Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Dev

সাংসদ দেবের ‘ইস্তফা’ কি ভোটে লড়তে না চাওয়ারই বার্তা? জল্পনা তুঙ্গে, এ নিয়ে কী বললেন রাজ্যের মন্ত্রী

শনিবার একযোগে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দেব।

ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব।

ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৮
Share: Save:

দলীয় বৈঠকে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এ বারের লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে দেব (দীপক অধিকারী)-কেই প্রার্থী করতে চান তিনি। দলনেত্রীর নির্দেশ থাকলে তিনিও যে ভোটে লড়তে প্রস্তুত, অভিনেতা-সাংসদও সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তার মাসখানেকের মধ্যেই, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে তিন-তিনটি সরকারি কমিটি থেকে দেব ইস্তফা দেওয়ায় জল্পনা তৈরি হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে কি ভোটে না লড়তে চাওয়ারই বার্তা দিয়েছেন সাংসদ? এ নিয়ে দেব প্রকাশ্যে বিবৃতি না দিলেও, মুখ খুললেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা।

শনিবার একযোগে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দেব। হঠাৎ কেন এই পদত্যাগ, তা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তবে দেবের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ব্যক্তিগত কারণে তিনটি কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়ে থাকতে পারেন সাংসদ। দেবের ব্যাপারে রাজ্যের মন্ত্রী শশীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তাঁর বক্তব্য, দেবের ইস্তফা দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই। মন্ত্রী বলেন, ‘‘হয়তো সময় দিতে পারছেন না। সেই জন্য ইস্তফা দিয়েছেন।’’

রবিবার বারুইপুর পশ্চিমের বিধায়ক তথা বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নিউ ইন্ডিয়ান মাঠে একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন শশী ও রাজ্যের আর এক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। দেবের বিষয়ে কোনও উত্তর দিতে চাননি অরূপ। বিমানও জানান, তাঁর এ বিষয়ে কিছু জানা নেই।

আনন্দবাজার অনলাইনের ‘অ-জানা কথা’য় ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেব বলেছিলেন, ‘‘যদি সম্ভব হয়, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে আর দাঁড়াতে চাই না।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দলের একাংশের বক্তব্য ছিল, ঘাটালের প্রাক্তন বি‌ধায়ক শঙ্কর দলুইয়ের সঙ্গে ‘বিবাদ’-এর জেরেই রাজনীতি নিয়ে ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে পড়েছিলেন দেব। সম্প্রতি ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। দেবকে বাদ দিয়েই কমিটির মাথা চূড়ান্ত হয়ে যায়। তার পরে অবশ্য চুপ হয়ে যান সাংসদ অনুগামীরা। যদিও সাংসদ এ নিয়ে কখনওই প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। দলেরও অন্য কাউকেও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেবের প্রার্থিপদ নিয়ে যে জল্পনা ছিল, তার অবসান হয় গত জানুয়ারি মাসে কালীঘাটে দলনেত্রীর সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বৈঠকে। ওই বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘দেব আমাদের দলের সম্পদ। বেশ কিছু নেতা তার সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যার ফলে ওর অসুবিধা হচ্ছে। এমনটা কেন হবে? ও শিল্পী মানুষ। এটা তোমরা কী করছো?’’ তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলায় স্বাভাবিক ভাবেই দেব-বিরোধী নেতারাই বৈঠকে খানিকটা চাপে পড়েছিলেন। দেবের পাশে দাঁড়িয়ে জেলা নেতৃত্বের প্রতি মমতার এমন রুষ্ট হওয়ার ঘটনাতেই লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন উপস্থিত নেতারা। কিন্তু তার পরেও আচমকা কেন তিনটি সরকারি কমিটির শীর্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব, তা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রশ্ন উঠেছে। ইস্তফাপত্রেও কোনও কারণের উল্লেখ করেননি দেব। তাতেই জল্পনা আরও বেড়েছে।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ঘাটালে বাংলা সিনেমার সুপারস্টার দেবকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন মমতা। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্টের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে পরাজিত করে সাংসদ হন তিনি। ২০১৯ সালে প্রাক্তন আইপিএস তথা বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে হারিয়ে দ্বিতীয় বার জয়ী হন দেব। কিন্তু ঘাটাল থেকে মাঝেমধ্যেই দেবের সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের বিবাদের খবর প্রকাশ্যে আসে। তাই এ বার লোকসভা ভোটের অনেক আগেই ফের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মমতা বৈঠকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে যে ভাবে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন, তাতে ঘাটাল লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী ফের হিসাবে তাঁকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ঘাটাল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে দেবের এ ভাবে ইস্তফায় আবারও তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

অন্য দিকে, ২০১৯ সালে দেবের সঙ্গেই আরও দুই অভিনেত্রী তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। যাদবপুরে মিমি চক্রবর্তী ও বসিরহাট থেকে সাংসদ হয়েছেন নুসরত জাহান। তাঁরা কি ফের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন? দেবের বিষয়টি নিয়ে জল্পনা বাড়তেই প্রশ্ন উঠছে তাঁদের নিয়েও।

তিনটি সরকারি কমিটি থেকে দেবের ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন, ‘‘এটা তো হওয়ারই ছিল। কারণ এতগুলো পদ নিয়ে বসে আছেন। চালাতে পারছেন না। এটা একটা কারণ হতে পারে। অন্য একটি কারণ, দীর্ঘদিন পর হয়তো বুঝতে পেরেছেন, তৃণমূল মানে চোর, আর চোর মানেই তৃণমূল। সে জায়গায় নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইছেন। এটা হয়তো হতে পারে, লোকসভা নির্বাচনে হয়তো আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। বর্তমানে তিনি তৃণমূলকে হয়তো ঘৃণা করতে শুরু করেছেন। এক কথায় বলা যায়, তিনি এক জন অপদার্থ, দায়িত্ব নিয়ে সামলাতে পারছেন না। শেষ সময় বুঝতে পারছেন, বিজেপি আসছে, কৈফিয়ত দিতে হবে। বিজেপির ভয়ে আজ পদত্যাগ করছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dev
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy