শিবমন্দিরে দাস সম্প্রদায়ের লোকেদের ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি শোরগোল পড়েছিল পূর্ব বর্ধমানে কাটোয়ার গীধগ্রামে। কয়েক দিনের চাপানউতরের পর তার মীমাংসা হয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করে পুজো দিয়েছেন দাস সম্প্রদায়ের পাঁচ জন। এ বার মীমাংসা হল নদিয়ার বৈরামপুরের শিবমন্দিরেও। কলকাতা হাই কোর্টের ভর্ৎসনার পর অবশেষে সেই মন্দিরেও পুজো দিলেন তফসিলিরা। বৃহস্পতিবার পুলিশি প্রহরায় মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দেন তফসিলি জাতিভুক্ত রজক বা ধোপা সম্প্রদায়ের লোকেরা।
গাজন উৎসবে তাঁদের মন্দিরে প্রবেশ এবং সন্ন্যাসী হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তফসিলি সম্প্রদায়ের লোকেরা। সেই মামলায় উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, এমন বৈষম্যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এই পরিস্থিতির জন্য পুলিশকেও ধমক দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে দফায় দফায় বৈঠক হয়। সেখানেই ঠিক হয়, তফসিলিরাও মন্দিরে পুজো দিতে পারবেন।
সেইমতোই প্রায় ৩০০ বছরের রীতি ভেঙে মন্দিরে পুজো দিলেন তফসিলি সম্প্রদায়ের পাঁচ পরিবারের লোকেরা। তাঁদেরই এক জন জয়া দাস বলেন, ‘‘আমার দাদু-ঠাকুরদা এই মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়েও ভিতরে যেতে পারেননি। আজ আমরা ইতিহাস গড়লাম। এটা শুধু মন্দিরে প্রবেশ নয়, আমাদের মর্যাদার লড়াইয়ে জয়।’’ সীমা দাসের কথায়, ‘‘আজ প্রথম বার মনে হল, আমরা এই সমাজেরই অংশ।’’
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল মন্দিরচত্বরে। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার উত্তমকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘শিবমন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে। নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষেরা আজ পুজো দিতে পেরেছেন। কোনও রকম বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাঁদের। সর্বসম্মতিতেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’’ এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য উজ্জ্বল দাস বলেন, ‘‘শতাব্দি প্রাচীন এই প্রথাকে বন্ধ করা এত সহজ ছিল না। প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ঈশ্বর সকলের জন্য। শুধুমাত্র তফসিলি হওয়ার কারণে আমাদের মন্দির থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে? এত দিনে আমরা সুবিচার পেয়েছি।’’
যদিও মন্দিরের সেবায়েত আশিস কুন্ডুর বক্তব্য, ‘‘পৃথিবীর সব মন্দিরের একটা নিজস্ব রীতি থাকে। সমস্ত ধর্মীয়স্থানের নিজস্বতা থাকে। সেখানে হস্তক্ষেপ করা কতটা যুক্তিযুক্ত, বুঝতে পারছি না।’’