গ্রামীণ রাস্তা নিয়ে বিক্ষোভের মুখে দিদির দূতেরা। ছবি: ঋষি চক্রবর্তী।
‘দিদির দূতেরা’ কী নিয়ে সব থেকে বেশি ক্ষোভের মুখে পড়েছেন? ঠিক জবাব দিলে কোনও পুরস্কার নেই। কারণ, সকলেই দেখেছেন, মানুষের ‘রাগ’ সব থেকে বেশি গ্রামীণ রাস্তা নিয়ে।
যদিও প্রশাসনেরই একটি অংশের দাবি, গত কয়েক বছরে গ্রামীণ সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো কাজ হয়েছে। স্বীকৃতি মিলেছে কেন্দ্রের কাছ থেকেও। বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনার রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ খুব ভাল ভাবেই পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে বলে রিপোর্ট দিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং টিম’ও। তার পরে অবশ্য বছর দুই কেটেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, গ্রামীণ রাস্তা নিয়ে বর্তমানে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। গত দুর্গাপুজোর আগে বহু রাস্তায় তাপ্পি মারার কাজও করা যায়নি। আড়ালে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরাও মানছেন, কোষাগার বেহাল হওয়ায় সংস্কারের টাকা বরাদ্দ করা যায়নি।
তবে, পুজোর পরে গ্রামীণ রাস্তার জন্য রাজ্যকে ৫৮৪ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-৩-এর অধীনে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম দফার অর্থ পেল রাজ্য। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কেন্দ্র ও রাজ্য, দু’তরফেরই অংশীদারি রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্রের অর্থ আসায় তা গ্রামীণ এলাকার রাস্তার উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে মনে করেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে এ বার রাজ্য বাজেটেও গ্রামীণ এলাকার সড়ক সংস্কারের জন্য প্রকল্প চালু করা হয়েছে—পথশ্রী (রাজ্য বাজেটে নাম ছিল রাস্তাশ্রী)। সে বাবদ বড় অঙ্ক বরাদ্দের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
কী হবে, সে তো ভবিষ্যতের কথা। বর্তমানে গ্রামীণ রাস্তার অবস্থা কেমন, তা সব থেকে বেশি মালুম হচ্ছে ‘দিদির দূত’দের। তাঁদের কর্মসূচি থেকে পরিষ্কার, সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকা, পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ আছে। কিন্তু, সব চেয়ে বেশি ক্ষোভ সম্ভবত গ্রামীণ বেহাল রাস্তা নিয়ে। বিধায়ক-সাংসদ, নেতাদের ঘিরে ধরে রাস্তা ঠিক করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। বেশ কিছু জায়গায় ‘দিদির দূতেদের’ ঘেরাওয়ের মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। সূত্রের খবর, গ্রামে রাস্তা নিয়েই মানুষের চাহিদা সব থেকে বেশি বলে একটি সমীক্ষাতেও ধরা পড়েছে।
তৃণমূলের অন্দরেরও খবর, নতুন রাস্তাঘাট করা বা নিদেন পক্ষে রাস্তা ঠিকমতো সারানো না-গেলে ক্ষোভ আরও বাড়বে। সেটা আঁচ করেই গত মাসের প্রথম দিকে গ্রামীণ সব রাস্তার কাজ (রাস্তা সংস্কার ও নতুন রাস্তা) করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্নের নির্দেশ, প্রত্যেক জেলার খারাপ রাস্তার তালিকা জেলাশাসকদের কাছে যাওয়া মাত্র তাঁদের দরপত্র ডেকে সেই কাজ শুরু করে দিতে হবে। সেই কাজ শুরুও হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলাশাসক মানছেন, গ্রামীণ রাস্তার কাজ অবিলম্বে শুরু করা জরুরি।
বীরভূম প্রশাসন সূত্রে খবর, ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে জেলার ১৯টি ব্লকে ২৩৫টি রাস্তা তৈরি ও সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই দরপত্র ডাকা হয়ে গিয়েছে। আনুমানিক ব্যয় ৮০ কোটি টাকা। পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তার হাল নিয়ে তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। খণ্ডঘোষের দইচাঁদা, রায়নার মিরপুর, মঙ্গলকোটের কাশেমনগর, আউশগ্রামের বড়াচৌমাথা, গলসির গোহগ্রামের মতো নানা জায়গায় রাস্তার অবস্থা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় ৪৩১টি রাস্তা সংস্কার ও নতুন রাস্তা তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। সে জন্য ১৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও দিদির দূতেরা সব থেকে বেশি ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বেহাল রাস্তা নিয়ে। জেলায় বেহাল রাস্তার সংখ্যা ঠিক কত, তা জানাতে পারেনি প্রশাসন। তবে ক্ষোভের কথা আঁচ করে জেলায় শীঘ্রই ৪২৪টি পিচের ও ঢালাই রাস্তার সংস্কার এবং নতুন রাস্তার কাজ শুরু হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের খবর, পঞ্চায়েত এলাকায় ১২২০টি রাস্তা খারাপ। এর মধ্যে ১২০০টি রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ৭০০টি রাস্তার কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
একই ভাবে নদিয়া জেলার গ্রামীণ এলাকায় নতুন করে আরও প্রায় ৫৩৩ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরি এবং সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। হুগলি জেলার গ্রামগুলিতে নতুন রাস্তা এবং রাস্তা সংস্কারের দাবি বিস্তর (প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার)। ভোটের মুখে পথশ্রী প্রকল্পে ৫৬১টি (ব্লক প্রশাসনগুলি করবে ৪২৩টি এবং জেলা পরিষদ ১৩৮টি) রাস্তা সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তড়িঘড়ি রাস্তা সারাইয়ের এই প্রচেষ্টা কি ভোটে ফল দেবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy