Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
saraswati puja

Saraswati Pujo: ১৯৭৬-এ মাধ্যমিক পাশ, এখনও সরস্বতী পুজোয় প্রত্যেক বার স্কুলে যাওয়া চাই ওঁদের

বছরের এই একটা দিন ষাটোর্ধ্ব ‘পড়ুয়াদের’ ছেলেবেলায় ফেরার দিন। নিয়ম ভেঙে গোটা চারেক কুল মুখে পোরার দিন। রংবেরঙের পাঞ্জাবিগুলো গায়ে তোলার দিন।

নিজস্ব চিত্র।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৫৮
Share: Save:

‘জলছবি, রঙমশাল, স্কুল ছুটির হজমিরা’ আজ তাঁদের কাছে ঈষৎ ধুসর বটে, কিন্তু টান কমেনি এক ছটাক। '৭৬ সালে মাধ্যমিকের প্রথম ব্যাচের অভিজিৎ, আশিস, সন্দীপনরা আজ আবার ফিরেছেন স্কুলে। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে বয়সে প্রবীণ, মনে কচিদের আড্ডা বসেছিল উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে। বেশির ভাগই চাকরি থেকে অবসরে। জন্মের সংশাপত্র অনুযায়ী এখন তাঁরা ‘সিনিয়র সিটিজেন’, কিন্তু শনিবারের শৈলেন্দ্র সরকার স্কুলের রোয়াকে তাঁদের দেখলে কে বলবে সে কথা!

অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মী অভিজিৎ সরকার। শরীর বয়সের জানান দিলেও, এই একটি দিন, ‘কুছ পরোয়া নেই’ তাঁর। কুলের বেদম ভক্ত অভিজিৎ নিজের ভাগের কুল গোগ্রাসে খেয়ে হাত বাড়িয়েছেন বন্ধুর থালায়। আঙুল টোপাকুল অবধি পৌঁছয়নি, তার আগেই হাতে পড়েছে চাঁটি! চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড় ধরা!

চোর ধরার আনন্দে উদ্বেল ‘দারোগা’ সন্দীপন সেন কলেজে পড়ান। রাশভারি প্রকৃতির সন্দীপনকে অবশ্য রেয়াত করেন না বন্ধুরা। সকলেই যেখানে অবসর নিয়েছে, সেখানে অধ্যাপকদের অবসরের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে হয়েছে ৬৫। পরিণতি, এখনও তিনি চাকরিজীবী, অতএব, বয়সে বন্ধুদের চেয়ে ছোট!

শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে প্রতি বছরই সরস্বতী পুজো হয়। আর প্রতি বছরই নিয়ম করে হাজির হন তাঁরা। ‘নিজের স্কুল’ বলে কথা! বছরের এই একটা দিন ষাটোর্ধ্ব ‘পড়ুয়াদের’ ছেলেবেলায় ফেরার দিন। নিয়ম ভেঙে গোটা চারেক কুল মুখে পোরার দিন।

রাজবল্লভ পাড়ার বাসিন্দা অভিজিৎ এক লাফে ফিরে গিয়েছেন নিজের স্কুল জীবনে। কুল মুখে পুরে তিনিই জানালেন, বাম সরকারের শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন এই স্কুলেরই প্রাক্তনী। অভিজিতের কথায়, ‘‘বুদ্ধদা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর একাধিক বার স্কুলে এসেছেন। প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এই এলাকায় একটি শোভাযাত্রা করেছিলেন। স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওঁর মুখে হাসি দেখেছিলাম। আমিও সেই মিছিলে ছিলাম। সিপিএম নই, শুধু স্কুলের দাদা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, এই গৌরবে।’’ অভিজিৎই জানালেন, ‘‘সে দিনই বুদ্ধদাকে স্কুলে এনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। অনেক গল্পগুজব হয়েছিল। পুরনো সেই দিনের কথা, আর কি…।’’

স্কুল জীবনে ঠিক যে জায়গায় আড্ডা বসাত '৭৬ এর মাধ্যমিক ব্যাচ, আজও সেই রোয়াকেই বসেছিলেন ওঁরা। আশিস রায়চৌধুরী, আশিস দত্ত, অভিজিৎ পোদ্দার, অভিজিৎ সরকার, আবেশ ঘোষ, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়রা এই ২০২২ সালে দাঁড়িয়েও যেন বিদ্যার দেবীর হাত ধরে ফিরে গিয়েছেন তাঁদের স্কুল জীবনে। যখন শালপাতার ঠোঙায় খাবার বিলি হত। বেশি চাইলে জুটত বকুনি। আজ শালপাতা গিয়ে এসেছে থার্মোকলের হালকা প্লেট। যদিও শালপাতায় স্বাদ বেশি পেতেন বলেই দাবি ষাটোর্ধ্বদের।

তাঁদের তুমুল হই-হল্লা আর ঠাট্টা-তামাশার বহর দেখে কমবয়সিরা পর্যন্ত থ! স্কুলের শিক্ষকমশাইরা বকেন না? ফুৎকারে উড়িয়ে অভিজিৎদের জবাব, এখনকার সমস্ত শিক্ষকই তো বয়সে আমাদের হাঁটুর কাছে। ওরা আবার বকবে কী! শুনে হেসেই কুটিপাটি শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের সহ-প্রধান শিক্ষক, বললেন, ‘‘বকুনির তো প্রশ্নই নেই, উল্টে সমস্যায় পড়লে এই প্রাক্তনীরাই যে সহায়!’’

সব মিলিয়ে অন্য রঙে রাঙানো সরস্বতী বন্দনার সাক্ষী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্কুল।

অন্য বিষয়গুলি:

saraswati puja buddhadeb bhattacharyay reunion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy