Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

‘দীক্ষা দেওয়ার নাম করে শিষ্যাদের ধর্ষণ’! ‘ইউটিউব বাবা’র শাস্তি চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ তরুণী

শুক্রবার হাই কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, পুলিশ কেন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি? বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য পুলিশের কাছে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট চেয়েছে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৪৪
Share: Save:

সমাজমাধ্যমে স্বঘোষিত এক ‘বাবা’র ভিডিয়ো দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ২৯ বছরের তরুণী। নিজের মায়ের সঙ্গে ওই ‘গুরু’র কাছে গিয়েছিলেন পরিচয় করতে। অভিযোগ, তরুণীর ‘গুরুভক্তি’র সুযোগ নিয়ে তাঁকে ‘ধর্ষণ’ করেন স্বঘোষিত ওই ‘বাবা’। নির্যাতিতার দাবি, এর আগেও বহু তরুণীকে ওই ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যৌন সংসর্গ করতে বাধ্য করেছেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি বলে দাবি তাঁর। উল্টে অভিযুক্ত বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এর পরেই বিচার চেয়ে কোর্টের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। শুক্রবার হাই কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, পুলিশ কেন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি? বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য পুলিশের কাছে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট চেয়েছে। দুর্গাপুজোর পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

ওই তরুণীর দাবি, তিনি ছোটবেলা থেকে আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। সমাজমাধ্যমে অনেক সাধু-সন্ত, শাস্ত্রীর ভিডিয়ো দেখেন তিনি। এক দিন তিনি সমাজমাধ্যমে অভিযুক্ত ‘বাবা’র বক্তব্য শোনেন। সেই বক্তব্য শুনে ওই ব্যক্তিকে তাঁর ভাল লেগে যায়। তার পরে ওই ‘বাবা’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। থানায় তরুণীর দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা গিয়েছে, যোগাযোগ করার পর ওই ‘গুরু’ তাঁকে সশরীরে হাজির হতে বলেন। ২০২৩ সালের মে মাসে বীরভূমের সিউড়ির রাজনগরে ওই ‘গুরু’র ডেরায় মাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তরুণী। অভিযোগ, সেই সময় ‘গুরু’র স্ত্রী খারাপ ব্যবহার করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে। তাই সিউড়ি থেকে ফিরে এসে ওই ‘গুরু’র সঙ্গে তরুণী যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সমাজমাধ্যমে ওই ‘গুরু’র প্রচুর ভিডিয়ো রয়েছে। সে কারণে ‘ভক্ত’দের অনেকে তাঁকে ‘ইউটিউব বাবা’ বলে ডাকেন।

তরুণীর অভিযোগের সূত্রেই জানা গিয়েছে, তিনি যোগাযোগ বন্ধ করলেও ওই ‘গুরু’ তাঁদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তরুণীকে নিজের আশ্রমে রাখতে চান। তরুণীর বাকি জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও জানান বলে দাবি। ক্রমে অভিযুক্তের সঙ্গে তরুণীর যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। অভিযোগ, ২০২৩ সালের জুন মাসে দীক্ষা দেওয়ার নাম করে ওই তরুণীকে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ডেকে পাঠান ‘গুরু’। তাঁকে বিশ্বাস করে সব নির্দেশ মেনে নেন ওই তরুণী। অভিযোগ, ওই তরুণীকে তাঁর সঙ্গে যৌন সংসর্গে বাধ্য করেন ‘গুরু’। তার কয়েক দিন পরে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের একটি জায়গায় সহবাস করেন তাঁরা। তরুণীর অভিযোগ, এর পর থেকে তাঁকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন ‘গুরু’। তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন। এর ফলে মামলাকারী তরুণী শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২১ দিন ধরে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। প্লাস্টিক সার্জারিও করা হয় বলেও খবর।

এর পরে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। তাঁর দাবি, অভিযুক্তের আদি বাড়ি ছিল উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনে। সমাজমাধ্যম থেকে অভিযুক্তের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছেন তিনি। পুলিশের কাছে ওই তরুণী দাবি করেছেন, এর আগে অনেক মহিলাকে যৌন সংসর্গে বাধ্য করেছেন ওই গুরু। কয়েক জন নির্যাতিতা গর্ভপাত করাতেও বাধ্য হয়েছেন। পঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশের মথুরাতেও তাঁর বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা রয়েছে। বৃন্দাবনে পকসো আইনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে দাবি ওই তরুণীর। থানায় অভিযোগ করার পর বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চান অভিযুক্ত। নির্যাতিতা তরুণী যদিও সেই দাবি মানেননি। তার পরেই শুক্রবার মামলাটি কলকাতা হাই কোর্টে উঠেছে। বিচারপতি ভট্টাচার্য পুলিশের কাছে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট চেয়েছেন। প্রশ্ন করেছেন, এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়নি। দুর্গাপুজোর পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Godman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy