তাণ্ডবের পরে পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থা। ছবি: সমীরণ দাস।
বছর দেড়েক আগে উত্তর দিনাজপুরে এক নাবালিকার মৃত্যুর পরে স্থানীয় থানায় গিয়ে চড়াও হয় ক্ষুব্ধ জনতা। প্রাণ বাঁচাতে পাশের বাড়িতে গিয়ে এক কোণে লুকিয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। সম্প্রতি কলকাতার বাঁশদ্রোণীতে একটি স্কুলপড়ুয়া ছাত্রের মৃত্যুর পরেও স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়ে পুলিশ। এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বালিকার মৃত্যুর পরেও একই ভাবে পুলিশের উপরে আছড়ে পড়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ। ফাঁড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মোটরবাইক, সাইকেল। প্রাণ বাঁচাতে পুলিশকর্মীরা কার্যত পালিয়ে যান।
শনিবার এমন রোষের পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কর্তব্য নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল। পুলিশ তৎপর হলে ওই বালিকাকে বাঁচানো যেত, এমন দাবিও উঠেছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার পরে ফাঁড়িতে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ফাঁড়ির পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। থানায় যেতে বলে দেয়।
গ্রামবাসীর দাবি, স্থানীয় একটি দোকানে সিসি ক্যামেরা ছিল। সেই ফুটেজ চেয়ে মেলেনি। পুলিশ তৎপর হয়ে ফুটেজ জোগাড় করলে ধৃতকে আগেই শনাক্ত করা যেত। সে ক্ষেত্রে হয়তো মেয়েটির প্রাণ বাঁচানো যেত!
তবে, শুধুমাত্র ওই বালিকার খুনের ঘটনাতেই ফাঁড়িতে জনরোষ, এমন নয়। এখানকার পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ঘটনায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ জমছিল দীর্ঘদিন ধরেই। এ দিন তারই বহিঃপ্রকাশ হল, বলছেন অনেকে। ওই গ্রামের এক প্রবীণের খেদ, “ফাঁড়িটা আছে নামেই। গ্রামবাসীর কাজে লাগে না। চুরি-ডাকাতি হলেও পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায় না।” আর এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, “সম্প্রতি মোবাইল চুরির অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। কাজ তো হয়ইনি, উল্টে পুলিশ টাকা চেয়েছিল।” তাঁর প্রশ্ন, “আমাদের মেয়েটার বেলায় একটু আগে তদন্ত করতে পারল না ওরা!”
গ্রামবাসী জানান, নিরাপত্তার কথা ভেবে থানা থেকে দূরবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে আলাদা এই ফাঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়। সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় দু’টি এ রকম ফাঁড়ি রয়েছে। আলাদা ভবন, এক এসআই-সহ চার পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ সব ব্যবস্থাই রয়েছে ফাঁড়িতে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হয় কই, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
দিন কয়েক আগে একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই থানা এলাকারই দ্বিতীয় ফাঁড়িটিতেও পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সেখানেও পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল।
ফাঁড়ির ভূমিকায় বিরক্ত সরকারি আধিকারিকদের একাংশও। স্থানীয় এক স্কুল পরিদর্শক বলেন, “এখানকার কোনও স্কুলে কোনও সমস্যা হলে ফাঁড়িতে গিয়ে কাজই হয় না। এ ভাবে ফাঁড়ি রাখার দরকার কী?”
জেলার পুলিশকর্তারা এই সব অভিযোগ মানেননি। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালির দাবি, “পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়। ওই বালিকার পরিবারের সদস্যেরা যাওয়ামাত্রই ফাঁড়ির পুলিশ জেনারেল ডায়েরি করে তদন্ত শুরু করে। পরে থানায় অভিযোগ হয়। বালিকাকে খোঁজার পর্বে পুরো সময়টাই ফাঁড়ির এক পুলিশকর্মী ওই পরিবারের সঙ্গে ছিলেন। ফাঁড়ির তরফে কোনও গাফিলতি হয়নি।”
তা হলে জনরোষ কি অকারণে?
ওই পুলিশকর্তার জবাব, “কী কারণে জনরোষ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy