ছবিটা আমূল বদলে গেল।
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় চলে যাওয়ার পরে বগটুইয়ের স্বজনহারা পরিবারের সদস্যেরা বাড়ি ধুয়ে পরিষ্কার করেছিলেন। সেই দিন ছিল ২০২৩ সালের ২১ মার্চ। বগটুই হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্তি। তিন বছর পূর্তির দিনে সেই আশিসের সামনে এসে শাসকদলর মঞ্চে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন স্বজনহারাদের ‘মুখ’ মিহিলাল শেখ! আশিসকে নিজের বাড়িতে ডেকে চা দিয়ে আপ্যায়নও করলেন।
মিহিলাল কি তবে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলের পথে—শুক্রবারের এই ঘটনা সে প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। মিহিলালের দাবি, বিজেপি নেতারা আর তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। প্রসঙ্গত, গত বছর ডিসেম্বরে রামপুরহাটের তৃণমূল কার্যালয়ে এই মিহিলালকেই দেখা গিয়েছিল জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সামনে করজোড়ে দাঁড়াতে। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, মিহিলালকে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন? এ দিন আশিসের সামনে ক্ষমা চাওয়ার পরে অনেকেই মনে করছেন, মিহিলালের শাসকদলে যোগ সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
২০২২ সালের ২১ মার্চ রাতে তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ খুন হন। তার ‘বদলায়’ সে রাতেই বগটুই গ্রামের ১০ জনকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ ওঠে ভাদুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলা ওই ঘটনায় ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তুলতে প্রথম বর্ষপূর্তিতে বগটুইয়ে শহিদ বেদি তৈরি করে বিজেপি এবং তৃণমূল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ওই বেদি তৈরি করলেও দলের কোনও নেতা সেই বেদিতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাননি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনহারাদের।
ঘটনার অভিঘাত কাটিয়ে বগটুইয়ে রাজনৈতিক প্রভাব
বেড়েছে তৃণমূলের। শুক্রবার, বগটুই-কাণ্ডের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ‘শহিদ স্মরণ’ অনুষ্ঠানের ডাক দেওয়া হয়। সেখানে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত
ছিলেন। বগটুইয়ের স্বজনহারা পরিবারের সদস্য বানিরুল শেখ, শেকলাল শেখদের পাশাপাশি এ বছর মিহিলাল শেখও ছিলেন আশিসের সঙ্গে মঞ্চে।
মিহিলাল বগটুই-কাণ্ডের পরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য গ্রামে বিজেপি কোনও কর্মসূচি নেয়নি। বগটুই থেকে সামান্য দূরত্বের রামপুরহাট শহরে বিরোধী দলনেতা উপস্থিত থেকেছেন। কিন্তু, বগটুইয়ে তিনি যাননি। শুধু সমাজমাধ্যমে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘আজ বগটুই গণহত্যার তৃতীয় বর্ষপূর্তি। তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনীর নৃশংস হামলায় নিহত বগটুইবাসীদের স্মরণ করি। সকল নিহতকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।’’
মিহিলাল এ দিন তৃণমূলের মঞ্চে বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা আর আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। আমাদের যাঁরা ভাল চায়, তাদের সঙ্গে থাকতে চাই। দু’বছর আগে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমাদের পরিবারের যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, তার জন্য আমরা অনুতপ্ত। তাই ক্ষমা চাইছি।’’ স্বজনহারা পরিবারের এক সদস্য মেরিনা বিবি বলেন, ‘‘বিজেপির মিথ্যা আশ্বাসে আর আমাদের বিশ্বাস নেই।’’ আশিস বলেন, ‘‘সে দিনকার ঘটনা আমিও মনে রাখিনি। আজ ওঁরা ভুল বুঝতে পেরেছেন।’’
এ দিন রামপুরহাটে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একই মঞ্চে থাকা বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা মিহিলালদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মিহিলাল কী বুঝেছেন, জানি না। আমরা সব সময় স্বজনহারাদের পাশে ছিলাম, আজও আছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)