ধৃত কামরুজ্জামান। নিজস্ব চিত্র
শিকার, বাড়িতে একা থাকা মহিলা। সময়, দুপুর থেকে বিকেল। কখনও গলায় চেন পেঁচিয়ে, কখনও আবার মাথায় ভারী কোনও জিনিসের আঘাত। পরপর এই পদ্ধতিতেই খুনের ঘটনা ঘটছিল পূর্ব বর্ধমানের কালনা ও হুগলির পাণ্ডুয়ায়। এই ‘সিরিয়াল কিলিং’-এ আততায়ী যে এক জনই, তদন্তে আঁচ করছিল পুলিশ। কিন্তু কোনও ভাবেই মিলছিল না তার নাগাল। অবশেষে রবিবার এই সব খুনে জড়িত সন্দেহে এক জনকে পাকড়াও করল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৩ সাল থেকে আক্রান্ত হয়েছেন মোট এগারো জন মহিলা। মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। কোনওমতে বেঁচে গিয়েছেন চার জন। তাঁদের কাছে বিবরণ শুনে আততায়ীর ‘স্কেচ’ আঁকিয়েছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হদিস পাওয়ার চেষ্টা চলেছে। তেমন একটি ফুটেজের ছবির সঙ্গে মিল দেখে রবিবার কালনার সাধপুকুরে এক সিভিক ভলান্টিয়ার ধরে ফেলেন মোটরবাইক আরোহী এক ব্যক্তিকে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগে মেলে শাবল, চেন। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক জনকে ধরা হয়েছে। জেরা করা হচ্ছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে ধাত্রীগ্রাম ও মন্তেশ্বরে বাড়িতে দুই মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। দু’জনেরই দেহের পাশে পড়েছিল চেন। সে বছরই মন্তেশ্বরে আরও এক মহিলা আক্রান্ত হন। কিন্তু তিনি ধস্তাধস্তি করলে ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে যায় আততায়ী। তাঁর বয়ান শুনে পুলিশ আততায়ীর ছবি আঁকায়। তবে কেউ ধরা পড়েনি। তার পরে বেশ কয়েক বছর আর কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার খুন হন কালনার উপলতি গ্রামের এক মহিলা। দেহের পাশে পড়েছিল চেন। তার দিন কয়েক পরেই হাটকালনায় বাড়িতে ঢুকে এক প্রৌঢ়াকে খুনের চেষ্টা করে আততায়ী। সেই সময়ে প্রৌঢ়ার ছেলে বাড়ি ফেরায় তড়িঘড়ি চম্পট দেয় সে। প্রৌঢ়া জানান, লাল রঙের মোটরবাইকে আসা ওই ব্যক্তি বিদ্যুতের মিটার পরীক্ষার কর্মী বলে পরিচয় দেয়। দরজা খুলে দিতেই গলায় পেঁচিয়ে ধরে চেন। জানুয়ারির শেষ দিকে আনুখালে খুন হন এক মহিলা। মার্চে কালনার ধর্মডাঙায় কোনও রকমে বেঁচে যান এক বধূ। তিনিও জানান, মিটার দেখার নাম করে ঢুকে চেন পেঁচিয়ে ধরেছিল এক ব্যক্তি।
এলাকায় চেন বিক্রির দোকানগুলিতে নজরদারি শুরু করে পুলিশ। রাস্তায় মোটরবাইকে তল্লাশি শুরু হয়। তার পরেই খুন করার ধরন পাল্টে ফেলে আততায়ী। এপ্রিলে একই দিনে মেমারির দুই গ্রামে খুন হন দুই মহিলা। দু’জনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। গত দশ দিনে আরও দু’জনের উপরে হামলা হয়। মৃত্যু হয় এক জনের। এক জন বেঁচে যান।
পুলিশ জানায়, শেষ ঘটনাটির পরে মোটরবাইকে পালানোর সময়ে সিসিটিভি ফুটেজে আততায়ীর একটি ছবি পাওয়া যায়। সেই ছবি এলাকার সমস্ত পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেওয়া হয়। রবিবার বিকেলে সাধপুকুরে সেই ছবির সঙ্গে মিল দেখে এক সিভিক ভলান্টিয়ার এক মোটরবাইক আরোহীকে আটকান। ব্যাগে চেন, শাবল মিলতেই কামরুজ্জামান সরকার নামে ওই ব্যক্তিকে কালনা থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা করা শুরু হয়।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত খুনের কথা স্বীকার করেছে। তবে কেন সে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, সে নিয়ে ধন্দ রয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy