গত বছর মা হয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলছিলেন, মেয়ে দুয়া কবে বমি করা ছাড়বে, আপাতত তারই অপেক্ষায় তিনি। তারকা হোক কিংবা সাধারণ মা-বাবা, বাচ্চার বমির সমস্যায় জেরবার সকলেই। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “বাচ্চার বমির সমস্যা নিয়ে বাবা-মায়েরা প্রায়ই হাজির হন। বিভিন্ন বয়সের বাচ্চার বমির কারণ কিন্তু আলাদা।”
- দুধ তোলা: সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে আগে বুঝতে হবে শিশু দুধ তুলছে নাকি বমি করছে। জন্মের পরে কয়েক মাস যত দিন বাচ্চা ব্রেস্টফিড করছে, সে সময়ে বমির চেয়ে দুধ তোলার সমস্যা বেশি হয়। দিব্যেন্দু বলছেন, “বাচ্চা ব্রেস্টফিড করার সময়ে অনেকটা হাওয়া তার পেটের ভিতরে ঢুকে যায়। তা থেকেই এ সমস্যা হয়। বাচ্চাকে খাওয়ানোর পরের ২০ মিনিট চিকিৎসকের দেখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে ঢেকুর তোলালে, এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।”
- অতিরিক্ত খাওয়া: বাচ্চা একটু বড় হলে, যখন বুকের দুধ ছেড়ে অন্য খাবার খেতে শুরু করে, তখন তার বমির কারণ অধিকাংশ সময়েই অতিরিক্ত খাওয়া। বাচ্চার খাওয়ার ক্ষমতা কতটুকু, খুদের ছোট্ট পেটে কতটা খাবার ধরবে তার আন্দাজ বাবা-মায়েরা করতে পারেন না। অতিরিক্ত স্নেহে মায়েরা অনেক সময়েই বেশি খাইয়ে ফেলেন, যার ফলে বমি হয়। এ ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। দিব্যেন্দু বলছেন, “অনেক সময়েই বাচ্চা বমি করলে মায়েরা পেট খালি হয়ে গিয়েছে ভেবে সঙ্গে সঙ্গে আরও খাইয়ে দেন। এ অভ্যেস বাচ্চার হজমশক্তি ও পরিপাকতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।”
- মানসিক চাপ: বাচ্চা আরও বড় হলে, যখন সে স্কুলে যেতে শুরু করছে, বাইরের জগতে মিশছে তখন কোনও প্রতিযোগিতা বা পরীক্ষার আগে অনেক সময়েই বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বারবার এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে বুঝতে হবে সমস্যাটা মানসিক। চিকিৎসকদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে মূলত ভয়, দুশ্চিন্তা কাজ করে। মানসিক চাপ থেকে বাচ্চারা বমি করে। এ সমস্যায় কোনও ওষুধ না খাওয়ানোরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বরং প্রয়োজনে মনোবিদের পরামর্শ নিতে পারেন। বাচ্চাকে সাহস জোগাতে পারেন। প্রতিযোগিতাকে সহজ ভাবে গ্রহণ করার শিক্ষা দিতে পারেন।
- মোশন সিকনেস: পাহাড়ি পথে বা একটানা গাড়ি চড়লে অনেক বাচ্চাই বমি করে। অনেক সময়ে ডিজ়েল-পেট্রোলের গন্ধে এ ধরনের সমস্যা হয়। আবার মোশন সিকনেসের কারণেও তা হয়। বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দেরও এ ধরনের সমস্যা হয়। দিব্যেন্দু বলছেন, “ন’-দশ বছর পেরিয়ে গেলে এ সমস্যায় অ্যান্টিহিস্ট্যামিন কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। তবে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কোনও ওষুধ না দেওয়াই ভাল।” শরীর একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে এ সমস্যা কমে যাবে।
এ ছাড়াও, প্যারাসিটামল বা ব্যথার ওষুধ চললে গ্যাসের সমস্যা থেকে বাচ্চা অনেক সময়ে বমি করতে পারে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন, জন্ডিস, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বা পেটের ইনফেকশন, অন্ত্রের গঠনে সমস্যা, অ্যাপেনডিসাইটিস, টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের উপসর্গ হিসেবেও বাচ্চার বমি হতে পারে। বাচ্চার পেট বা মাথায় চোট লাগলেও সে বমি করতে পারে। দিব্যেন্দুর পরামর্শ, এ সব ক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে বাচ্চাকে সরাসরি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াই ভাল।
মডেল: ঐশ্বর্য সেন, স্বর্ণাভ ঘোষ
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)