Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Debesh Roy

তিস্তার পাড়ে বাঘারুরা আছেনই

সময় বদলেছে, তিস্তা পাড়ের এখনকার বাসিন্দারা দাবি করছেন, তাঁদের জীবনযাত্রা-অর্থনীতি এখনও দেবেশে-র তিস্তাপারের কাহিনি লেখার সময়েই পড়ে রয়েছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অনির্বাণ রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০৫:২১
Share: Save:

এই প্রত্যাখ্যানের রাত ধরে বাঘারু মাদারিকে নিয়ে হাঁটুক, হাঁটুক, হাঁটুক....।

‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ এ ভাবেই শেষ করেছিলেন দেবেশ রায়। বৃহস্পতিবার রাতেই তিস্তাপার জেনে গিয়েছে, তাঁদের প্রিয় দেবেশ রায় আর নেই। দেবেশ যে সময়ের কথা লিখেছেন, সে সময়ের চরিত্র ছিলেন বাঘারুরা। সময় বদলেছে, তিস্তা পাড়ের এখনকার বাসিন্দারা দাবি করছেন, তাঁদের জীবনযাত্রা-অর্থনীতি এখনও দেবেশে-র তিস্তাপারের কাহিনি লেখার সময়েই পড়ে রয়েছে। চরিত্রের নাম বদলেছে, কিন্তু বাঘারু-মাদারিদের ব্যথা বদলায়নি।

করোনা সংক্রমণে লকডাউনে এমনিতেই বিষন্ন ছিল তিস্তাপারের পরিবারগুলি। প্রায় প্রতি পরিবারেরই কেউ না কেউ ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আটকে রয়েছে। কেউ বা সরকারি ট্রেন-বা বাস না পেয়ে দূরের রাজ্য থেকে রোদে পুড়ে, পুলিশের মার খেয়ে হেঁটে আসছে বাড়ির দিকে। ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্তে’র শেষে বাঘারু-মাদারিদের হেঁটে চলার মতো। বাঘারু-মাদারিরাও তো শেষমেশ পরিযায়ী-ই বনে যায়।

আরও পড়ুন: তাঁরা অভিভাবক, তাঁরা শিক্ষক, সাহিত্যসমাজ চিরঋণী তাঁদের কাছে

সেবক পাহাড় থেকে নেমে মালবাজার, ময়নাগুড়ি হয়ে জলপাইগুড়ি শহর ছুঁয়ে ঘুঘুডাঙা, বোয়ালমারি গ্রাম দিয়ে বয়ে তিস্তা নদী ঢুকে গিয়েছে বাংলাদেশ। এই অংশে তিস্তা নদীর দু পারের জীবনযাত্রার সঙ্গে দেবেশ রায়ের তিস্তাপারের বৃত্তান্ত যেন এক হয়ে রয়েছে এখনও। জলপাইগুড়ির সারদাপল্লির বাসিন্দা বাবু মণ্ডল। দেবেশের উপন্যাসের সময়টা বাবু চোখে দেখেছেন। বাবু বলেন, “বই পড়িনি ঠিকই, কিন্তু ওই বই পড়ে বহু লোক আমরা কেমন ভাবে থাকি তা দেখতে এসেছে। বইয়ে কী লেখা আছে তা শুনেছি।’’ তিস্তাপারের কাহিনি লেখার সময়ে ময়নাগুড়ির প্রবীণ বামপন্থী নেতা নির্মল চৌধুরী দেবেশকে কাছে থেকে দেখেছেন। নির্মলবাবুও তিস্তাপারের মানুষ, এখন বৃদ্ধ। তিনি বলেন, “লেখকের মৃত্যুর খবর শুনে স্বজন হারানোর কষ্ট হচ্ছে। তিস্তাপারের বাসিন্দাদের সঙ্গে লেখক একাত্ম ছিলেন।”

একাত্ম না হলে তিস্তাপারের বৃত্তান্ত উপন্যাসটি লেখক ওঁদেরকেই উতসর্গ করবেন কেন! বইয়ের প্রথম পাতা উল্টে দেখলেই বেরিয়ে আসে উতসর্গ লিপি। যেখানে নন্দনপুর-বোয়ালমারি, ঘুঘুডাঙা, বানারহাট, গয়েরকাটার নিতাই সরকার, আকুলুদ্দিন, যমুনা উরাওনি রাবণচন্দ্র রায়ের নাম লেখা। সেই সঙ্গে এ-ও লেখা, “এই বৃত্তান্ত তারা কোনদিনই পড়বে না, কিন্তু তিস্তাপারে জীবনের পর জীবন বাঁচবে।”

তিস্তার পাড়ে বসতি বেড়েছে। ঘুঘুডাঙার সেচখালে জলও আসে। যে ব্যারেজের সেচখাল পার হয়ে এগিয়ে গিয়েছিল বাঘারু। যে বাঘারির হাতে পতাকা ‘ধরিয়ে দিতেই সে মিছিলের লোক হয়ে যায়।’ নেতা-মন্ত্রী-রাষ্ট্র বুঝে নিয়ে যে বাঘারুই বলে, “মোর কুনো মিছিল নাই।” দেবেশ সান্নিধ্য পাওয়া জলপাইগুড়ির শিক্ষক-শিল্পী শৈবাল বসু বলেন, “এমন বাঘারু-মাদারিদের সঙ্গে এখনও দেখা হয় তিস্তাপারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Debesh Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy