Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Chandan Mandal

‘আমাদের এখানে যখন চাকরি বিক্রি হচ্ছিল, তখন চন্দনকে টাকা দিয়ে ছেলের চাকরি হয়েছিল’

চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম আছে মন্দিরবাজারের বিধায়কের ছেলেরও। তিনি এলাকারই একটি স্কুলের করণিক। ২০১৮ সালে চাকরি পেয়েছিলেন। বিধায়ক বা তাঁর ছেলে কেউই ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর মেলেনি।

Chandan Mondal.

‘সৎ রঞ্জন’ ওরফে চন্দন মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৫
Share: Save:

কারও ফোন বন্ধ। কেউ মেসেজের জবাব দিচ্ছেন না। কারও বাড়ির দরজায় তালা।

শিক্ষা-দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে ৮৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। জানা যাচ্ছে, বিধায়ক-পুত্র থেকে শুরু করে জেলা পরিষদের সদস্যের স্বামী, প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার নিকটাত্মীয়ের নামও আছে সেখানে। অনেকেই দু’তিন দিন ধরে ধরে স্কুলে যাচ্ছেন না। পাড়ায় পাড়ায় এই নিয়ে জটলা, গুঞ্জন।

তালিকায় নাম আছে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর বিধায়ক উষারানি মণ্ডলের মেয়ের। তিনি বেলঘরিয়ার একটি স্কুলে চাকরি করতেন। উষারানির স্বামী মৃত্যুঞ্জয় দাপুটে তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, ‘‘পড়াশোনায় বরাবরই ভাল আমার মেয়ে। চাকরি পেতে কোনও সুপারিশের প্রয়োজন পড়েনি। কেন বাতিলের তালিকায় নাম উঠল জানি না। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হব।’’ বিধায়কের মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম আছে মন্দিরবাজারের বিধায়কের ছেলেরও। তিনি এলাকারই একটি স্কুলের করণিক। ২০১৮ সালে চাকরি পেয়েছিলেন। বিধায়ক বা তাঁর ছেলে কেউই ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর মেলেনি। সংশ্লিষ্ট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জানান, শুক্র ও শনিবার স্কুলে আসেনি ওই কর্মী।

চাকরি গিয়েছে ভাঙড় ১ পঞ্চায়েতে সমিতির সভাপতি শাজাহান মোল্লার মেয়ের। তিনি ভাঙড় ১ ব্লকের একটি হাই স্কুলে কর্মরত ছিলেন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ক্যানিং ২ ব্লকের একটি স্কুলে। অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে বাড়ির কাছের স্কুলে নিয়ে আসেন শাজাহান। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক সময়ে ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর, জানাচ্ছে দলেরই একটি সূত্র। সম্প্রতি শাঁকশহর পুকুরে শাজাহানের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি চালায়। তাঁর সঙ্গে নানা ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের স্বামীর নাম আছে চাকরি বাতিলের তালিকায়। বামনগাছির একটি হাই স্কুলে কাজ করেন তিনি। এ দিন বাড়িতে গিয়ে কারও দেখা মেলেনি। কেউ ফোন ধরেননি।

তালিকায় নাম আছে বাগদার রামনগর গ্রামের বাসিন্দা সন্তু দাসের। তিনি বাগদার চরমণ্ডল সিএমপিপিবিকে ফুলমোহন হাই স্কুলে কাজ করতেন। শিক্ষা-দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত চন্দন মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন সন্তু। তিন দিন ধরে স্কুলে যাননি। বাড়ি গিয়েও দেখা মেলেনি। তবে সন্তুর মায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কয়েক বছর আগে আমাদের এখানে যখন চাকরি বিক্রি হচ্ছিল, তখন চন্দন মণ্ডলকে টাকা দিয়ে ছেলের চাকরি হয়েছিল।’’

আদালতের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে এসএসসি গ্রুপ-সি পদে কর্মরত কোচবিহারের মাথাভাঙা ২ ব্লকের তৃণমূল যুব সহ-সভাপতি মদন বর্মণের। বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হয়েছে মদনের ‘ওএমআর শিট (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। মদনের দাবি, ‘‘আমি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেই চাকরি পেয়েছি।’’ সমাজমাধ্যমে যে ওএমআর শিট ঘুরছে, সেটি তাঁর নয় বলে দাবি মদনের। আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

চাকরি গিয়েছে বারাসত পুরসভার এক প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলরের। বিবেকানন্দ আদর্শ বিদ্যামন্দির স্কুলের কর্মী হিসাবে ২০১৭ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। দিনভর ফোন বন্ধ ছিল তাঁর। বাড়িতেও পাওয়া যায়নি। তাঁর বাবা বলেন, ‘‘আমরা জানি, মেয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে চাকরি পেয়েছিল। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chandan Mandal Recruitment Scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy