Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bogtui Murder

Bogtui Incident: বালি-পাথর ও তার বখরা! অবস্থানের জন্যই তোলা আদায়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে বগটুই

এলাকার অনেকে জানাচ্ছেন, ফুলে ফেঁপে উঠা কারবারের একক কর্তৃত্বে ভাগ বসাতেই বিরোধী-পক্ষ তৈরি হয়েছিল ভাদুর। ভাদু-খুনে এখনও পর্যন্ত যে চার জন ধরা পড়েছে, তারা সকলেই তার বিরুদ্ধ-গোষ্ঠীর। ঘটনাচক্রে, ২১ মার্চ রাতে ওই ভাদুকে ঠিক যেখানে বোমা মেরে খুন করা হয়, সেই জায়গাটাও জাতীয় সড়কের বগটুই মোড়!

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ ০৮:৫৮
Share: Save:

গ্রামে কোনও বালি ঘাট নেই। নেই পাথর খাদানও। কিন্তু, পানাগড়-মোরগ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধার ঘেঁষা বগটুই তার অবস্থানের জোরেই বালি-পাথর কারবারের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে। বগটুইয়ের এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়েই তার উপর দিয়ে যাওয়া বালি-পাথরের ট্রাক থেকে টাকা আদায়ের কারবার চলত বলেও জানাচ্ছেন স্থানীয়দের একাংশ।

সেই বগটুইয়েরই বাসিন্দা, তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখের খুন হওয়ার এবং তার বদলায় গণহত্যার পিছনে এই বালি-পাথরের টাকার ‘বখরার’ ভূমিকা রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে সিবিআই-ও। ওই এলাকায় জাতীয় সড়ক দিয়ে চলা বালি-পাথরের লরির টাকার ভাগ ভাদুর কাছে যেত বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। ভাদুর বাবা মারফত শেখ নিজেও প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, ‘‘বখরার জন্যই খুন করা হয়েছে ভাদুকে। যারা বখরা পায়নি, তারাই ওকে মেরেছে!’’

রামপুরহাট শহর লাগোয়া বগটুই গ্রামের পাশ দিয়েই গিয়েছে জাতীয় সড়ক। বীরভূম থেকে বগটুই মোড় হয়ে উত্তরবঙ্গ বা কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অংশে পাথর-বালি পৌঁছে দেওয়ার মূল রাস্তা এই জাতীয় সড়কই। এই করিডর ছুঁয়ে থাকা বগটুই মোড়ের উত্তর দিকে গেলে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ দিকে দক্ষিণবঙ্গ। তাই বগটুই এড়িয়ে জেলা থেকে বালি-পাথর নিয়ে যাওয়া যায় না। তার সুবাদেই বালি-পাথরের ট্রাক থেকে টাকা তোলা হয় বলে অভিযোগ।

বীরভূমের পাঁচামি, শালবাদরা, নলহাটি, রামপুরহাট ও রাজগ্রামে রয়েছে বিশাল পাথর শিল্পাঞ্চল। কাগজে কলমে ‘অবৈধ’ সেই সব পাথর খাদান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পাথর বোঝাই লরি-ডাম্পার রাজ্যের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়। পাঁচামি, শালবাদরা বা ডেউচার হরিণশিঙা থেকে যে পাথরের গাড়িগুলি উত্তরবঙ্গে অথবা বহরমপুর হয়ে কলকাতা যায়, সেগুলিকে বগটুই মোড় ছুঁয়েই যেতে হয়। সংখ্যায় কম হলেও উল্টো দিকের রাজগ্রাম, নলহাটির পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে পাথর বোঝাই লরি দক্ষিণবঙ্গের দিকে এলেও বগটুই মোড় ছুঁয়েই যেতে হবে।

একই পরিস্থিতি বালির ক্ষেত্রে। খয়রাশোল, দুবরাজপুর, সিউড়ি ও মহম্মদবাজারে থাকা অজয় নদ এবং ময়ূরাক্ষীর বিভিন্ন বালিঘাট থেকে বালি বোঝাই শয়ে শয়ে ট্রাকও উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্যও এই পথ নেয়। ব্রাহ্মণী নদীর বৈধরা জলাধারের ও-পার থেকে এবং দুমকা রোড ধরে রামপুরহাট শহর হয়ে বালি বোঝাই ট্রাক্টরগুলি বিভিন্ন জায়গায় যায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভাদু শেখ এই বালি-পাথরের ট্রাকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন। বালি ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, বৈধ বালিঘাট লিজ নেওয়া থাকলেও
ভাদুর দাপটে সেই ঘাট চালানো সম্ভব ছিল না। টাকার বিনিময়ে বকলমে সেগুলি ভাদুই চালাতেন বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গগামী একটি গাড়িও ছাড় পেত না বলেও অভিযোগ।

এলাকার অনেকে জানাচ্ছেন, ফুলে ফেঁপে উঠা কারবারের একক কর্তৃত্বে ভাগ বসাতেই বিরোধী-পক্ষ তৈরি হয়েছিল ভাদুর। ভাদু-খুনে এখনও পর্যন্ত যে চার জন ধরা পড়েছে, তারা সকলেই তার বিরুদ্ধ-গোষ্ঠীর। ঘটনাচক্রে, ২১ মার্চ রাতে ওই ভাদুকে ঠিক যেখানে বোমা মেরে খুন করা হয়, সেই জায়গাটাও জাতীয় সড়কের বগটুই মোড়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bogtui Murder Rampurhat Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE