প্রচারে মৃগাঙ্ক মাহাতো। সোমবার সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
নতুন তেরঙ্গা উত্তরীয়টা আগেই কেনা হয়েছিল। মা কালীর চরণ ছুঁইয়ে সেটিই গলায় পরে নিলেন।
সোমবার সকালে পুরুলিয়া শহরের চকবাজার কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে এ ভাবেই নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন পুরুলিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো। পুজো দিয়ে বেরিয়েই প্রত্যয়ী সুরে বললেন, “লোকসভা ভোট মানেই এখানকার মানুষ বামফ্রন্টকেই জিততে দেখে এসেছেন। এ বার আমরা ছবিটা পাল্টে দেব।” এ দিন তৃণমূূল প্রার্থীর আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শুরুকে ঘিরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। দলীয় চিহ্ন দেওয়া পতাকা আর ছাতায় মন্দিরের সামনের রাস্তা কার্যত তাঁদেরই দখলে চলে যায়। যার জন্য মেন রোডে খানিকটা যানজটও হয়। মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোও। মৃগাঙ্কবাবুর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অপরাজিতাদেবী। তিনিই সঙ্গে করে পুজোর ফুল, বেলপাতা ও প্রসাদের লাড্ডু নিয়ে এসেছিলেন। দেবীর চরণে উত্তরীয় ঠেকিয়ে পুরোহিত মৃগাঙ্কবাবুর গলায় পরিয়ে দেন। দক্ষিণা বাবদ তাঁর ১০১ টাকা জোটে। পুজো দিয়ে বেরোতেই দলীয় কর্মীদের হুড়োহুড়িতে শান্তিরামবাবু কিঞ্চিত অসন্তোষও প্রকাশ করেন।
ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হতেই বিরোধীরা কটাক্ষ শুরু করেছেন, এলাকার রাজনীতিতে মৃগাঙ্কবাবুর তেমন কোনও পরিচিতই নেয়। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও দলের অন্দরেও এ নিয়ে খানিকটা ক্ষোভ রয়েছে। সে কথা ভাল করে জানেন বলেই রবিবারই দলের জেলা সভাপতি নতুন প্রার্থীকে দলীয় নেতৃত্বের সামনে হাজির করেছিলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেখানে জেলা কমিটি ও বিভিন্ন ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে প্রার্থীর প্রাথমিক পরিচয়-পর্ব সেরে নেওয়া পরেই প্রচারের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। দলের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের সমস্ত সদস্য ও শাখা সংগঠনের সভাপতিরাও ছিলেন। আলোচনায় শান্তিরামবাবু বার্তা দেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মৃগাঙ্কবাবুকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই তাঁকে জিতিয়ে আনতে হবে। পরে ফোনে তিনি বলেন, “ওই বৈঠকে আমাদের প্রার্থী নেতা-কর্মীদের সামনে বুদ্ধিদীপ্ত রাজনৈতিক বক্তব্যই রেখেছেন। ওঁর রক্তেই রাজনীতি আছে। মৃগাঙ্কবাবু প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সীতারাম মাহাতোর সন্তান। তাঁকে জেলার সব মানুষই জানেন। তা ছাড়া চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর আলাদা একটা পরিচিতি রয়েছে।” মৃগাঙ্কবাবুর বৌদি নিয়তি মাহাতোও জেলা মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী।
এ দিকে আলোচনার পরে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “প্রচারের কৌশল হিসেবে প্রতিপক্ষ বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস প্রার্থীদের চেয়ে নিজেদের কথা কী ভাবে বলা হবে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তবে, সর্ষের মধ্যেই ভূতের মতো দলের অন্দরেই যেন কোনও উপদল তৈরি না হয়ে যায়, তা-ও নজর রাখতে হবে।” এ নিয়ে প্রবীণ কিছু নেতার মত, প্রত্যেক কর্মীকে প্রাপ্য মযার্দা দিয়েই তাঁকে প্রচারে নামাতে হবে। শান্তিরামবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, উন্নয়নের স্বার্থে দলের দাবিকে জোরালো করতে পুরুলিয়া থেকে দলের প্রার্থীকে সব থেকে বেশি ভোটে নিবার্চিত করে সংসদে পাঠাতে হবে।
মৃগাঙ্কবাবু নিজে বলছেন, “বাবা যেখানে শেষ করেছিলেন, আমি সেখান থেকেই শুরু করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy