এই রকমই পোস্টার পড়েছে সিউড়ি শহরে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
নৈতিক সমর্থন ছিলই। এ বার সে কথা পোস্টার সেঁটে জানাল শহরবাসী।
পুরসভা, প্রশাসন ভবন, বাসস্ট্যান্ড-সহ সিউড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের সমর্থনে বেশ কিছু পোস্টার নজরে এল শুক্রবার। সাদা কাগজে নীল কালিতে লেখা পোস্টারগুলিতে স্পষ্ট ভাবে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের লড়াইকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে। পোস্টারগুলির কোনওটাতে লেখা সিউড়িবাসীর পনীয় জলের সমস্যা দূরীকরণে স্বপন ঘোষের লড়াই-কে নৈতিক সমর্থন জানাই। কোনওটাতে লেখা, আমরা গর্বিত আমাদের বিধায়ক স্বপনদার জন্য। আবার কোনওটায় লেখা সিউড়ি ‘পৌরদুর্নীতি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বপনদা আমারা তোমার পাশে আছি-সৌজন্য শহরবাসী।
এমনিতেই জল প্রকল্প ও বস্তি উন্নয়নে আর্থিক দুর্নীতি করছে সিউড়ি পুরসভা, এর তদন্ত চাই। তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দলীয় বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ যে ভাবে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন, তাতে দল প্রবল অস্বস্তিতে। তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতিও। দলীয় বিধায়ক প্রকাশ্যে দলেরই নিয়ন্ত্রানাধীন পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দল বিরোধী কাজ করছেন এবং আসন্ন পুর-নির্বাচনের আগে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন এমন অভিযোগ দলেরই। তার জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই অবস্থায় শহরবাসী নামঙ্কিত পোস্টার আরও অস্বস্তি বাড়াল তাতে সন্দেহ নেই বলে মনে করছেন পুরবাসী থেকে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের শহর সভাপতি চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়, সিউড়ি পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর দীপক দাসেরা বলছেন, “পুরসভার দুর্নীতির বিরুদ্ধে এটা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া।” এতটা পরিষ্কার করে না বললেও সিপিএমের সিউড়ি জোনাল সম্পাদক দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “কে কার সমর্থনে পোস্টার সাঁটাল সেটা পরের কথা। তার থেকেও বড় কথা জলপ্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে।”
সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্বল মুখোপাধ্যায় অবশ্য এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তিনি বলেন, “এখন থেকে স্বপনকান্তি ঘোষ নিয়ে যে কোনও ধরনের প্রতিক্রিয়া দলই দেবে। কারণ, পুরো বিষয়টি দল দেখছে।” তৃণমূলের সিউড়ি শহর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার প্রকাশ্যে বিষয়টিকে পাত্তা দিত নারাজ। তাঁর কথায়, “বিদ্রোহী বিধায়কের লোকজন রাতের অন্ধকারে শহরজুড়ে কয়েকেটি পোস্টার সেঁটেছে। এর বেশি কিছু নয়। এটা নিয়ে এত হৈ চৈ করার মতো কিছু নেই।” তাঁর দাবি, “জলপ্রকল্প নিয়ে আদতেই কোনও দুর্নীতি হয়নি। টাকাটা অন্য থাতে খরচ হয়েছে মাত্র। তা ছাড়া, তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড আসার আগে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বোর্ডের দেখভালের দায়িত্বে তখন ছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস নেতা স্বপনবাবুই। রাজ্যে ১৭টি পুরসভা ওই প্রকল্প টাকা পেয়েছিল। শুধুমাত্র সিউড়ি ছাড়া, সবকটি পুরসভায় জলপ্রকল্পের কাজ ২০০৯ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কেন সেই সময়ের মধ্যেই শেষ করাতে পারলেন না স্বপনবাবুর অনুগামী তথা তৎকালীন কংগ্রেসের পুরপ্রধান তপন শুকুল?” তপনবাবু বর্তমানে সিউড়ি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর। তিনি অবশ্য বলছেন, “বরাদ্দ টাকার পুরোটা আমার সময়কালের মধ্যে না পাওয়ায জল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।” মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি স্বপনবাবুর সঙ্গে।
তবে পুরভোটের আগে যে বাণ দলীয় বিধায়ক ছুঁড়েছেন তা যে যথেষ্ট বিপাকে ফেলেছে দলকে, সেটা অভিজিৎবাবুর পরের কথাতেই পরিষ্কার। তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই দলীয় বিধায়কের দুর্নীতি নিয়ে পুস্তিকা ছাপিয়ে পাল্টা প্রচারে নামতে চলেছে দল। তবে দুর্নীতির কী কী প্রসঙ্গ থাকছে, তা স্পষ্ট করেননি তৃণমূলের শহর সভাপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy