সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যেই জেহাদি কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করেছিল তানিয়া। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
নিজে কোনও দিন রাজ্যের বাইরে যায়নি। কিন্তু তার মাধ্যমেই অনেক যুবক পৌঁছে গিয়েছে ওয়াজিরিস্থানের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থেকে লস্কর-এ-তৈবা যোগে ধৃত কলেজ পড়ুয়া তরুণী তানিয়া পারভিনের যোগাযোগ খতিয়ে দেখে এমনটাই ধারণা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। তাঁরা রীতিমতো তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন তানিয়ার যোগাযোগ দেখে, যা দেশের সীমা অতিক্রম করে ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
তানিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের যোগাযোগ থেকে ভারতে ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনগুলির একটি নতুন অক্ষের হদিশ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা, যেখানে একই ছাতার তলায় সামিল লস্কর-এ-তৈবা, আল-কায়েদা ইন সাব কন্টিনেন্ট (আকিস), জামাতুল মুজাহিদিন, আনসার উল ইসলাম নামে উপমহাদেশে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলি। এই অক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে আফগান তালিবানদের। পরোক্ষ মদত রয়েছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের।
গোয়েন্দাদের দাবি, সন্ত্রাসের নতুন এই অক্ষ আমাদের রাজ্য-সহ গোটা দেশে শিক্ষিত তরুণীদের নিয়োগ করছে। তৈরি করার চেষ্টা করছে মহিলাদের ব্রিগেড। যা আগে ভারতে কখনও চোখে পড়েনি গোয়েন্দাদের।
এ বছরের মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স গ্রেফতার করে তানিয়াকে। এর পর ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তানিয়াকে গ্রেফতার করার পর, বসিরহাট আদালতে রাজ্য পুলিশের তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, তানিয়ার মোবাইল থেকে ৫০টির বেশি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। ওই গ্রুপগুলির সাহায্যে তানিয়া অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে জিহাদে উদ্ধুদ্ধ করত। তার সঙ্গে লস্কর-এ-তৈবার পাক নেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণও আদালতে পেশ করেন তদন্তকারীরা।
সম্প্রতি বাংলা ভাষায় এই ম্যাগাজিনটি অনলাইনে প্রকাশ করেছে আকিস। ছবি সংগৃহীত।
পরবর্তীতে এনআইএ-র তদন্তকারীরা সেই হোয়াট্সঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপগুলি বিশ্লেষণ করে এবং তানিয়াকে জেরা করে যে তথ্য পান, তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো।
ইসলাম নিয়ে অনলাইনে পড়াশোনার ফাঁকেই জঙ্গি সংগঠনের সামিল
গত কয়েক বছর ধরে ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে পড়াশোনা করত তানিয়া। এই ফোরামগুলি কোনওটাই নিষিদ্ধ নয়। ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করার আগ্রহ থেকেই সে আরবি শেখে। গোয়েন্দাদের মতে, ওই ফোরামগুলিতে তানিয়ার ইসলাম নিয়ে আগ্রহ চোখে পড়ে জিহাদি সংগঠনগুলোর প্রকাশ্যে থাকা সংগঠকদের। তাদের মাধ্যমেই ধীরে ধীরে জিহাদি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে তানিয়া। রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তানিয়ার পরিবার খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। তাঁরা কেউই ধর্মীয় শিক্ষায় আগ্রহী নন। বরং অনেক বেশি প্রগতিশীল পরিবার বলে পরিচিত।” কিন্তু সেই আবহে বড় হয়েও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় তানিয়ার। এমনকি স্কুলে কখনও হিজাব না পড়লেও, হঠাৎ কলেজে হিজাব পড়া শুরু করে সে।
হানি ট্র্যাপ থেকে যোগাযোগের মাধ্যম তানিয়া
এনআইএ তদন্তকারীদের আদালতে জমা দেওয়া নথি থেকে জানা গিয়েছে, তানিয়া যে সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপগুলির অ্যাডমিন ছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল পাকিস্তানের ফোন নম্বর ব্যবহার করে তৈরি। জেরায় তানিয়ার দাবি, অনলাইন ফোরামে যোগাযোগ হওয়া এক ‘মুফতি’-র মাধ্যমে সে ওই পাক নম্বর পেত এবং সেগুলো ব্যবহার করে গ্রুপগুলো খোলা হত। অর্থাৎ, আপাত ভাবে দেখা যেত, পাকিস্তান থেকে ওই গ্রুপগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে একাধিক গ্রুপ ছিল কাশ্মীর নিয়ে। সেখানে প্রচুর কাশ্মীরি যুবক, যারা জিহাদে বিশ্বাস করে, সামিল ছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, অনলাইনে কাশ্মীরি ভাষাও শিখেছিল তানিয়া। এবং তানিয়াকে সামনে রেখে, লস্কর জঙ্গি নেতারা কাশ্মীরে যোগাযোগ রাখত জিহাদে উদ্ধুদ্ধ যুবকদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: গ্রাম কেশবপুর, জঙ্গি আয়েশা ওরফে প্রজ্ঞার খোঁজে এবিপি ডিজিটাল
তদন্তকারীদের একাংশের দাবি— জেরায় তানিয়া জানিয়েছে, তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য এবং যোগাযোগ দিয়ে বন্ধুত্ব করতে বলা হয়েছিল। বন্ধুত্ব করে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য বের করতে বলা হত। পরবর্তীতে গোয়েন্দারা সেই ব্যক্তিদের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে তালিকায় বেশ কয়েকজন ভারতীয় সেনা আধিকারিককে চিহ্নিত করেন। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, তানিয়াকে হানি ট্র্যাপেও ব্যবহার করা হয়েছিল। তানিয়া যে গ্রুপগুলি চালাত সেখানে পশ্চিম এশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্থানের বাসিন্দারাও সদস্য ছিল। অনেক গ্রুপেই জিহাদি আদর্শের ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ আদানপ্রদান করা হত।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে লস্কর-এ-তৈবার ‘হ্যান্ডলার’রা থাকত, যারা সদ্য নিযুক্ত সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত। ছবি সংগৃহীত।
গোয়েন্দাদের দাবি, এই গ্রুপগুলোর মাধ্যমেই চলত লস্করের সদস্য নিয়োগ এবং নিযুক্ত সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এই গ্রুপগুলোতে লস্কর-এ-তৈবার ‘হ্যান্ডলার’রা থাকত, যারা সদ্য নিযুক্ত সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত। গোটা পদ্ধতিতে তানিয়া একটা অনুঘটক, যাকে সামনে রেখে গোটা প্রক্রিয়াটা চলত। গ্রুপগুলির কথোপকথন যতটুকু গোয়েন্দাদারা ‘রিট্রিভ’ বা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন, তা থেকে তাঁদের ধারণা— বেশ কয়েক জন কাশ্মীরি যুবক তানিয়ার মাধ্যমেই পাড়ি দিয়েছে পাক-আফগান সীমান্তে ওয়াজিরিস্থানে প্রশিক্ষণের জন্য।
নয়া সন্ত্রাস অক্ষ
জামাতুল মুজাহদিন
সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম পর্যালোচনা করে এবং বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ধৃত সদস্যদের জেরা করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, ভারতীয় উপমহাদেশে নতুন একটি সন্ত্রাসের অক্ষ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই সংগঠন এ রাজ্যেও সক্রিয়। ওই সংগঠনের একটি অংশের প্রধান এবং অন্যতম পুরনো নেতা সালাউদ্দিন সালেহিন সম্প্রতি সংগঠনের মুখপত্র সাহম-আল-হিন্দে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এখন থেকে শুধু মাত্র জামাতুল মুজাহিদিন নামে পরিচিত হবে। এটি আর কেবলমাত্র বাংলাদেশ ভিত্তিক কার্যকলাপে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ওই সংগঠন এ বার থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদের মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ‘কিতল’ বা সশস্ত্র যুদ্ধ করবে। আশির দশকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই সংগঠন আল-কায়েদা অনুগামী হিসাবে পরিচিত এবং নয়ের দশকে বাংলাদেশ থেকে ওই সংগঠনের অনেক সদস্য আফগানিস্থানে মুজাহিদিনদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সশস্ত্র জিহাদে।
গোয়েন্দাদের দাবি, সালাউদ্দিন এবং তাঁর সংগঠন এখনও আল কায়েদা ঘনিষ্ঠ এবং ভারতে জিহাদি সংগঠনেক নতুন ফ্রন্ট খোলার লক্ষেই সংগঠন থেকে বাংলাদেশ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
আল কায়েদা এবং জামাতুল মুজাহিদিন এ রাজ্যেও এ রকম মহিলা ব্রিগেড তৈরির চেষ্টা করছে। ছবি সংগৃহীত।
কয়েকদিন আগে জামাতুল হিন্দ, বাংলাদেশের ২৭ জন মুজাহিদিনের তালিকা প্রকাশ করেছে। জামাতুল মুজাহিদিনের মুখপত্রে জানানো হয়েছে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে এই মুজাহিদিনরা আফগানিস্থানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে জিহাদে মারা গিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, এ রকম আরও বাংলাভাষি মুজাহিদিনের নাম প্রকাশ করবে যাঁরা আফগানিস্থানে মার্কিন সেনা এবং আফগান সরকারি সেনার সঙ্গে যুদ্ধে মারা গিয়েছেন। গোয়েন্দাদের দাবি, ফের জামাতুল মুজাহিদিন, দুই বাংলা থেকে জিহাদি আদর্শে উদ্ধুদ্ধ যুবকদের আফগানিস্থানে প্রশিক্ষণ দিতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন শাখার আধিকারিকদের দাবি, জেএমবির সদস্যদের একটা বড় অংশের আফগানিস্থানে সামরিক প্রশিক্ষণ থাকায় তাঁরা সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল।
আনসার-উল-ইসলাম
বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, জেএম বাংলাদেশের আল কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার-উল ইসলামের (আগে আনসার-উল-বাংলা টিম নামে পরিচিত) সঙ্গে মিলে কাজ করছে। সেই মিলিত ফ্রন্টেই যোগ দিয়েছে প্রায় নিষ্ক্রিয় হরকত-উল-জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)-র স্লিপার সেলগুলো। এই ফ্রন্টটি আইএস (ইসলামিক স্টেট) এবং তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী নব্য জেএমবির মতো সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে।
আল কায়েদা ইন সাব কন্টিনেন্ট (আকিস)
গোয়েন্দাদের দাবি, এই অক্ষের চালিকা শক্তি আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের সংগঠন আকিস। আল-কায়েদা সেন্ট্রালের সরাসরি নির্দেশে চলে আকিস। উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা মৌলানা আসীম উমর এই আকিসের প্রধান। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের উপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে। সেখানে মার্কিন তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, আকিস আফগানিস্থনের তালিবান শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজেদের শক্তিশালী করছে। তালিবান শাসনাধীন বিভিন্ন এলাকায় আকিস তাদের প্রশিক্ষণ শিবির চালাচ্ছে। সেখানেই রয়েছেন আকিসের প্রথম সারির নেতারা। ওই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, আকিস নিজেদের নামে কোনও হামলা চালাচ্ছে না। এখনও নিজেদের আড়ালে রেখে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে।
গাজওয়াতুল হিন্দ
ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, গত ২ বছর ধরে আল কায়েদা সেন্ট্রাল কাশ্মীর এবং বাংলা-এই দুই প্রদেশকে ফোকাস করে ভারতে সংগঠন তৈরি করছে। এই বাংলার সঙ্গেই যুক্ত বাংলাদেশের সংগঠনও। তাই ৫০টির বেশি বাংলায় অনলাইন প্রচার মাধ্যম তৈরি করেছে আল কায়েদা। তার মধ্যে প্রধান গাজওয়াতুল হিন্দ। এ ছাড়াও, আল ফিরদৌস মিডিয়া থেকে শুরু করে কিতল ফর ইসলাম, উম্মাহ নিউজের মতো জিহাদি প্রচার শাখা পরিচালনা করছে। সব ক’টি প্রচার শাখাই বাংলায়। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই প্রচার শাখায় আল কায়েদার সঙ্গে সঙ্গে জামাতুল মুজাহিদিন, আকিস, আনসার-উল-ইসলামেরও আলাদা আলাদা প্রচার শাখা রয়েছে এবং সেগুলি সবক’টি সংযুক্ত। এক শীর্ষ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘সম্প্রতি দুটি বাংলা জিহাদি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। মূলত আকিসের ব্যবস্থাপনায়। সেই দু’টি ম্যাগাজিনই আকিস ছাড়া বাকি সংগঠনগুলোর প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে।” এর থেকে প্রমাণিত যে ওই সবক’টি জঙ্গি সংগঠনই এক সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।
‘নারী বাহিনী’ বা মহিলা ব্রিগেড
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, সম্প্রতি অনলাইন প্রচারে এই জিহাদি সংগঠনগুলি মহিলাদের নিয়োগের ব্যপারে প্রচণ্ড আগ্রহ দেখাচ্ছে। মহিলাদের নিয়ে একের পর এক জিহাদি অনলাইন প্রচার পুস্তিকা প্রকাশ করছে। অনলাইন গ্রুপগুলোতেই মহিলাদের উপস্থিতি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে এবং বিভিন্ন সময়ে ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত যে ভারতে মহিলা জিহাদি ব্রিগেড তৈরি করা হচ্ছে। তানিয়ার মতো মেয়েদের ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট জিহাদি ইউনিট। সেখানে এই তরুণীদের সামনে রেখে নিয়োগ পর্ব চলেছে। এই তরুণীদের সহজে কেউ সন্দেহ করবে না। ফলে গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে চলা সহজ।
লস্কর-এ-তৈবা এবং এ রাজ্যে জিহাদ
সেনা গোয়েন্দাদের একটা বড় অংশের দাবি, গত দু’বছরে পর পর অভিযানে কাশ্মীরে লস্কর সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। নতুন করে সদস্য সংগ্রহ করতে পারছে না লস্কর। তবে লস্করের প্রশিক্ষণ শিবির বা লজিস্টিক সাপোর্ট অনেকাংশেই ব্যবহার করেছে আকিস। ঘুর পথে আইএস-এর হাত ঘুরে লস্করের বিপুল অর্থ ঢুকছে আকিসের তহবিলে। তানিয়ার লস্কর যোগাযোগই প্রথম নজরে এসেছিল সেনা গোয়েন্দাদের। তাদের দাবি, আকিস বা জামাতুল মুজাহিদিন নিজেদের নামে এখনই খুব সক্রিয় হতে চাইছে না। তাতে সংগঠন শক্তিশালী হওয়ার আগেই গোয়েন্দাদের রাডারে চলে আসার সম্ভবনা রয়েছে। এনআইএ গোয়েন্দাদেরও সন্দেহ, লস্করকে সামনে রেখে ভারতীয় উপমহাদেশে তৈরি ‘গ্লোবাল জিহাদের’’-এর মিলিত ফ্রন্টই তানিয়াকে ব্যবহার করছিল। কারণ যে যে যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে তানিয়ার কাছ থেকে তা শুধু লস্করের সংগঠনের নয় বলেই দাবি গোয়েন্দাদের। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, বিভিন্ন ছদ্ম সংগঠনের নামে এই সংগঠনগুলো কাজ করছে।
আরও পড়ুন: হুগলির প্রজ্ঞাই ঢাকার জেএমবি জঙ্গি মোহনা!
হেফাজতে নিয়ে তানিয়াকে জেরা করতে গিয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এ রাজ্যেই তানিয়ার মতো ইউনিট আরও থাকতে পারে। এই ইউনিটগুলো একের সঙ্গে অন্যটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এমনকি অনলাইনে তাঁদের ‘হ্যান্ডলার’ বা নির্দেশ দেওয়ার লোকও আলাদা। ফলে একটি মডিউল ধরা পড়লেও বাকি মডিউল নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে। তবে তানিয়ার ক্ষেত্রে যে ভাবে পাকিস্তানের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে একের পর এক সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ চালানো হয়েছে তা অবাক করেছে গোয়েন্দাদের। জেরায় তানিয়া দাবি করেছেন, ‘‘তাঁর কাশ্মীরের প্রতি প্রচণ্ড ভালবাসা রয়েছে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর অনলাইনে কাশ্মীর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তাঁকে আরও বেশি করে জিহাদে অনুপ্রাণিত করেছিল।” তদন্তকারীদের দাবি, তানিয়া আদৌ কতটা বুঝে এই পথে পা বাড়িয়েছিলেন তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে জিহাদি সংগঠনগুলো তাঁর ইসলামের প্রতি আগ্রহকে কাজে লাগিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy