বটানিক্যাল গার্ডেনের বাসিন্দা স্মরজিৎ রায়চৌধুরীর অভিযোগ, তাঁর ছেলে যে-সংস্থার পুলকারে যাতায়াত করত, তারা জানিয়েছে, করোনার জন্য যে-দু’বছর পুলকার ব্যবহার করা হয়নি, সেই সময়ের ভাড়া বাবদ ৪৮ হাজার টাকা দিতে হবে।
ফাইল চিত্র।
দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে স্কুল খোলার প্রাথমিক হর্ষোল্লাস খানিকটা কমেছে। সেই জায়গায় জুড়ে বসেছে যাতায়াতের দুর্ভাবনা। সেই দুশ্চিন্তা পড়ুয়াদের যত, তার থেকে অনেক বেশি অভিভাবকদের। অধিকাংশ রুটে স্কুলবাস ও পুলকার চালু হয়নি। সব স্কুলের কর্তৃপক্ষ এখনও স্কুলবাস পরিষেবা চালু করেননি। ফলে বহু শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে বা বাড়ি ফিরতে সমস্যায় পড়ছে। অভিযোগ, কিছু পুলকার সংস্থা পরিষেবা বন্ধ থাকার সময়ের (কমবেশি দু’বছর) ভাড়া হিসেবে অর্ধেক টাকা দাবি করছে। নতুন করে পরিষেবা শুরু করার আগে কিছু রুটের পুলকার অভিভাবকদের কাছে অতিরিক্ত টাকাও চাইছে।
নবপর্যায়ে ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় অষ্টম থেকে দ্বাদশের ক্লাস। ১৬ ফেব্রুয়ারি চালু হয়েছে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণির পঠনপাঠনও। ক্লাস পুরোমাত্রায় চালু হলেও বেশির ভাগ স্কুল ছাত্রছাত্রীদের আনছে পর্যায়ক্রমে। এপ্রিলে নতুন সেশনে শুরু হবে পুরোদস্তুর স্কুল। কিন্তু এখন যে-সব পড়ুয়াকে স্কুলে যেতে হচ্ছে, তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়া এবং ফিরিয়ে নিয়ে আসা রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বটানিক্যাল গার্ডেনের বাসিন্দা স্মরজিৎ রায়চৌধুরীর অভিযোগ, তাঁর ছেলে যে-সংস্থার পুলকারে যাতায়াত করত, তারা জানিয়েছে, করোনার জন্য যে-দু’বছর পুলকার ব্যবহার করা হয়নি, সেই সময়ের ভাড়া বাবদ ৪৮ হাজার টাকা দিতে হবে। “আমার ছেলের পুলকারের ভাড়া মাসে চার হাজার টাকা ছিল। দু’বছরে ভাড়া হয় ৯৬ হাজার টাকা। ওরা তার অর্ধেক টাকা দাবি করছে। এত টাকা কেন দেব,” প্রশ্ন স্মরজিৎবাবুর।
উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার এলাকার এক অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলের স্কুলের নিজস্ব বাস চালু হলেও তা এখন অনিয়মিত। স্কুল জানিয়েছে, নতুন সেশন থেকে নিয়মিত স্কুলবাস চলবে। এখন তাঁর ছেলে কী ভাবে স্কুলে গিয়ে অফলাইনে পরীক্ষা দেবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। এই অবস্থায় অনেক অভিভাবককে অফিস ফেলে স্কুলে দৌড়তে হচ্ছে। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুলের এক অভিভাবক জানান, তাঁর মেয়ের স্কুলে সপ্তাহে এক দিন ক্লাস চালু হয়েছে। কারা স্কুলবাসে যেতে চায়, তা জানতে চেয়ে স্কুল-কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছেন অভিভাবকদের। চলতি মাসে স্কুলবাস পাওয়া যাবে না। অভিভাবকদের অভিযোগ, বেশির ভাগ পুলকার সংস্থাই জানিয়েছে, নতুন সেশন থেকেই সব পুলকার রাস্তায় নামবে। তার আগে নয়।
পুলকার সংস্থাগুলির বক্তব্য, স্কুল খুললেও সব পড়ুয়াকে রোজ যেতে হচ্ছে না। তাই তারাও সব পুলকার বা বাস রাস্তায় নামাচ্ছে না। ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্রাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পড়ুয়ারা যেমন পর্যায়ক্রমে স্কুলে যাচ্ছে, একই ভাবে আমাদের বাস চলাচলও শুরু হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। নতুন শিক্ষাবর্ষের আগে সবাই স্কুলে যাচ্ছে না। তাই সব রুটের বাস নামছে না। তবে কোনও পড়ুয়ার রুটে বাস না-থাকলে আমরা এই ক’টা দিন ছোট বাসে তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করব।”
স্কুল দীর্ঘ কাল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সেই সময়ের জন্য পুলকারের ভাড়া চাওয়া অন্যায় দাবি বলে মন্তব্য করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল কারপুল ওয়ালফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। ওই সমিতির পার্ক স্টিট শাখার দায়িত্বে থাকা তপন ঘোষ বলেন, “পুলকার যখন বন্ধ ছিল, কেউ তখনকার ভাড়া অভিভাবকের কাছে চেয়ে থাকলে সেটা খুব অন্যায়। কোনও অভিভাবক যেন অতিরিক্ত টাকা না-দেন। সংশ্লিষ্ট পুলকারের মালিক আমাদের সংস্থার সদস্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে তপনবাবুর বক্তব্য, গত দু’বছরে তেলের দাম অনেক বেড়েছে। দীর্ঘ সময় না-চলায় চাকা বসে গিয়েছে বহু পুলকারের। গাড়িতে নানা ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে। পুলকার পরিষেবা পুরোপুরি চালু হলে তার ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। তপনবাবু বলেন, “নতুন ভাড়া কত হবে, কী কী নতুন পদক্ষেপ করা হবে ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা চলতি মাসেই বৈঠকে বসব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy