সভার ফাঁকে দলের এক কর্মীর চোখ লাল দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন প্রার্থী তথা চক্ষু চিকিৎসক মৃগাঙ্ক মাহাতো। বৃহস্পতিবার মানবাজারের ধানাড়া পঞ্চায়েতের পিড়রগড়িয়া গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
সভায় বক্তব্য রাখছিলেন বিধায়ক। হঠাৎ এক যুবক বলে উঠলেন, “ও সব কথা পরে হবে। আমাদের গ্রামে ঢোকার রাস্তা কবে তৈরি হবে, সেই কথা আগে বলুন।”
কর্মিসভায় এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে বলে নেতাদের কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। এখানেই শেষ নয়, মানবাজারের ধানাড়া পঞ্চায়েতের পিড়রগড়িয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার ওই কর্মিসভায় তৃণমূল জেলা নেতৃত্বকে স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কর্মীদের অসন্তোষের কথাও শুনতে হল। লোকসভা ভোটের এক মাস আগে কর্মীদের একাংশের এই মনোভাব দেখে মোটেই স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পারলেন না তৃণমূলের জেলা নেতারা।
পিড়রগড়িয়া গ্রামের মুখেই বিশাল পুকুর। পাশেই শিবমন্দির। বিরাট বটগাছের ছায়ায় প্রায় ৮০ জন কর্মীর উপস্থিতিতে এ দিন দুপুরে তৃণমূলের কর্মিসভা চলছিল। মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু তিন বছরে রাজ্যের উন্নতির ফিরিস্তি শোনাচ্ছিলেন। তার বক্তব্যের কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাল কাটল। পার্থ মণ্ডল নামে এক যুবক হঠাৎ প্রশ্ন করে বসেন, “ওসব কথা পরে হবে। আমাদের ধানাড়া গ্রামে ঢোকার রাস্তা কবে হবে বলুন?” থতমত খেয়ে যান সন্ধ্যাদেবী। সামলে নিয়ে তিনি বলেন, “ওই রাস্তাটি পাকা করা হবে। তা মঞ্জুরও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন চলে আসায় একটু দেরি হচ্ছে।” পার্থ-র পাল্টা প্রশ্ন, “এর আগেও অনেক নেতাই ভোটের আগে রাস্তাটি নিয়ে এমন কথা বলেছেন। কিন্তু রাস্তা হয়নি। আমরা স্পষ্ট করে জানতে চাইছি, রাস্তাটি কবে হবে?” মানবাজার ব্লক সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, “এই রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনের জন্য কাজ আরম্ভ করা যায়নি।” তখন রাজীব মণ্ডল নামের আরও এক যুবক বলে ওঠেন, “আমরা কী অবস্থায় রয়েছি কেউ দেখতেও আসেন না।”
ক্ষোভের ক্ষতে মলম লাগাতে এগিয়ে আসেন দলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালি। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ টেন্ডার, ওয়ার্ক অর্ডার এ সব বোঝেন না। তাঁরা দেখেন কাজটা হল কি না। বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। নিশ্চয় রাস্তাটি হবে।” কয়েকজন গ্রামবাসী পার্থ ও রাজীবের হাত ধরে সভা থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। ফেরার পথে পিড়রগড়িয়া গ্রামের ওই দুই যুবক জানান, মানবাজার-ধূলাডাঙা রাস্তা থেকে একটি কাঁচা রাস্তা পিড়রগড়িয়া গ্রামে ঢুকেছে। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সেই রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই কাঁচা ও খানাখন্দে ভরা। বর্ষায় রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে। তাঁরা বলেন, “আমরা পড়াশোনার জন্য বাইরে থাকি। কিন্তু রাস্তাটির খারাপ অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগে। আমাদের গ্রামের নাম করলে মানবাজার থেকে কোন গাড়ি ভাড়া নিয়ে আসতে চায় না। প্রার্থী ও বিধায়ককে কাছে পেয়ে তাই দুঃখের কথা জানিয়েছি।”
কিন্তু ওদের সরিয়ে নিয়ে গেলেও সভা অবশ্য নির্বিঘ্নে চলেনি। নবেন্দুবাবুর বক্তব্যের মাঝে এ বার এক কর্মী হঠাৎ কিছুটা উঁচু গলায় বলে ওঠেন, “দলের এখানকার কয়েকজন নেতার কথাতেই উন্নয়নের কাজ হয়। তাঁরা কারও সঙ্গে আলোচনা করেন না।” গুঞ্জন ওঠে সভার মধ্যে। নবেন্দুবাবু সতর্ক করে দেন, “কেউ যদি মনে করে থাকেন তাঁর পদ পাকা হয়ে গিয়েছে, তা হলে তিনি ভুল করছেন। লোকসভার ভোট হলেও প্রতিটি বুথের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নেতা-কর্মীর দক্ষতা যাচাই করা হবে।”
সভায় উপস্থিত দলের সহ-সভাপতি সুখেন্দু ত্রিপাঠি বলেন, “দলের স্থানীয় নেতারা সাধারণ কর্মী ও বাসিন্দাদের কাছে উন্নয়নের কথা ঠিক মতো বোঝাতে পারেন নি। তাঁদের বোঝানো উচিত ছিল, তৃণমূল মাত্র ছ-সাত মাস আগে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা পেয়েছে। একে একে সমস্যাগুলির সমাধানের চেষ্টা চলছে।” তিনি বিধায়ককে আরও বেশি করে এলাকায় ঘোরার পরামর্শ দেন। দলের মহিলা জেলা নেত্রী নিয়তি মাহাতো সভায় মহিলাদের উপস্থিতি নেই দেখে জানতে চান, সরকার যেখানে মহিলাদের এগিয়ে আসার জন্য পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করেছে, সেখানে মাত্র একজন মহিলা কেন এই সভায় উপস্থিত রয়েছেন?
বটগাছের নীচে এক কর্মীর চোখ লাল দেখে তাঁকে ডেকে কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছিলেন তৃণমূলের পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী চক্ষু চিকিৎসক মৃগাঙ্ক মাহাতো। কেমন লাগল কর্মিসভা? অনেক ক্ষোভ-অভিযোগ তো শুনলেন? প্রয়াত কংগ্রেস মন্ত্রী সীতারাম মাহাতোর ছেলে মৃগাঙ্ক বলেন, “গ্রামে গ্রামে এসেছি বলেই এ সব ক্ষোভের কথা জানতে পারছি। তবে ভোটের সময় সবাই এককাট্টা হয়ে লড়ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়নের কাজ করব। তাঁর উপর সাধারণ মানুষের ভরসা রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy