নিহত রহিম শেখের ছেলের অভিযোগ শুনছেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার ইলামবাজারে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
ঝালমুড়ির ঝাঁঝ এখনও টাটকা। তার মধ্যেই ফের বিতর্ক উস্কে দিলেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়! সেই সঙ্গেই সামনে চলে এল সরকারি স্তরে সমন্বয় এবং রাজনৈতিক স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নীতি কার্যকর করতে গিয়ে বিজেপির বিড়ম্বনা!
এ রাজ্যে সম্প্রতি বিজেপির প্রথম ‘শহিদ’ শেখ রহিমের স্মরণে রবিবার বীরভূমের ইলামবাজারে এক সভার শেষে তাঁদের দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের ‘সখ্য’ নিয়ে প্রশ্ন শুনেই বেজায় ক্ষিপ্ত হন রূপা। প্রশ্ন ছিল, বিজেপি-র রাজ্য নেতারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে এত কথা বলছেন, আর নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফর করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে? জবাবে রূপা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী তো আর এসে রাজ্য বিজেপি চালাচ্ছেন না! আমরাই চালাচ্ছি! আমাদের দেখে কি মনে হচ্ছে, তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাঁত রয়েছে?’’
রাজনীতিকদের একাংশ বলছেন, রূপা যা বলেছেন, তা থেকে বিজেপি-র ধারাবাহিক বিড়ম্বনা ফের স্পষ্ট। মোদী বা অমিত শাহের মতো বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বেরও আনুষ্ঠানিক অবস্থান, রাজনীতির ময়দানে তৃণমূলকে জমি ছাড়বে না বিজেপি। কিন্তু সরকার চালাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতার নীতি রাখতে হবে। আর বাংলাদেশ তো আন্তর্জাতিক সফর। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এবং বাধ্যবাধকতার বিষয়টি মাথায় রাখাটা জরুরি। অভ্যন্তরীণ কোনও মতভেদ যদিও থাকেও, তার ছাপ সেখানে পড়া উচিত নয়। মোদীও সেটাই করেছেন। স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ বা তিস্তার জট কাটাতে বাংলাদেশের পড়শি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বও যথেষ্টই। সেখানে মমতাকে পাশে নিয়ে চুক্তি রূপায়ণ বা জট খোলার লক্ষ্যে আলোচনাটাই স্বাভাবিক। এখানে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে মমতার মন্তব্যের প্রসঙ্গ। যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ভুলে গুপ্তচর সংস্থা ‘র’কে দোষারোপ করে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী!
যদিও এর উল্টো যুক্তিও শোনা যাচ্ছে রাজনীতিকদের মধ্যে। এ দিনই অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ টুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে ভূমি হস্তান্তর, ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস পরিষেবা চালুর মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছে। কিন্তু সেখানে উত্তর-পূর্বের কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে সফরসঙ্গী করেননি নরেন্দ্র মোদী। এতে স্পষ্ট হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির কোনও গুরুত্ব তাঁর কাছে নেই।’’ বস্তুত, স্থলসীমান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে গগৈর অবদান অনস্বীকার্য। সেটা মেনেও নিয়েছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকেও এই সফরে সামিল করা হয়নি। অথচ যে দু’টি বাসযাত্রার উদ্বোধন হয়েছে ঢাকায়, তার একটি কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে আগরতলা যাবে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে শুধু মমতা কেন?
সব মিলিয়ে তাই অস্বস্তিটা ক্রমে জুড়ে বসছে রাজ্য বিজেপির ঘাড়ে। আর তাই উঠেছে নেপথ্য সমঝোতার প্রসঙ্গ। যার ইঙ্গিত শুনেই এ দিন ক্ষুব্ধ রূপা বলেছেন, ‘‘যত সব বোকা বোকা প্রশ্ন! আমি এগুলোর উত্তর দেব না!’’
সম্প্রতি সরকারি কর্মসূচিতে রাজ্যে এসে মমতা সরকারের সমালোচনায় একটি বাক্যও খরচ করেননি মোদী। পক্ষান্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে মমতা ভেলপুরি এবং ঝালমুড়ি খাইয়েছেন। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব ব্যবহার করে মমতার প্রশস্তি করেছেন বাবুলও। এই সব ঘটনা থেকেই রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে নেতৃত্বের একাংশকে। দলীয় কর্মীদের অভিযোগ— কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই আচরণের ফলে রাজ্যবাসীর মনে বিজেপি-র তৃণমূল বিরোধিতার আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রাজ্য বিজেপি-র অন্দরের এই অস্বস্তি প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন রূপাই। বাবুল-মমতার ঝালমুড়ি কূটনীতি নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাবুল যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক গাড়িতে যান, তাঁর সঙ্গে ঝালমুড়ি খান, তখন তো একটু বলতে পারেন, উনি আমাদের কেন এত মারছেন!’’ বাবুল অবশ্য জবাবে বলেছিলেন, মাঠের লড়াই তিনি মাঠেই লড়ছেন। কিন্তু তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা যায় না। কিন্তু বাবুলের ওই ব্যাখ্যার পরেও যে বিজেপি-র অন্দরে অস্বস্তি কমেনি, তার প্রমাণই এ দিন মিলেছে ইলামবাজারে রূপার মন্তব্যে।
বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য রূপার বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যের জল্পনা নিয়ে সামগ্রিক ভাবে দলে যে অস্বস্তি, সে ব্যাপারে শমীক ফের বলেছেন, ‘‘ফিশ ফ্রাই ছিল। ঝালমুড়ি হয়েছে। ভেলপুরিও হতে পারে! আগামী বিধানসভা ভোটটা কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই হবে!’’
ইলামবাজারের ওই সভা-মঞ্চে রহিম ছাড়াও আরও তিন নিহত বিজেপি কর্মী ডোমনপুরের বাসিন্দা শেখ এনামুল, মাখড়ার বাসিন্দা শেখ তৌসিফ এবং চৌমণ্ডলপুরের বাসিন্দা শেখ জসিমুদ্দিনের পরিজনেরা ছিলেন। রূপা বলেন, “প্রতিটি মানুষের নিজের মনের মতো দল করার অধিকার আছে। সেই অধিকার কাড়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না। এমন একটা দিন পশ্চিমবঙ্গে দেখতে চাই।’’ ওই সভায় সুভাষ সরকার, শিশির বাজোরিয়া, জয়প্রকাশ মজুমদার প্রমুখ রাজ্য নেতারা ছিলেন। সভা সেরে কানুর গ্রামে যান বিজেপি নেতারা। নিহত রহিমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে হত্যাকাণ্ডের স্থল ঘুরে দেখেন রূপা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy