পশ্চিমবঙ্গে জোটের বিষয়ে রণকৌশল ঠিক করার আগে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের মতামতকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। রাহুল গাঁধী ঘনিষ্ঠ মহলে আজ এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, প্রদেশ কংগ্রেস নেতারাই রাজ্যের বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সব থেকে বেশি ওয়াকিবহাল। তাই তাঁদের মতামত ও উদ্বেগের বিষয়গুলি মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হাইকম্যান্ড উপর থেকে কিছু চাপিয়ে দেবে না।
পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রথমেই হাইকম্যান্ডকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও ভাবেই জোট সম্ভব নয়। বামেদের সঙ্গে জোট না করলে দলের ভোটের একাংশ সিপিএমের দিকে চলে পারে বলেও প্রদেশ নেতারা দলের শীর্ষনেতৃত্বের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তার পরেও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে হাইকম্যান্ড তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতে পারেন, এমন আশঙ্কাও তাঁদের রয়েছে।
সনিয়া গাঁধীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গত মাসেই দশ জনপথে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া-রাহুলের পক্ষেও দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তার পরে জোট-পন্থী প্রদেশ নেতাদের সেই আশঙ্কা আরও বেড়েছিল।
আজ রাহুল ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। মমতা কার্যত ঘরের মানুষের মতোই। কিন্তু সমস্যা হল, মমতা পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে চান। সে বিষয়ে তিনি অবহিত। রাহুলের এই বক্তব্য শুনে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একটা বড় অংশ এবং নিচুতলার কর্মীরা স্বাভাবিক ভাবেই আশ্বস্ত বোধ করবেন। কারণ তাঁরা বারবার এই কথাটাই সনিয়া-রাহুলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
রাহুলের ঘনিষ্ঠ মহলের যুক্তি, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যেও ডিএমকে-র সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হবে কি না, সে বিষয়ে রাজ্যের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন রাহুল। এআইসিসি-র অন্য নেতা বা রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কী বলছেন, তা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব পাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে ঝাড়খণ্ডের ভোটের সময়ও এআইসিসি-র নেতারা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সঙ্গে জোটের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু রাজ্যের নেতাদের কথা শুনেই ঝাড়খণ্ডে একলা চলো-র নীতি নেন রাহুল। তাতে কংগ্রেসের ফল খারাপ হলেও তা মেনে নিয়েছেন তিনি।
বামেদের সঙ্গে জোট না হলে প্রদেশ নেতাদের সামনে বিকল্প হল, একলা লড়া। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের আসন তলানিতে পৌঁছনোর আশঙ্কা রয়েছে। কংগ্রেসের ভোট বামেদের দিকে চলে যেতে পারে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দু’দিন আগেই সিঙ্গুরে কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেছেন, ‘এই লড়াইয়ে আপনারা কোনদিকে, তা ঠিক করুন।’ প্রদেশ নেতাদের যুক্তি, জোট না হলে বামেরা বলার সুযোগ পেয়ে যাবে যে কংগ্রেস তৃণমূলকে হঠাতে তেমন আগ্রহী নয়।
দিল্লিতে কংগ্রেসের একাংশ অবশ্য তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষে। তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে। তাঁদের যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলকে পাশে দরকার হতে পারে। কিন্তু প্রদেশ নেতাদের যুক্তি, নিচু তলায় বাম ও কংগ্রেস নেতা-সমর্থকরা চাইছেন জোট হোক। মানুষের মনের জোট হয়েই গিয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস তাকেই আন্তরিক ভাবে সমর্থন করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy