সদলবলে। রামপুরহাট হাইস্কুল মাঠে প্রশাসনিক জনসভায় বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।
দু’দিন আগেই তিনি শহরে এসে দলের একটি সরকারি কর্মী সংগঠনের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। একই দিনে ছুটেছিলেন এলাকারই একটি স্বাস্থ্য শিবিরেও। অথচ একই শহরে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর জনসভাতেও গরহাজির রইলেন বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়!
শুধু শতাব্দীই নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার ধার দিয়েও পা মাড়াতে দেখা গেল না জেলার আর এক সাংসদ অনুপম হাজরাকেও। ছিলেন না সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষও। দলের ‘গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে’র জেরে প্রকাশ্যে নানা মন্তব্য করে শতাব্দী অতীতে নানা বিতর্কের মুখে পড়েছেন। আর পরবর্তী দু’জন অতি সম্প্রতি দলীয় নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন বারবার। এমনকী, দেখা যায়নি প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরীকেও। জেলার এই চার গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধির দলনেত্রীর প্রশাসনিক সভায় এমন অনুপস্থিতি নিয়ে তাই শাসক দলেরই অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা।
অথচ মঙ্গলবার রামপুরহাট হাইস্কুল মাঠের সভায় মঞ্চের সামনের সারিতে একপ্রান্তে ছিলেন এসআরডিএ চেয়্যারম্যান তথা দলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, অন্যপ্রান্তে মুর্শিদাবাদের চাঁদ মহম্মদ। মাঝে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিংহ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। এমনকী, দেখা গিয়েছে লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া হাঁসনের কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মালকেও। কিন্তু, জেলার দুই সাংসদ এবং বিধায়কের অনুপস্থিতি তাই দলের নিচুতলার কর্মীদের চোখে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আরও তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হল, প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় ওই চার জনের অনুপস্থিতির প্রসঙ্গ দূর, মমতা তাঁদের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি।
আসেননি কেন?
ফোনে স্বপনবাবু দাবি করলেন, “মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্ঠে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে এসেছি। অনেক দিন আগেই এখানে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম। তাই দিদির সভায় যেতে পারিনি। তবে, জেলায় থাকলে নিশ্চয় যেতাম।” নুরে আলম চৌধুরী আবার তাঁর শরীর খারাপ বলে জানিয়ে ফোন কেটে দিয়েছেন। অন্য দিকে, এ দিন দুপুর থেকেই শতাব্দীর ফোন বন্ধ ছিল। বহু চেষ্টার পরে তাঁর স্বামী মৃগাঙ্ক রায়ের সঙ্গে যোগোযাগ করা গেলে তিনি বলেন, “শতাব্দী দিল্লিতে লোকসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি জরুরি বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছেন। তাই সভায় যেতে পারেননি।” অন্য দিকে, অনুপমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
ঘটনা হল, সিউড়ি পুরসভায় দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভইযোগ তুলে স্বপনবাবু সরব হয়েছেন। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন। তার পর থেকেই অনুব্রতর সঙ্গে তাঁর বিরোধ প্রকট হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের সামনে দু’জনকে দু’জনের বিরুদ্ধে তোপ দাগতেও শোনা গিয়েছে। আবার এলাকায় স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে না পারার নালিশ তুলেছেন অনুপম। এ নিয়ে ফেসবুকে এবং সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে দলের বিড়ম্বনাও বাড়িয়েছেন। সরাসরি অনুপমের বিরুদ্ধে কিছু না বললেও ওই ঘটনার পর থেকেই বোলপুরের সাংসদ দলের জেলা সভাপতি বিরাগভাজন হয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষে মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়ার পর থেকেই দলের মিটিং-মিছিলে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না মুরারইয়ের তৃণমূল বিধায়ক নুরে আলম চৌধুরীকে। ইদানিং দলকে তিনি এড়িয়েই চলছেন বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। এমন কয়েক জনের অনুপস্থিতি তাই জেলার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা বাড়িয়েছে।
এ দিকে, স্বপনকান্তি, নুরে আলম সকলেরই মঞ্চে উপস্থিত থাকার তালিকায় নাম ছিল। তার পরেও তাঁদের দেখা যায়নি। দলীয় সূত্রের খবর, সভা শেষ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী শতাব্দী রায়ের ব্যাপারে খোঁজও নিয়েছেন। শতাব্দীকে আজ, বুধবার বনগাঁর সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে জানাতেও বলেছেন। অন্য দিকে, অনুব্রতর দাবি, “অনুপম হাজরা এবং শতাব্দী রায় কী একটা স্ট্যান্ডিং কমিটির কাজে ব্যস্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। সেই জন্যই আসতে পারেননি। নুরে আলম অসুস্থ থাকায় আসেননি।” আর আশিসবাবু বলছেন, “ওঁরা আসতে না পারার কথা দলীয় নেতৃত্বকে আগেই জানিয়েছিলেন। সুতরাং এ নিয়ে জলঘোলা করার কিছু নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy