Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
রামপুরহাটের ছট পুকুর

বরাদ্দ হয়নি টাকাই, কাজ শেষের ফ্লেক্স ঘিরে বিতর্ক

‘শারদ সম্মান’ অনুষ্ঠানে এসে সাংসদ পুর-এলাকার ছট ঘাট সংস্কারের জন্য টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার দু’সপ্তাহের মধ্যে সেই টাকায় কাজ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়ে দেয় পুরসভা। শুধু তাই নয়, ঘাট নির্মাণ হয়ে গিয়েছে বলে বড় বড় ফ্লেক্স টাঙিয়ে প্রচারও করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তার ঠিক উল্টো চিত্র। ঘটনাটি রামপুরহাটের। দু’সপ্তাহ আগে হওয়া রামপুরহাটের ওই অনুষ্ঠানে এসে সাংসদ শতাব্দী রায় ঘোষণা করেন গাঁধী পার্ক লাগোয়া ছট ঘাট নির্মাণ করার ২৫ লক্ষ টাকা পুরসভাকে দেওয়া হবে।

এই ঘাট সংস্কার ও ফ্লেক্স (ইনসেটে) ঘিরেই বিতর্ক। ছবি: অনির্বাণ সেন

এই ঘাট সংস্কার ও ফ্লেক্স (ইনসেটে) ঘিরেই বিতর্ক। ছবি: অনির্বাণ সেন

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৯
Share: Save:

‘শারদ সম্মান’ অনুষ্ঠানে এসে সাংসদ পুর-এলাকার ছট ঘাট সংস্কারের জন্য টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার দু’সপ্তাহের মধ্যে সেই টাকায় কাজ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়ে দেয় পুরসভা। শুধু তাই নয়, ঘাট নির্মাণ হয়ে গিয়েছে বলে বড় বড় ফ্লেক্স টাঙিয়ে প্রচারও করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তার ঠিক উল্টো চিত্র। ঘটনাটি রামপুরহাটের।

দু’সপ্তাহ আগে হওয়া রামপুরহাটের ওই অনুষ্ঠানে এসে সাংসদ শতাব্দী রায় ঘোষণা করেন গাঁধী পার্ক লাগোয়া ছট ঘাট নির্মাণ করার ২৫ লক্ষ টাকা পুরসভাকে দেওয়া হবে। সাংসদের অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, টাকা দেওয়ার কথা প্রস্তাব আকারে জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। অন্য দিকে, পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে এমপি ঘোষিত টাকার কাজের এস্টিমেট ‘ভেটিং’-এর জন্য পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর এবং জেলাশাষকের কাছে পাঠানো হয়। সেই এস্টিমেট তৈরির কাজ এখনও চলছে। অথচ কী করে ফ্লেক্স টাঙিয়ে প্রচার করা হচ্ছে ওই টাকায় কাজ হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন রামপুরহাট পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলররা। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভায় যে চরম বেনিয়ম এবং দুর্নীতি চলছে এই ঘটনা তার প্রমাণ। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে সাংসদ শতাব্দী রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কে কী করেছে তা জানি না। আমি আমার ঘোষণা মতো টাকা দিয়ে দেব। সেই সঙ্গে কাজ হয়েছে কি না দেখে নেব।” বেআইনি কাজকর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “ওঁরা হয়তো ভেবেছেন। ছট পুজোর দিন এক সঙ্গে এত লোককে পাওয়া গিয়েছে। অন্য সময় পাওয়া যাবে না। তাই ওই ভাবে প্রচার করেছে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংসদ বা বিধায়ক তাঁদের নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন খাতে টাকা খরচ করতে গেলে বেনিফিসিয়ারি কমিটি তাঁদের কাছে কাজের প্রস্তাব দেবে। এমপি বা এমএলএ সেটা বিবেচনা করে তাঁদের আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর পরে জেলাশাসকের কাছে প্রস্তাব আকারে দেওয়া হয়। জেলাশাসকের অফিস থেকে পরে কাজের প্রস্তাব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে পুরসভার কাজ হলে পুরপ্রধানের কাজের এস্টিমেট চেয়ে পাঠানো হয়। এর পরে এস্টিমেট ভেটিং করে ওই টাকা দেওয়ার জন্য সাংসদ বা বিধায়ককে লিখিত ভাবে জানানো হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সাংসদের কাছ থেকে রামপুরহাট পুরসভার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব জমা পড়েছে। কিন্তু পুরসভা থেকে এমপি’র ঘোষণা করা ২৫ লক্ষ টাকার জন্য কোনও কাজের এস্টিমেট জমা এখনও পড়েনি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত পুরসভা থেকে কাজের এস্টিমেট জমা না পড়ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই কাজের ভেটিং না করে টাকাও দেওয়া হবে না।”

কিন্তু মজার বিষয় হল সাংসদের ঘোষণা অনুযায়ী ২৫ লক্ষ টাকায় ছট পুজোর ঘাট সংস্কার, নির্মাণ করা হয়েছে বলে ইতিমধ্যে গাঁধী পার্কের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় ফ্লেক্স ছট পুজোর দিন থেকে টাঙিয়ে দিয়েছে পুরসভা। যে টাকা এখনও হাতে এসে পৌঁছল না, সেই টাকার কাজের কথা কী ভাবে উল্লেখ করা হল? এত কিছুর পরেও উপপুরপ্রধান অনিন্দ্যকুমার সাহা দাবি করেন, “ঘাট তো সংস্কার হয়েছে। এ বার সাংসদের টাকা পাওয়া গেলে খরচ দেখানো হবে।”

এই মন্তব্যের পরেও প্রশ্ন উঠছে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এ রকম কি করা যায়? বিজেপি কাউন্সিলর সুপর্না চৌধুরীর কটাক্ষ, “পুরসভায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বোর্ড অফ কাউন্সিলরদের অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে এমপি বলে দিল আর সঙ্গে সঙ্গে ঘাট নির্মাণ হয়ে গেল! আসলে এই ভাবে মিথ্যা কাজের প্রচার করে তৃণমূল এলাকায় পুরনির্বাচনে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে চাইছে। আগামী দিনে মানুষ এই ধরনের মিথ্যাচারের জবাব দেবে।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সঞ্জীব মল্লিক বলেন, “রামপুরহাট পুরসভার দুর্নীতি নিয়ে এর আগে আমরা সরব হয়েছি। এ বারে এই ধরনের ঘটনা তার প্রমাণ দিল।” পুরসভার কাজের হিসেব খতিয়ে দেখার জন্য রামপুরহাট মহকুমাশাসক দায়িত্বে আছেন। মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “কী হয়েছে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE