কুণাল ঘোষের বাড়িতে বৈঠক সেরে বেরিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
মুকুল রায় দল ছাড়ার পরের দিনই বিজেপি-র উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে বৈঠকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কুণালের উত্তর কলকাতার বাসভবনে এই বৈঠক হয়। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ কুণালের বাড়িতে যান রাজীব। সেখানেই দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে কুণাল বলেন, ‘‘মানিকতলায় রাজীব তাঁর এক আত্মীয়কে দেখতে এসেছিলেন। সেখান থেকে আমার বাড়িতে আসেন। সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে।’’ অন্য দিকে বৈঠক শেষে রাজীব দাবি করেন, এক আত্মীয় অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। কুণাল পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ফোন করে চলে আসেন তিনি। কোনও রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। কিন্তু নেটমাধ্যমে তাঁর যে পোস্টকে ঘিরে দলবদলের জল্পনা, সেটাই ফের উস্কে দিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক রাজীব। তিনি বলেন, ‘‘এই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা একটা সরকারের একমাস হয়েছে। সেখানে যদি কেউ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চায় বা গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতা দেখাতে চায়বা যদি সত্যিকারের ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করতে চায় তবে আমি সেই দলে থেকেও বিরোধিতা করব। আগামী দিনেও বিরোধী থাকব।’’
এর আগে নিজের ফেসবুক, টুইটারে এই কথাই লিখেছিলেন রাজীব। তা থেকেই ইঙ্গিত মিলছিল যে, শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের বিরোধী তিনি। কারণ, শুভেন্দু সেই সময় রাজ্যে ৩৫৬ ধারা কার্যকরের মতো পরিস্থিতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এখনও রাজীব সেই অবস্থানেই রয়েছেন বলে জানিয়ে দিলেন।
গত ৯ জুন নেটমাধ্যমে তাঁর একটি পোস্টকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘সমালোচনা তো অনেক হল... মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে, কথায় কথায় দিল্লি, আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভাল ভাবে নেবে না।’ সঙ্গে তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘আমাদের সকলের উচিত, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, ‘কোভিড’ ও ‘ইয়াস’ এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা।’ সেই থেকেই জল্পনার সূত্রপাত। শুক্রবার সপুত্র মুকুল দলবদল করতেই ফের রাজীব তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন বলেই খবর। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছাড়াই কুণালের বাড়িতে আসেন রাজীব। বৈঠকের কথা গোপন রাখতেই সম্ভবত কাউকে না জানিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু, কুণালের বাড়িতে রাজীব আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে যায়।
বৈঠক নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘রাজীব একজন ভ্যালুলেস নেতা। আমাদের লড়াই করার কথা। আমরা লড়াই করে যাব। আর আমরা লড়াই করে বুঝিয়ে দিয়েছি, ও ভ্যালুলেস লিডার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী গত কাল বলেই দিয়েছেন, ভোটের আগে যাঁরা গদ্দারি করেছেন, তাঁদের দলে নেওয়া হবে না। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ প্রসঙ্গত, ২ মে ভোটে ডোমজুড় কেন্দ্রে ৪০ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ ঘোষের কাছে পরাজিত হন রাজীব। তার পর থেকেই বিজেপি-র কোনও কর্মসূচিতে আর দেখা যায়নি তাঁকে।
তার পর তাঁর নেটমাধ্যমে পোস্ট দেখেই রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে আগ্রহী তিনি। উল্লেখ্য, শনিবার সকালেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে যাতে দলে না ফেরানো হয়, সেই দাবিতে পোস্টার পড়েছে ডোমজুড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy