেছে, ম্যাটাডোরটির গতি ছিল ভালই। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারতেই এই দুর্ঘটনা। মাথায় প্রচণ্ড আঘাতের ফলেই ছ’জন মারা গিয়েছেন বলে অনুমান। রবিবার সকাল থেকেই চাপড়া থানা চত্বর ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে মৃতদের আত্মীয়-পরিজনদের কান্নায়। নবদ্বীপ শ্মশান থেকে হীরেনবাবুকে দাহ করে বাড়ি ফিরেছিলেন ছেলে সুব্রত বিশ্বাস। দুর্ঘটনার খবরে তিনিও ছুটে আসেন চাপড়ায়। তাঁর কথায়, ‘‘কেন জানি না, মনে হচ্ছে এই ঘটনাটার জন্য আমরাই দায়ী। কাকাদের পরিবারের সামনে দাঁড়াব কী করে?’’— কান্নায় ভেঙে পড়েন সুব্রতবাবু।

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE