নৈরাজ্যের অবসান এবং রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরানোর দাবিতে শুক্রবার ফের কলকাতার পথে নামলেন বিশিষ্টরা। তাঁদের ডাকে শহরের রাজপথে ভিড় জমল ভালই।
স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক বিশৃঙ্খলা, নাগাড়ে খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ‘অরাজনৈতিক’ মিছিলে নীরব প্রতিবাদ জানালেন নেতা, অভিনেতা থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক-সহ সমাজের নানা স্তরের ব্যক্তিত্ব। তৃণমূল সরকারের দেওয়া মিথ্যে মামলা, তকমায় ‘আক্রান্ত’রাও ছিলেন মিছিলে। মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিলের অন্যতম আহ্বায়ক বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, অরুণাভ ঘোষ, বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম, প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়দের পাশেই পা মেলালেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। গায়ে শেকল বেঁধে কয়েদি সাজে খালি পায়ে রূপাদের সঙ্গেই পথ হাঁটলেন বিনপুরের শিলাদিত্য চৌধুরী। বেলপাহাড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় ‘মাওবাদী’ বলে জেলবন্দি করা হয়েছিল যাঁকে! জামিনে মুক্ত সেই শিলাদিত্যের পিছনে এ দিন ছিল তাক করা বন্দুক হাতে উদির্ধারী ‘নকল’ পুলিশ! মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ ভাবেই ‘নাটকীয়’ভাবে প্রতিবাদ জানালেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘মাওবাদী’ তকমা পাওয়া কামদুনির দুই প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী ও টুম্পা কয়ালও ছিলেন মিছিলে।
কামদুনিতে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পরে বিশিষ্টদের এই ধরনের মিছিল শেষ বার হয়েছিল শহরে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের মঞ্চ ‘নাগরিক সমাজ’-এর উদ্যোগে এ দিনের অরাজনৈতিক মৌনী মিছিলের বিপুল জনসমাগমকে হালিম বলেন, ‘‘গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিতে প্রত্যেককে জোট বেঁধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে হবে।’’ কলেজ স্কোয়্যার থেকে বেরনো মিছিলের মুখ যখন এস এন ব্যানার্জি রোডে, মিছিলের অন্য প্রান্ত তখনও কলেজ স্কোয়্যার ছেড়ে বেরোতে পারেনি। বর্তমান তৃণমূল সরকারকে উচ্ছেদের ডাক দেন অরুণাভবাবু। বিকাশবাবুও মিছিলের শুরুতে বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদের খাঁড়াকে সরাতেই সব আক্রান্ত মানুষের এই মিছিল।’’
রাজ্যের মানুষ যাতে স্বাধীন মত নিয়ে বাঁচতে পারেন, সেই আর্জি নিয়েই রূপার বক্তব্য, ‘‘যে মানুষ যে রাজনৈতিক দলে বিশ্বাস করেন, তিনি তাঁর নিজের মতো করেই যেন সেই দলের কাজ করতে পারেন, সেটাই চাই। কোনও রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে যেন মানুষকে বাঁচতে না হয়। রাজ্যে একটু শান্তি চাই।’’ ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে অভিযুক্ত অম্বিকেশ মহাপাত্র, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে নিগৃহীত শিক্ষক দিব্যেন্দু পাল, চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অনিন্দিতা সর্বাধিকারীর পাশাপাশি বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সুজিত বসু, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবিমল সেনও মিছিলে সামিল হয়েছিলেন। তবে মিছিলে আলাদা করে কাউকে ‘বিশিষ্ট’ বলতে নারাজ আয়োজকেরা। মিছিলের শরিক, সমর্থক সকলকেই বিশিষ্টের সারিতে এনে ‘নাগরিক সমাজে’র অন্যতম আহ্বায়ক চন্দন সেনের ঘোষণা, ‘‘আমাদের এই নীরব প্রতিবাদ সরকার না শুনলে আগামী দিনে সরব প্রতিবাদ জানাব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy