Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jalpaiguri

কোর্টের নির্দেশে গতি, বাকি বহু কাজ

শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির মধ্যে, তেমনই জলপাইগুড়ি থেকে ময়নাগুড়ি হয়ে ধূপগুড়ি এবং ফালাকাটা— বেহাল রাস্তার কাহিনি অনেকটাই লম্বা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০ ০৬:১৭
Share: Save:

গত বছর কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ চালু হয় জলপাইগুড়িতে। তার মাসখানেক আগে কলকাতায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি যাওয়ার রাস্তা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। শুনানি চলার সময়েই হাইকোর্ট সময় বেঁধে দিয়ে বলে, এক মাসের মধ্যে বাগডোগরা থেকে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত রাস্তা ঠিক করতে। একই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ এ-ও বলে, মালদহ থেকে ইসলামপুরের কাজও যত দ্রুত পারেন, শেষ করুন।

হাইকোর্টের এই চাপেই শেষ পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে, বলছেন জলপাইগুড়ির ভুক্তভোগীরা। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বছর মার্চ মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে এক জন স্পেশ্যাল অফিসার নিয়োগ করা হয়। তিনি মধ্যস্থ হওয়ার পরেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ এগোতে শুরু করে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের দুই গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যেকার মূল জাতীয় সড়কের এখনও বেশ কিছু জায়গায় কাজ বাকি। তার ফলে এই পথে যানজটও নিত্য সঙ্গী। কেউ কেউ মজা করে বলছেন, সেই যানজটেই অবশ্য আটকে ধরা পড়ে গেল অন্য রাজ্য থেকে পাচার হওয়া দামী মদ! পুলিশের তো শাপে বর হয়েছে।

কিন্তু নিত্য যাত্রায় ভোগান্তি চলছেই। যেমন শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির মধ্যে, তেমনই জলপাইগুড়ি থেকে ময়নাগুড়ি হয়ে ধূপগুড়ি এবং ফালাকাটা— বেহাল রাস্তার কাহিনি অনেকটাই লম্বা। অথচ, ময়নাগুড়ি না ঢুকে যদি কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধার দিকে চলে যান, তা হলে পথ মসৃণ। বস্তুত, কোচবিহারে বেশিরভাগ জায়গাতেই জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়কের অবস্থা ভাল।

শিলিগুড়ির ফুলবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ির গা ঘেঁষে ধূপগুড়ি পর্যন্ত যাওয়া পুর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের প্রায় ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৫৫ কিলোমিটার এলাকার কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। যদিও রাস্তা দিয়ে গেলে তা বোঝার উপায় নেই। প্রচুর ভাঙা অংশ, সম্প্রসারণের কাজ পড়ে রয়েছে গত অন্তত এক বছর ধরে। এই অঞ্চলের জাতীয় সড়ক প্রকল্পের আধিকারিক সঞ্জীব শর্মা বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় জমি হাতে পাইনি। সেখানে কাজ আটকে আছে। বাকি নতুন এলাকায় রাস্তা ভাঙছে বলে যে অভিযোগ, সেগুলি আসলে ভাঙন নয়। ওখানে রাস্তার কাজ চলছে। কিছু জায়গা বৃষ্টিতে ভেঙেছে। সেখানে কাজ শুরু হবে। পরবর্তী আর্থিক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।’’ যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, কোথাও জমি অধিগ্রহণের সমস্যা নেই। কিছু এলাকায় জবরদখল এখনও রয়েছে, কিন্তু সেগুলি প্রশাসন দ্রুত সরিয়ে দেবে বলে জানানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ সম্প্রসারিত পথে পিচ না পড়ায় গরমে ধুলো, বর্ষায় কাদা হয়ে নরকের দশা হয়। জেলা প্রশাসনের দাবি, জলপাইগুড়ি থেকে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের ছবি-সহ তথ্য গিয়েছে নবান্নে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। কোন ব্লকে জাতীয় সড়কের কোথায় সমস্যা রয়েছে, তা বৈঠক ডেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশের সড়ক সম্প্রসারণ এবং সংস্কারের কাজ শেষ হবে বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

তুলনায় কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা ভাল। এই অংশের মধ্যে আছে পুন্ডিবাড়ি থেকে অসম সীমানাবর্তী বক্সিরহাটও। দিনহাটা-কোচবিহার রাজ্য সড়কও ঝকঝকে। বরং এই জেলায় বিভিন্ন মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তার দশা জরাজীর্ণ। বেহাল দশার অভিযোগ মেখলিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে কোরতলি পর্যন্ত প্রায় তিন কিমি রাস্তা নিয়েও। পূর্ত বিভাগের আওতাধীন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ রয়েছে। পূর্ত বিভাগের এক আধিকারিক জানান, পুজোর আগে রাস্তাটি সংস্কার করা হবে। তবে চ্যাংরাবান্ধা থেকে মাথাভাঙা পর্যন্ত ১৬ নম্বর রাজ্য সড়কে অবশ্য তেমন সমস্যা নেই। বর্ষায় দু’এক জায়গায় গর্ত হলে তা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে বলে ওই আধিকারিক জানান। অভিযোগ রয়েছে দিনহাটা মহকুমার বেশ কিছু রাস্তা নিয়েও। এগুলি হয় রাজ্য সড়ক, নয়তো গ্রাম সড়ক। পূর্ত দফতর জানিয়েছে, বরাদ্দ এলে সংস্কার হবে। কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মণ বলেন, “ব্লকগুলির মাধ্যমে খারাপ রাস্তার তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”

জাতীয় সড়কে বেশ কয়েকটি জায়গায় বেহাল দশা আলিপুরদুয়ার জেলাতেও। সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা দাবি করেছিলেন, রাজ্য সড়কগুলি বেহাল। কিন্তু জাতীয় সড়কের দুরবস্থা তাঁর চোখে পড়েনি। অথচ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে মহাকাল চৌপথি থেকে অসমের দিকে যেতে এবং হাসিমারার দিকে যেতে রাস্তা জুড়ে খানাখন্দ। বর্ষায় তা আরও বেড়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। কিছু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। সঞ্জীব শর্মা অবশ্য জানান, টেন্ডার ডাকা হয়েছে। শীঘ্রই রাস্তা মেরামত করা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy