Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

খোলেনি দোকান, কর্মতীর্থ নিয়ে শঙ্কা

দুবরাজপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মিত কর্মতীর্থ নামের ‘মার্কেটিং হাব’ নিয়ে এমনই সংশয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

অপেক্ষা: দুবরাজপুরে মার্কেটিং হাব। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: দুবরাজপুরে মার্কেটিং হাব। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:১০
Share: Save:

বেকার যুবকদের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহের জন্য ঘর তৈরি করে দিলেও দোকান খোলেননি কেউ। তাঁদের আশঙ্কা, ‘মার্কেটিং হাব’ কর্মতীর্থ কম জনবসতিপূর্ণ জায়গায় গড়ে ওঠায় কেউ সহজে সেখানে বিকিকিনির জন্যে যাবেন না। ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কায় দোকান শুরু করতে চাইছেন না অনেকে।

দুবরাজপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মিত কর্মতীর্থ নামের ‘মার্কেটিং হাব’ নিয়ে এমনই সংশয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রশাসনের তরফে এক বছর আগে ৬৪ জন সংখ্যালঘু বেকার যুবককে ব্যবসার জন্যে ওই কমপ্লেকসে ঘর বিলি করা হয়। কিন্তু এখনও সেখানে একটি দোকানও খোলেননি উপভোক্তারা। অত্যন্ত কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা কর্মতীর্থে আদৌ ব্যবসা চলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ওই যুবকদের। সে জন্যেই সেখানে ব্যবসার ঝুঁকি নিতে পারছেন না তাঁরা।

রাজ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৪ সালের জুলাইয়ে প্রতি ব্লকে অন্তত একটি করে ‘কর্মতীর্থ’ নামে ‘মার্কেট কমপ্লেকস’ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। বলা হয়েছিল— স্বনির্ভর গোষ্ঠী, গ্রামীণ কারিগর এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সেখানে বিক্রি করতে পারবেন। সরকারি উদ্যোগে তাঁদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। মূলত তিনটি দফতরকে (সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি) পৃথক ভাবে প্রকল্পটি রূপায়ণ করার কথা বলা হয়েছিল।

গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের (আরআইডিএফ) অর্থসাহায্যে দুবরাজপুরেও একটি কর্মতীর্থ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুবাজপুরের আশ্রম মোড় থেকে সাতকেন্দুরী পর্যন্ত বাইপাস রাস্তার ডান দিকে কর্মতীর্থের প্রস্তাবিত এলাকা নিয়ে প্রথম থেকেই সংশয় ছিল। কারণ পুরশহরের ওই অংশটি কার্যত ফাঁকা। কিন্তু রাস্তা ঘেঁষে তেমন সরকারি জমি না পাওয়ায় সেখানেই কর্মতীর্থ নামে ‘মার্কেটিং হাব’ গড়ে তোলা হয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২ কোটি ৫০ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালের জুলাইয়ে। বিদ্যুতের সংযোগ-সহ বাকি কাজ করে ব্লক থেকে ৬৪টি ঘর বিলি করা হয় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি। ৬৪ জনের মধ্যে ৯ জনের একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পর এক বছর হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কেউ ‘মার্কেটিং হাবে’ ব্যবসা শুরু করেননি।

ওই ‘মার্কেটিং হাবে’ ঘর পাওয়া শেখ ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘সত্যি কথা হল, ওই ফাঁকা জায়গায় পুঁজি খরচ করে ব্যবসা করার ঝুঁকি নিতে পারছি না। আমার মতো ভাবনা অধিকাংশের। এলাকায় লোকজনের বাস খুব কম। এত বড় একটা মার্কেটে দু’একজন কিছু নিয়ে বসলে ভাল কিছু আশা করা সম্ভব নয়। এমন অনেকে রয়েছেন তাঁদের নামে ঘর থাকলেও পজেশন পর্যন্ত নেননি।’’ মার্কেটিং হাবের পরিচালন কমিটির সম্পাদক মিলন খান, সভাপতি আব্দুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘‘অনেক বার বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ব্যবসা শুরু করতে হবে। কিন্তু বাজার থেকে দূরে ফাঁকা এলাকায় শেষ পর্যন্ত ব্যবসা শুরু করার সাহস দেখাতে পারেননি কেউ। তবে বাজার চালু করতে কমিটিতে থাকা আমরা ন’জন শ্রীঘ্রই দোকান খোলার কথা ভেবেছি। রবিবার একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।’’ কমিটির সদস্যদের আরও দাবি, বাজার ঠিক ভাবে পরিচালনার জন্যে সমবায় সমিতি গড়ে তোলা আবশ্যক। তবে, প্রশাসনিক ঢিলেমিতে সেই সমবায় গড়ে ওঠেনি।

দুবরাজপুরের বিডিও মুজিবর রহমান বলেন, ‘‘ওঁরা সঠিক ভাবে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। ঘর পেয়েও কেন ব্যবসা করতে পারছেন না সেটা দেখব।’’

শুধু দুবরাজপুর নয়, সিউড়ি ১ ব্লকের আবদারপুরে তৈরি হওয়া আরও একটি কর্মতীর্থেরও একই হাল। স্বনির্ভর গোষ্ঠী, গ্রামীণ কারিগর এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী মিলেয়ে মোট ৬৮টি জনকে দেওয়া হয়েছিল কর্মতীর্থের ঘর। গত বছর ঘটা করে উদ্বোধন করলেও বর্তমানে একজনও দোকান খোলেন না। উপভোক্তারা বলছেন,‘‘জাতীয় সড়কের ধার ঘেঁষে হলেও শহর ও লোকালয় থেকে দূরে গিয়ে কে সেখানে জিনিস কিনবেন। তাই বন্ধ।’’

সিউড়ি ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহও মানছেন ব্যবসা না জমায় কেউ দোকান খুলছেন না। তবে তাঁর আশা ভবিষ্যতে ওই বাজার জমবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Karmatirtha Nabanna Shop Stall Marketing Hub
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE