Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
বিষ স্মৃতি নয়/৩

প্রাণরক্ষায় ভাঙড়ে ভরসা বৃষ্টি, কেনা জলও

প্রকল্প-পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু আর্সেনিক দূষণ কি ঠেকানো গিয়েছে? কেমন আছেন আক্রান্তেরা?এতদিন পাশের পাড়া থেকে জল এনে রান্না-খাওয়া চলছিল।এখন বর্ষা। তাই বৃষ্টির জল ধরে ব্যবহারের উপায় বের করেছে ওই কৃষক পরিবার। বাড়ির কাছে আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ রয়েছে। কিন্তু সকাল-সন্ধে সেখানে ভিড় লেগে থাকে। নীলরতনের অভিযোগ, বাড়ির নলকূপ ‘সিল’ করা হল। কিন্তু বিকল্প পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি। নীলরতনের রাস্তা ধরেছেন আরও কয়েক জন। হাতিশালার রহমান গাজি আবার জল কিনে খাচ্ছেন।

সদ্ব্যবহার: বৃষ্টির জলকে এই ভাবে ধরে রেখে কাজে লাগানো হচ্ছে। ভাঙড়-১ ব্লকে। ছবি: সামসুল হুদা

সদ্ব্যবহার: বৃষ্টির জলকে এই ভাবে ধরে রেখে কাজে লাগানো হচ্ছে। ভাঙড়-১ ব্লকে। ছবি: সামসুল হুদা

শুভাশিস ঘটক
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৫
Share: Save:

অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। বাড়ির উঠোনে গর্ত খুঁড়ে উপরে বিছানো হয়েছে প্লাস্টিকের চাদর। সেই ‘চৌবাচ্চা’য় জমছে বৃষ্টির জল।

প্রাণ বাঁচাতে বৃষ্টির জলকে এ ভাবেই ধরে রাখছেন ভাঙড়-১ ব্লকের প্রাণগঞ্জ পঞ্চায়তের দক্ষিণ কালিকাপুরের নীলরতন নস্কর। বাড়িতে নলকূপ নেই? নীলরতন দেখান, ‘‘ওই যে। বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক উঠছে। পঞ্চায়েত থেকে নলকূপ সিল করে দিয়েছে।’’

এতদিন পাশের পাড়া থেকে জল এনে রান্না-খাওয়া চলছিল।এখন বর্ষা। তাই বৃষ্টির জল ধরে ব্যবহারের উপায় বের করেছে ওই কৃষক পরিবার। বাড়ির কাছে আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ রয়েছে। কিন্তু সকাল-সন্ধে সেখানে ভিড় লেগে থাকে। নীলরতনের অভিযোগ, বাড়ির নলকূপ ‘সিল’ করা হল। কিন্তু বিকল্প পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি। নীলরতনের রাস্তা ধরেছেন আরও কয়েক জন। হাতিশালার রহমান গাজি আবার জল কিনে খাচ্ছেন।

বছর তিনেক আগে জটিল পেটের রোগে আক্রান্ত হন নীলরতন, তাঁর স্ত্রী স্বপ্না, ছেলে স্বপ্ননীল ও মেয়ে নলিনী। বহু চিকিৎসক দেখিয়েও লাভ হয়নি। নীলরতন বলেন, ‘‘পেটের রোগে ভুগতে ভুগতে হাতের তালুতে কালো দাগ, চুলকানি শুরু হল। বছর খানেক আগে মূত্র পরীক্ষায় ধরা পড়ল আর্সেনিক।’’

কোথা থেকে এল আর্সেনিক? নীলরতনের কথা জানতে পেরে প্রশাসন তাঁর বাড়ির নলকূপের জল পরীক্ষা করে। দেখা যায়, ওই নলকূপই বিপজ্জনক মাত্রায় তুলে আনছে ওই বিষ। এরপরে ভাঙড়ের দু’টি ব্লকের বিভিন্ন নলকূপের জলও পরীক্ষা করা হয়। চিন্তা বাড়ে প্রশাসনের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড়-১ ব্লকের প্রাণগঞ্জ, সাকশর, জাগুলগাছি, চন্দেশ্বর-১ এবং দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের নলকূপের জলে বিপজ্জনক মাত্রায় (প্রতি লিটারে ০.০১ মিলিগ্রামের বেশি) আর্সেনিক রয়েছে। ভাঙড়-২ ব্লকের শানপুকুর, বেঁওতা-১ ও ২, ভোগালি-১, ভগবানপুর, চালতাবেড়িয়া, পোলেরহাট-১ ও ২ পঞ্চায়েতে কোথাও ০.০৮ তো কোথাও ০.১৪ মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সম্প্রতি চন্দনেশ্বরে কয়েকটি নলকূপের প্রতি লিটার জলেও ০.১৪ মিলিগ্রাম আর্সেনিকও ধরা পড়েছে। বিপজ্জনক নলকূপগুলি ‘সিল’ করা হয়েছে। এই নিয়ে গত দু’বছরে হাজার দেড়েক নলকূপ বন্ধ করা হল।’’ ভাঙড়-১ ব্লকের বিডিও সৌমেন পাত্র জানান, ওই সব এলাকায় বেশ কয়েকটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। পাইপ লাইনের জলের ব্যবস্থার প্রস্তাবও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সম্প্রতি পৈলানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা পরিষদ সদস্য কাইজার আহমেদ আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থার আবেদন জানান। তার পরেও কিছু হয়নি বলে অভিযোগ। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানান, ভাঙড়ের দু’টি ব্লকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের বুস্টিং পাম্পিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

ততদিন? আর্সেনিকমুক্ত নলকূপে ভিড় চলবেই।

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE