শৌনক সেন।
দিল্লির ধূসর, মলিন আকাশে চিলের ঝাঁকই সিনেমার ভাবনার বীজ উস্কেছিল তাঁর মনে। ত্রিশোর্ধ্ব শৌনক সেন তবু ভাবেননি, এই ছবিই এক দিন অস্কারের রেড কার্পেটে তাঁকে পৌঁছে দেবে। পরম মুহূর্তের দু’রাত আগে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে তিনি বলছিলেন, “আমরা গোটা টিম যা যা পারি করেছি। এটা বিরাট মঞ্চ, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছবিগুলিও দারুণ, ইতিহাস সৃষ্টি হোক না হোক, এখন প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করছি।”
বাঘা প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে পুতিনের প্রতিপক্ষ যুদ্ধ-বিরোধী রুশ নেতা নাভালনিকে নিয়ে সাড়া ফেলা তথ্যচিত্র। শৌনকের ছবি ‘অল দ্যাট ব্রিদস’-এ দিল্লির ওয়াজিরাবাদে আকাশ থেকে পড়া জখম চিলেদের ‘ডাক্তার’, দুই ভাই নাদিম আর সাউদের স্বপ্নের কথা। দিল্লির পটভূমিতে তা গাছগাছালি, পশুপাখি, মানুষের আত্মিক সম্পর্কের গল্পও বলে। আবার দূষণক্লিষ্ট দিল্লির পাশাপাশি শাহিন বাগের আন্দোলন বা ২০২০-র সংঘর্ষের ছায়ায় সমকালের দিল্লিকেও অস্কার-মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে। হিংসার খবরে বিচলিত নাদিম বলছেন, “এমন থকথকে ঘৃণা, বিদ্বেষ আগে ছিল না। মানুষকে ইঁদুর আর উইপোকা নাম দিয়ে চারধারে জঞ্জাল নিকেশ অভিযান চলছে।” শৌনকের কথায়, “আমি প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানুষের সম্পর্ক নিয়ে দার্শনিক ছবিই করতে চেয়েছি। তবে সমকালের অশান্ত সময়টা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমার ছবির যাঁরা চরিত্র, তাঁরা পশুপাখিদের বাঁচানোর আদর্শে ডুবে আছেন।”
অস্কার-অনুষ্ঠানে নাদিম, সাউদ এবং তাঁদের সহযোগী মজাদার তরুণ সালিকও শৌনকদের সঙ্গী হয়েছেন। এ ছবি ইতিমধ্যেই কান, সানডান্সে সেরা তথ্যচিত্রের খেতাব-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতে নিয়েছে। তবে অস্কার-সন্ধ্যার আগে ছবির প্রচারের ঝক্কিও কম নয়। কলকাতায় জন্মানো দিল্লির ছেলে বলছেন, “অস্কার নমিনির লাঞ্চে স্পিলবার্গ, টম ক্রুজ়দের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আলফন্সো কুয়ারঁ এবং গিয়েরমো দেল তরোর সঙ্গেও মূল অনুষ্ঠানের আগেই দেখা ও কথা হবে।”
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া এবং জেএনইউ-এর প্রাক্তনী শৌনকের মা-বাবা দীর্ঘদিন দিল্লি প্রবাসী। তিন বছর ধরে ‘অল দ্যাট ব্রিদসে’র শুটিং চলার সময়ে ধাক্কা দিয়েছিল বাবা শুভঙ্কর সেনের মৃত্যু। এ ছবি বাবাকেই উৎসর্গ করেছেন শৌনক। শ্যামবাজারে তাঁদের পৈতৃক বাড়িটা তালাবন্ধ। ভবানীপুরে দিদিমা মারা গিয়েছেন বছরখানেক আগে। শৌনকের মা স্মিতা সেন দিল্লিবাসী। ভারতীয় সময় সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় টিভি-তে অস্কার অনুষ্ঠান দেখতে তিনিও অধীর। অস্কার-দৌড়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র বিভাগে তামিল ভাষায় কার্তিকী গঞ্জালভেসের ছবি ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারার্স’-এও মানুষ-হাতির মিষ্টি সম্পর্ক।
শৌনকের ছবির মেজাজটা অবশ্য অনেক গভীর। শৌনক, দিল্লির পুরনো বন্ধু আমন মান ছাড়া টেরি লিফারও ‘অল দ্যাট ব্রিদস’-এর প্রযোজক। এইচবিও ছবিটির স্বত্ব কিনলেও তা এখনও এ দেশের ওটিটিগুলিতে দেখা যাচ্ছে না। তবে ছবিটির বিভিন্ন লিঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারকোভস্কি, সত্যজিৎ রায় থেকে সমসময়ের চৈতন্য তামহানের ছবির ভক্ত শৌনক এর পরে কাহিনিচিত্রে হাত দিতে চান। সেই সঙ্গে তিনি আশাবাদী, “চিলদের জন্য নাদিমদের সাধের হাসপাতালও ঠিক দাঁড়িয়ে যাবে। আরও বছরখানেকের জন্য প্রকল্পটির পৃষ্ঠপোষক পাওয়া গিয়েছে।” কপাল ঠুকে ধ্রুপদী বো টাই টাক্সেডোয় সেজে অস্কার-নাট্যের চরম মুহূর্তটির জন্যই শৌনক এখন অপেক্ষায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy