Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব তৃণমূলে

পঞ্চায়েতের ভোটের আগে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে তৃণমূলে যে ঐক্য ছিল, লোকসভা ভোটের পরে তা কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে। রবিবার রাতে পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই এক কর্মী মারধরের অভিযোগ তোলার পর দলের নেতাদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে দ্বন্দ্বের ছবি আরও প্রকট হয়ে পড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০১:১৬
Share: Save:

পঞ্চায়েতের ভোটের আগে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে তৃণমূলে যে ঐক্য ছিল, লোকসভা ভোটের পরে তা কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে। রবিবার রাতে পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই এক কর্মী মারধরের অভিযোগ তোলার পর দলের নেতাদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে দ্বন্দ্বের ছবি আরও প্রকট হয়ে পড়েছে। যদিও রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির দাবি, “রঘুনাথপুর ১ ব্লকে দলের মধ্যে কোনও বিবাদ নেই।”

রঘুনাথপুর শহরে সামনেই পুরভোট। কিন্তু সেখানে শহর সভাপতিকে নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ কিছু দিন আগেই কর্মিসভায় বিধায়ক টের পেয়েছেন। এবার রঘুনাথপুর ১ ব্লক নেতৃত্বের মধ্যেও বিভেদ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলের কর্মীদের মতে, পঞ্চায়েতের কাজের ক্ষমতা দখলে রাখা নিয়েই নেতায়-নেতায় দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। তাতেই গোলমালের সূত্রপাত।

সোমবার রাতে রঘুনাথপুর থানায় নতুনডি এলাকার ঝাড়ুখামার গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী তারাপদ মণ্ডল রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাজেশ মণ্ডলের বিরুদ্ধে তাঁকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁকে রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তাঁর অভিযোগ, “নতুনডি পঞ্চায়েত পরিচালনা করা হচ্ছে রাজেশ মণ্ডলের নির্দেশে। কিন্তু স্বচ্ছতা বলে কিছু নেই। সে ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে আমি তাঁর বিরাগভাজন হই। রবিবার রাতে রাজেশ আমার দোকানে চড়াও হয়ে মারধর করে।” সোমবার রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন। সে দিনই তিনি থানায় রাজেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অন্য দিকে রাজেশবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “তারাপদ ইন্দিরা আবাস যোজনায় এক ব্যক্তির বাড়ি তৈরি করানোর জন্য আমাকে চাপ দেয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয় বলে তাঁর কথা রাখা যায়নি। এ জন্য তারাপদ আমাকে গালিগালাজ করে চলে যায়। পরে আমি তাঁর কাছে এমন ব্যবহার করার কারণ জানতে গিয়েছিলাম। মারধর করব কেন?”

রাজেশবাবুর পাল্টা দাবি, দলের স্থানীয় নেতা তথা জেলা পরিষদের দুই সদস্য হাজারি বাউরি ও অনাথবন্ধু মাজি চাপ দিয়ে তারাপদকে দিয়ে পুলিশের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন। জেলা পরিষদের ওই দুই সদস্যের বিরুদ্ধে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরির অভিযোগ তুলেছেন ব্লকের অন্যতম তৃণমূল নেতা প্রদীপ মাজিও। ঘটনাক্রমে রাজেশবাবু প্রদীপবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রদীপবাবুর অভিযোগ, “হাজারি বাউরি ও অনাথবন্ধু মাজি দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি করছে, পঞ্চায়েতগুলির স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দিচ্ছে। অঞ্চল কমিটিগুলির সদস্যদের কাছে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দলের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করছেন ওঁরা। এমনকী ওঁরা রাজেশের বিরুদ্ধে তারাপদবাবুকে উস্কে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন।”

অন্য দিকে, অনাথবন্ধু মাজির পাল্টা অভিযোগ, “তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলি থেকে আর্থিক সুবিধা পেতে প্রদীপবাবু ও তাঁর পাঁচ-ছ’জন অনুগামী দলের মধ্যে দুর্নীতিকে প্রশয় দিচ্ছেন। আমরা তার প্রতিবাদ করছি বলেই তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরির অভিযোগ তুলছেন।” হাজারি বাউরি-ও পাল্টা দাবি করেছেন, “লোকসভা নির্বাচনে রঘুনাথপুর এলাকায় দলের ফল খারাপ হওয়ার পর থেকে প্রদীপবাবু ব্লক এলাকায় দলের মধ্যে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। কারণ তিনি ও তাঁর অনুগামী কয়েকজনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে সবাই বিরক্ত হয়ে পড়েছি।”

দু’পক্ষেরই দাবি, তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছেন। তবে রঘুনাথপুরের বিধায়ক দাবি করেন, “নতুনডির ঘটনাটি রাজেশবাবু ও তারাপদবাবুর মধ্যে ব্যক্তিগত গোলমাল।” তবে নতুনডি অঞ্চলের তৃণমূলের অন্যতম নেতা সোমনাথ মিশ্র দাবি করেছেন, “দলের জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন, এখন তাঁদের পদে পদে নতুনদের কাছে অপদস্থ হতে হচ্ছে। এই প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক। এতে দলের সাধারণ কর্মীরা যথেষ্ঠ ক্ষুব্ধ।”

অন্য বিষয়গুলি:

panchayat tmc raghunathpur party clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE