সারেঙ্গার ব্রাম্ভ্রণডিহা থেকে রাইপুরের ডুমুরতোড়ের মধ্যে যোগাযোগের ভরসা এই অস্থায়ী রাস্তা। ছবি: দেবব্রত দাস।
কংসাবতী নদীর উপরে অস্থায়ী ভাবে তৈরি করা হয়েছে বোল্ডার মোরামের রাস্তা। এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য। শীত, গ্রীষ্মকালে ওই রাস্তার উপর দিয়ে দু’পাড়ের বহু গ্রামের মানুষ, ছোট বড় গাড়ি যাতায়াত করে। আর ভরা বর্ষায় নদীর দু’কূল ছাপালেই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তখন ১০ কিলোমিটার পথ পার হতে ঘুরপথে ৪০ কিলোমিটার উজিয়ে যেতে হয়।
বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লকের ব্রাহ্মণডিহা ও রাইপুর ব্লকের ডুমুরতোড় ঘাটে কংসাবতী নদীর উপরে পাকা সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এমনই সমস্যায় ভুগছেন ওই দু’টি ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েতের ৬০টি গ্রামের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা কংসাবতী নদীর উপরে ওই এলাকায় একটি পাকা সেতুর দাবি জানালেও আজও তা তৈরি হল না।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা ঘেঁষা সারেঙ্গা এবং রাইপুর ব্লকের গড়গড়িয়া, বিক্রমপুর, ধানাড়া, ডুমুরতোড়, রাইপুর ও ঢেকো পঞ্চায়েত এলাকার ভিতর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কংসাবতী নদী। এই নদীর একপাড়ে সারেঙ্গার গড়গড়িয়া পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণডিহা, অন্যপাড়ে রাইপুরের ডুমুরতোড়। এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য নদীর উপরে অস্থায়ী ভাবে ১২ ফুট চওড়া ও প্রায় ২০০০ ফুট লম্বা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ওই রাস্তার উপর দিয়েই দুই ব্লকের স্কুল পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসী সকলে প্রতিদিন যাতায়াত করেন।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বছরের অধিকাংশ সময়েই গড়গড়িয়া, বিক্রমপুর, ধানাড়া, ডুমুরতোড়, ঢেকো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ কম সময়ে যাতায়াতের জন্য এই রাস্তা ব্যবহার করেন। ছোট গাড়ি, ট্রাক, ট্রাক্টর-সহ ৫০০টির বেশি গাড়ি এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করে। সে জন্য অবশ্য সাইকেল এবং মোটরবাইকে ৫ টাকা, ছোট গাড়ি ১০-২০ টাকা, বড় গাড়ি ২০-৫০ টাকা করে পাড়ানি দিতে হয়। গ্রামবাসীই কমিটি তৈরি করে রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। তবে বর্ষার সময়ে ওই রাস্তা প্রতি বছরই জলের তলায় চলে যায়। দু’পাড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভরসা তখন একমাত্র নৌকা। তাতে ঝুঁকিও রয়েছে। তাই এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি, ব্রাহ্মণডিহা থেকে ডুমুরতোড় ওই রাস্তায় কংসাবতী নদীর উপরে একটা সেতু তৈরি হোক।
সারেঙ্গা ব্লকের ব্রাহ্মণডিহা, মাজুরিয়া, বেলেপাল, মাকরকোল, গড়গড়িয়া, লালবাজার, নিবড়া, সীতারামপুর, পেঁচেড়া, আগয়া, বিক্রমপুর এবং রাইপুর ব্লকের নিশ্চিন্তপুর, টিকরপাড়া, গোবরদা, ডুমুরতোড়, শালবনি, ঠাকুরাবাঁধা, মামুড়া, সহজপুর, বক্সি, বরপাল, পারুলখাঁ-সহ আশেপাশের প্রায় ৬০টি গ্রামের বাসিন্দারা নানা প্রয়োজনে এই রাস্তার উপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ব্রাহ্মণডিহা গ্রামের বাসিন্দা প্রসেনজিত্ দাস, ভাস্কর দিগর, নিমাই দে, মাকরকোল গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুত্বরণ মণ্ডল বলেন, “নদী পেরোলেই ডুমুরতোড়। সেখান থেকে বক্সি হয়ে মাত্র ৩০ কিলোমিটার গেলেই ঝাড়গ্রাম। তাই এলাকার মানুষ বিনপুর বা ঝাড়গ্রাম গেলে এই রাস্তার উপর দিয়েই যাতায়াত করেন। এতে কম সময়ে সহজে বিনপুর বা ঝাড়গ্রাম যাওয়া যায়।” কিন্তু বর্ষাকালে ওই রাস্তা ভেসে গেলে সারেঙ্গা, পিড়রগাড়ি মোড়, রাইপুর, ফুলকুসমা হয়ে ৮০ কিলোমিটার ঘুরপথে ঝাড়গ্রামে তাঁদের যেতে হয়।
অন্য দিকে, ডুমুরতোড় গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত পাত্র, অরুণ পাল, নিশ্চিন্তপুরের সুকুমার ভুঁই বলেন, “নানা প্রয়োজনে আমাদের সারেঙ্গায় যেতে হয়। কংসাবতী নদীর উপরে ব্রাহ্মণডিহা ঘাট দিয়ে এই রাস্তায় আশেপাশের গ্রামের বহু মানুষ যাতায়াত করেন। রাইপুর হয়ে সারেঙ্গা যেতে যেখানে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ঘুরতে হবে, সেখানে এই পথে নদী পেরোলে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব। এতে দূরত্ব যেমন অনেক কমে যায়, তেমনই সময় বাঁচে।”
এ দিকে নদীর উপর সেতু না থাকায় পিচ রাস্তাও তৈরি হচ্ছে না। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেতু তৈরি হলে এই সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। গ্রামবাসীর অসুবিধার কথা মেনে নিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা তথা সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূল নেতা ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “কংসাবতী নদীর উপরে ব্রাহ্মণডিহা থেকে ডুমুরতোড় ঘাটের মধ্যে একটি সেতু তৈরি হলে আশেপাশের প্রায় ৬০টি গ্রামের ৭০ হাজারের বেশি মানুষ উপকৃত হবেন। ঝাড়গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের দুরত্বও অনেক কমে যাবে। তাই জেলা পরিষদের কাছে আমরা ওই সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়েছি।” কবে দাবিপূরণ হয় অপেক্ষায় জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy