দু’হাতের আঙুল কুঁকড়ে ছাপ ওঠে না বায়োমেট্রিক যন্ত্রে। সে কারণে আধার কার্ড করানো যাচ্ছে না। তাই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগও করা যায়নি। এর জেরে রাজ্য সরকারের মানবিক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হয়েও তা পাচ্ছেন না আড়শা ব্লকের পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা পাটটাঁড় গ্রামের বছর চব্বিশের যুবক ভোলানাথ সিং মুড়া।
জন্ম থেকেই ভোলানাথ অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারেন না। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য রাজ্য সরকারের প্রকল্প মানবিক ভাতার কার্ড তাঁর আছে। আছে ভোটার কার্ড। পরিবার জানাচ্ছে, পাঁচ বছর আগে মানবিক ভাতা কয়েক হাজার টাকা অনুদান পেয়েছিলেন তিনি। পরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধারের সংযোগ করা বাধ্যতামূলক করার সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই শুরু হয়েছে বিপত্তি।
ভোলানাথের বাবা নকুল সিং মুড়ার দাবি, স্থানীয় আধার কার্ড তৈরির কেন্দ্র থেকে জেলা সদর পুরুলিয়ার কেন্দ্রে গিয়েও আধার কার্ড তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আঙুলের ছাপ বায়োমেট্রিক যন্ত্রে তোলা যাচ্ছে না। সমস্যার কথা প্রশাসনের দরবারে জানিয়েও সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘আমি পেশায় দিনমজুর। সামান্য কিছু জমি আছে। কিন্তু চাষ করেও সারা বছর সংসার চলে না। তাই লোকের বাড়িতে কাজ করি। ছেলের আধার কার্ডের সমস্যা মিটে গেলে মানবিক ভাতার টাকাটা পেলে খুব সুবিধা হত।’’ তাঁর প্রশ্ন, ভোলানাথের মতো বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য আধার কার্ড তৈরির বিকল্প কোনও ব্যবস্থা কি নেই? রেশনকার্ডেও আধারের ‘লিঙ্ক’ করা যাচ্ছে না। জানি না, সেটা আবার কবে বন্ধ হয়ে যায়।
বিজেপির আড়শা মণ্ডল সভাপতি সুভাষ মাহালির অভিযোগ, ‘‘প্রশাসন সে ভাবে গুরুত্ব দিলে ভোলানাথকে সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হত না।’’ যদিও সিরকাবাদ পঞ্চায়েতের পাটট্যাঁড় গ্রামের তৃণমূল সদস্য বৃহস্পতি সিং মুড়া জানান, ভোলানাথ রাজ্য সরকারের মানবিক ভাতা পেয়েছেন। প্রশাসন থেকে তাঁকে হুইলচেয়ারও দেওয়া হয়েছে।
আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিশ্বরূপ মাঝির আশ্বাস, ‘‘আধার কার্ড না থাকাতেও যাতে তিনি রেশন সামগ্রী পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন সে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’’
তবে প্রশাসন সূত্রের খবর, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেশন দেওয়া হয়। ভোলানাথের পরিবারের আশঙ্কা, আধার কার্ড তৈরি না হলে আগামী দিনে রেশন পাওয়া থেকেও সে বঞ্চিত হতে পারে।
সভাপতি বিশ্বরূপ জানান, আধার কার্ড তৈরির কেন্দ্র ব্লক এলাকায় নেই। তবে ভোলানাথের দ্রুত আধার কার্ড তৈরির ব্যাপারে তিনি চেষ্টা করবেন। আড়শার বিডিও মইন আহমেদও আশ্বাস দেন ভোলানাথের আধার কার্ড তৈরির ব্যাপারে প্রশাসন সমস্ত রকম সহযোগিতা করবে। তেমন হলে ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে আধার কার্ড তৈরির আঞ্চলিক কেন্দ্রে প্রশাসনই খরচ করে তাঁকে সেখানে পাঠাবে।
আধার কার্ড তৈরির পুরুলিয়ার এক কেন্দ্রের কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, এ ধরনের ঘটনায় চোখের মণি ‘স্ক্যান’ করেও আধার কার্ড তৈরি করার সুযোগ থাকে।
আপাতত অপেক্ষায় ভোলানাথ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)