Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বেহাল দেড় কোটির প্রকল্প, পানীয় জল না মেলায় ক্ষোভ

পলেস্তারা খসে অসমাপ্ত অবস্থায় চার বছর ধরে পড়ে রয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রকল্প। বীরভূমের পাঁচটি এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার নামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের রিজার্ভার নির্মাণ প্রকল্প নেয়। যার জন্য খরচ হওয়া ৭০ শতাংশ টাকা ইতিমধ্যে জলে যাওয়ার জোগাড়। অথচ প্রশাসনিক গাফিলতিতে কোথাও পৌঁছচ্ছে না পানীয় জল। রিজার্ভারের অপরিকল্পিত নির্মাণ এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

এখনও কাজ শেষ হয়নি খোরাসিনপুরে জলাধারের।

এখনও কাজ শেষ হয়নি খোরাসিনপুরে জলাধারের।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
বীরভূম শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০১:১১
Share: Save:

পলেস্তারা খসে অসমাপ্ত অবস্থায় চার বছর ধরে পড়ে রয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রকল্প। বীরভূমের পাঁচটি এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার নামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের রিজার্ভার নির্মাণ প্রকল্প নেয়। যার জন্য খরচ হওয়া ৭০ শতাংশ টাকা ইতিমধ্যে জলে যাওয়ার জোগাড়। অথচ প্রশাসনিক গাফিলতিতে কোথাও পৌঁছচ্ছে না পানীয় জল। রিজার্ভারের অপরিকল্পিত নির্মাণ এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়ে গেলেও রিজার্ভার নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে উপভোক্তারা প্রয়োজন মতো পরিশ্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন না। চার বছর আগে জেলার ময়ূরেশ্বর থানার মল্লারপুর, খরাসিনপুর, নানুর থানার খজুটিপাড়া, দুবরাজপুর থানার পছিয়াড়া এবং সিউড়ি থানার কড়িধ্যা এলাকায় পানীয় জল প্রকল্পের রিজার্ভারগুলি অসম্পূর্ণ রেখে পালিয়ে যায় বর্ধমানের একটি বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থা। প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় বর্ধমানের ওই সংস্থাকে মাস খানেক আগে বাতিল করে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, শাস্তিস্বরূপ ওই এজেন্সির সিকিউরিটি বাবদ জমা টাকা বাজেয়াপ্ত করে সরকারের কাছে জমা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা শাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, “এলাকাবাসীর অসুবিধার কথা ভেবে ওই রিজার্ভারগুলি তিন মাসের মধ্যে তৈরি করা হবে।” জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জেলা নির্বাহী আধিকারিক অর্ধেন্দু দত্ত বলেন, “রিজার্ভারগুলি নির্মাণের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।”

জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে ওই পাঁচটি এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্পে বাড়িতে বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের জন্য দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি রিজার্ভার তৈরির বরাত পায় বর্ধমানের সংস্থাটি। কিন্তু ৬০ ফুট উচ্চতার প্রত্যেকটি রিজার্ভার নির্মাণের প্রকল্পে কোথাও ৬০ শতাংশ, ৬৫ শতাংশ কোথাও বা ৭০ শতাংশ কাজ করে মাঝপথে নির্মাণ বন্ধ করে পালিয়ে যায় তারা। ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বাম আমলে তৎকালীন জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক শ্রেণির অসাধু আধিকারিকেরা স্বজনপোষণ করে ঠিকাদার রিজার্ভার নির্মাণ সংস্থাটিকে প্রকল্পের টেন্ডার তৈরি করতে দেয়। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। ধীরেন্দ্রনাথবাবুর আরও অভিযোগ, রিজার্ভারগুলি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, যে কোনও সময় সেগুলি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, “এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য ওই মল্লারপুর এবং খরাসিনপুর গ্রামের রিজার্ভার দু’টি অবিলম্বে তৈরি করা প্রয়োজন।”

ভেঙে পড়ছে মল্লাপুরের আর একটি অসম্পূর্ণ জলাধার।

এ দিকে মল্লারপুর এলাকার রিজার্ভারটি মল্লারপুর হাই স্কুলে অবস্থিত। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের কাঠামো ভেঙে পড়ছে। নির্মীয়মাণ রিজার্ভারের গায়ে আগাছা জন্মেছে। স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র প্রলয় রঞ্জন মিশ্র, শুভময় চট্টোপাধ্যায়রা জানালেন, স্কুলের ভিতরে এই ভাবে ভঙ্গুর রিজার্ভারটি অসমাপ্ত অবস্থায় দীর্ঘ দিন দাঁড়িয়ে আছে। স্কুল চলাকালীন ছেলেরা রিজার্ভারের আশপাশে ভীতিজনক ভাবে খেলাধুলো করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রিজার্ভার তৈরি না হওয়ার জন্য মল্লারপুরের সব এলাকার মানুষ জল পাচ্ছেন না। একই অবস্থা সিউড়ি থানার কড়িধ্যায়। পানীয় জল প্রকল্পে নানুর থানার নওয়াপাড়া কড্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান মণিকা বেগম জানালেন, এলাকার খজুটিপাড়ায় রিজার্ভার তৈরির কাজ শেষ না হওয়ায় খজুটিপাড়া, সুচপুর, নবস্তা, সেকড্ডা, বাইতাড়া, শেরপুর গ্রামগুলিতে পরিশ্রুত পানীয় জল যাচ্ছে না। তাঁর আরও দাবি, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার জন্য ইতিমধ্যে উর্ধ্বতম কতৃপক্ষকে দু’বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একই বক্তব্য ময়ূরেশ্বর থানার খরাসিনপুর, দুবরাজপুর থানার যশপুর পঞ্চায়েতের পছিয়াড়া পানীয় জল প্রকল্পের উপভোক্তাদেরও।

— নিজস্ব চিত্র

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE