Advertisement
E-Paper

বহু খাতা ফাঁকা, সহায়িকা থেকে লিখছে অনেকে

অতিমারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় কী ভাবে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন হবে, সেই জোরদার প্রশ্নের মধ্যে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের এই বিচিত্র ছবি শিক্ষা শিবিরের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:০৫
Share
Save

অনেক পড়ুয়া উত্তর লিখছে বেশ যত্ন করেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্যদের নিয়ে। তাদের কেউ সহায়িকা বই থেকে হুবহু টুকে দিচ্ছে উত্তর। কেউ বা ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ বা প্রশ্নমালার খাতা জমাই দেয়নি। কেউ কেউ আবার উত্তর না-লিখে বইয়ের যে-পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর আছে, সেই পাতার সংখ্যা লিখে দিয়েছে প্রশ্নের পাশে! কী লিখবে, বুঝতে না-পেরে অনেকে জমা দিচ্ছে ফাঁকা খাতা।

অতিমারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় কী ভাবে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন হবে, সেই জোরদার প্রশ্নের মধ্যে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের এই বিচিত্র ছবি শিক্ষা শিবিরের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। মিড-ডে মিলের চাল-আলু বিলির দিন শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের জন্য ওই প্রশ্নমালা দিচ্ছেন অভিভাবকদের হাতে। নিয়ম হল, ছাত্রছাত্রীরা সেই সব প্রশ্নের উত্তর লিখে পরবর্তী মিড-ডে মিল বিতরণের দিন পাঠিয়ে দেবে অভিভাবকদের হাত দিয়ে। শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ফেরত আসা অনেক খাতার ছবিই অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। করোনা-কালে পড়ুয়ারা আদৌ কতটা ক্লাসের পড়া করতে পেরেছে বা পারছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বিশেষ করে সমস্যা হচ্ছে মধ্যমেধা বা নিম্নমেধার পড়ুয়াদের নিয়ে।

হাওড়ার উলুবেড়িয়া এলাকার একটি স্কুলের নাম বলতে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা জানান, তিনি বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার অ্যাক্টিভিটি টাস্কের উত্তর দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন। কিছু পড়ুয়া কোনও উত্তরই লেখেনি। শুধু প্রশ্নের পাশে লিখে রেখেছে বইয়ের একটা পাতার সংখ্যা! ওই শিক্ষিকা খুঁজেপেতে দেখেন, পড়ুয়াটি ওই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে যে-পৃষ্ঠার উল্লেখ করেছে, সেটি একটি সহায়িকা বইয়ের। ‘‘তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। যে-সব পড়ুয়া বই দেখে হুবহু উত্তর টুকে দিয়েছে, তাদের কেউ কেউ বলছে, পড়াটা বুঝতে পারেনি। উত্তর লিখে জমা দিতে হবে বলে দেখে লিখে দিয়েছে,’’ বললেন ওই শিক্ষিকা। নদিয়ার পান্নালাল ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক অসিতকুমার সেন জানান, অনেকেই আবার অ্যাক্টিভিটি টাস্কের খাতা জমা দিচ্ছে না। ফলে পড়ুয়ারা কতটা বুঝতে পারল, সেই বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

এটা হচ্ছে কেন? অনেক শিক্ষকের বক্তব্য, গ্রামাঞ্চলে কোনও কোনও ছেলেমেয়ে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। অভিভাবকেরা লেখাপড়া না-করায় ওদের দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। ফলে তাদের অনেকে বুঝতে না-পেরে বই বা সহায়ক বই দেখে লিখে খাতা জমা দিচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি জানাচ্ছেন, গ্রামের বহু পড়ুয়া অনলাইন-পাঠের সুবিধা পায়নি। টিভি দেখে ক্লাসেরও সুযোগ নেই সকলের। ফলে প্রশ্নমালা পেলেও উত্তর লিখতে পারছে না। বেশ কিছু পড়ুয়ার হাতে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের খাতা পৌঁছয়নি, এমন ঘটনাও ঘটেছে।

উত্তরপাড়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের শিক্ষক সৌগত বসু জানাচ্ছেন, মধ্য বা নিম্ন মেধার পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে বেশি। তাদের সকলেই যে অসাধু উপায় অবলম্বন করতে চায়, তা নয়। কিন্তু বুঝতে না-পেরে দেখে লিখে দিচ্ছে। ‘‘কেউ কেউ দীর্ঘদিন স্কুলে যেতে না-পারায় হতাশ হয়ে পড়ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিটা মেনে নিতে পারছে না। সেই অতৃপ্তি থেকেও দেখে লেখা বা শুধু পৃষ্ঠা-সংখ্যা লিখে দেওয়ার মতো অসাধু কাজ করছে, স্বাভাবিক সময়ে যেটা সে কখনওই করবে না,’’ বিশ্লেষণ সৌগতবাবুর।

রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার অবশ্য জানান, অনলাইন ক্লাস তো চলছেই। তা ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা ফোনে পড়াচ্ছেন, টিভিতে ক্লাস করে যতটা সম্ভব পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। ‘‘অ্যাক্টিভিটি টাস্কের মাধ্যমেও প্রচুর পড়ুয়া উপকৃত হচ্ছে। যাদের উত্তর লিখতে সমস্যা হবে, শিক্ষকদের ফোন করলে তাঁরা বুঝিয়ে দেবেন,’’ বলেন অভীকবাবু।

Education Online Classes Coronavirus in West Bengal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}