রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক না থাকলেও একটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র ছিল। বিএসএনএল-এর ইন্টারনেট পরিষেবায় সমস্যার জন্য ১০ কিলোমিটার দূরে ওই কেন্দ্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘জন ধন’ প্রকল্পের সুবিধা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রামপুরহাট ১ ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত মাসড়া পঞ্চায়েতের এলাকার বাসিন্দাদের।
ওই পঞ্চায়েতের ৩৬টি গ্রামের সাড়ে পনেরো হাজারের উপর বাসিন্দা এই অসুবিধার মধ্যে থেকে দীর্ঘদিন বাস করছেন। অথচ পঞ্চায়েত থেকে বার বার প্রশাসনের কাছে যে কোনও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের শাখা খোলার জন্য আবেদন জানালেও কোনও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত ভবনে একটি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবাকেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে দৈনিক আর্থিক লেনদেনের একটি সীমা বাঁধা আছে। যার জন্য অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে পঞ্চায়েত কর্মীদের। এ ছাড়াও পঞ্চায়েতের এলাকার মধ্যে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবাকেন্দ্র থাকলেও সেখানেও বিএসএনএল-এর ইন্টারনেট কানেকশনে সমস্যা হওয়ায় ওই কেন্দ্র মাসড়া পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কাষ্ঠগড়া গ্রামে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ হাজারের উপর তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস। মাসড়া এবং শালবাদরা হাইস্কুল, তিনটি জুনিয়র হাইস্কুল, ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এলাকায়। গ্রামবাসী সৈয়দ মৈনুদ্দিন হোসেনের ক্ষোভ, “এই গ্রামে ইতিহাসের পুরনো উপাদানে ঠাসা। সে সব ইতিহাস আজও যেমন অবহেলিত, তেমনি এই অঞ্চলে কোনও ব্যাঙ্ক নেই। একটা মাত্র ডাকঘর। তাই নিয়ে এলাকার মানুষকে চলতে হচ্ছে।” এলাকার বাসিন্দা তথা মাসড়া পঞ্চায়েতের সদস্য দেবীলাল টুডু বলেন, “পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতি মাসে রাজস্ব আদায় হচ্ছে। অথচ সরকারি ব্যাঙ্কের কোনও স্থায়ী শাখা খুলে দিতে পারেনি। এর জন্য বর্তমান সরকারের চালু ‘কন্যাশ্রী’ , ‘যুবশ্রী’ এই সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা নিতে এলাকাবাসীকে প্রায় পনেরো কিমি দূরে গোয়ালা যেতে হচ্ছে। অন্য সরকারি প্রকল্প যেমন বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে এলাকাবাসীকে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। এই সমস্ত উপভোক্তাদের প্রায় ১২ কিমি খারাপ রাস্তা হেঁটে কাষ্ঠগড়ায় যেতে হয়।” পঞ্চায়েত প্রধান কণিকা সোরেন বলেন, “এলাকায় ব্যাঙ্ক না থাকার জন্য সরকারি প্রকল্পের সমস্ত টাকা অন্য পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে আনতে হচ্ছে। এতে কর্মীদের যথেষ্ট হয়রাণ হতে হয়।”
অন্য দিকে, মাসড়া গ্রাম পঞ্চায়েত সচিব গৌরীশঙ্কর দে বলেন, “ব্যাঙ্কের স্থায়ী শাখা না থাকার জন্য ১০০ দিন প্রকল্পে শ্রমিকদের মজুরি দিতে অসুবিধা হয়। কারণ, পঞ্চায়েত ভবনে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে যে গ্রাহক পরিষেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে সেথানে দৈনিক মাত্র দশ হাজার টাকা আর্থিক লেনদেন হয়। এর ফলে শ্রমিকদের মজুরির টাকা দিতে অসুবিধা হয়। অন্য সরকারি প্রকল্পের টাকা আনতে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত অন্য পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখা থেকে আমাদেরকে টাকা আনতে হয়। আবার শ্রমিকদেরকেও অন্য পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামীণ ব্যাঙ্কে যেতে হয়।” পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা শুলুঙ্গা গ্রামের হোপনা টুডু, চিন্তামনি মির্ধা, চাঁদেরজোল গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী মুর্মুদের দাবি, “নিরিষা মৌজায় অবস্থিত পঞ্চায়েত ভবনে সরকারি যে কোনও ব্যাঙ্কের স্থায়ী শাখা চালু করলে আমাদের সুবিধা হবে।” পঞ্চায়েত সচিব বলেন, “পঞ্চায়েত ভবনে একটি বড় ঘর আছে। সেখানে আমরা চাই ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবাকেন্দ্র বাদ দিয়ে একটি শাখা চালু করা হোক। এর জন্য প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।”
অন্য দিকে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “মাসড়া অঞ্চলের মধ্যে মাসড়া গ্রামে আমাদের ব্যাঙ্কের একটি গ্রাহক পরিসেবাকেন্দ্র চালু ছিল। সেখানে বিএসএনএল-এর টাওয়ার পাওয়া যাচ্ছিল না। এর জন্য ওই কেন্দ্রটিকে লাগোয়া অঞ্চল কাষ্ঠগড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। এখন যদি মাসড়া অঞ্চলে শাখা খোলার দাবি ওঠে, তা হলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।” রামপুরহাট মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “সুনির্দিষ্ট দাবি জানালে খতিয়ে দেখে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy