এতদিন পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহারের চাপ আসছিল শিক্ষকদের তরফে। এ বার অভিযোগ, হস্টেলে সহপাঠীদের চাপের মুখে পড়েছেন কলাভবনের সেরামিক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রতিবাদী ছাত্রী। বিশ্বভারতী সূত্রেও জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগের একটি তালিকা তৈরি করে সহপাঠীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছে হস্টেলের বাসিন্দা ছাত্রীদের একাংশ। সূত্রের আরও খবর, রবিবার মধ্যরাতে একটি মিটিং-এ ওই ছাত্রীকে ডেকে তার সহপাঠীরা তার বিরুদ্ধে সকলকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। তিনি সমবেত চাপের মুখে পড়ে হস্টেলের কারও নামে কোনও অভিযোগ দায়ের না করার সিদ্ধান্ত জানায় ওই ছাত্রী। তবে সোমবার ঘনিষ্ঠদের কাছে তিনি জানিয়েছেন, হস্টেলে থেকেই লড়াই চালিয়ে যাবেন।
কলাভবনে ভিন্ রাজ্যের ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ২৪ দিন। নিরাপত্তা না পেয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন প্রথম বর্ষের ওই নির্যাতিতা। ইতিমধ্যে বন্ধুর নিগ্রহের প্রতিবাদ করার ‘অপরাধে’ বিভাগীয় প্রধানের ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি শুনতে হয় তৃতীয় বর্ষের সেরামিক বিভাগের ওই ছাত্রীকে। পুলিশের কাছে এ নিয়ে এফআইআর করার পর আরও এক দফা শিক্ষকদের চাপের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। ফলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বার পুলিশে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এরপর থেকে তাঁর হস্টেলের সহপাঠীরাই তাঁর উপর চাপ তৈরি করছে।
কী ধরনের চাপ? শ্রীসদন হস্টেলের নানা ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সেরামিকের ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগের একটি তালিকা তৈরি করেন হস্টেলেরই এক বাসিন্দা। তিনি হস্টেলে শৃঙ্খলারক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে মনোনীত। ওই তালিকায় রয়েছে, সেরামিকের ওই ছাত্রী খাবার চুরি করেন, জিনিসপত্র ধার নিয়ে ফেরত দেন না, রাতদুপুরে জোরে গান বাজান, জোর করে অন্যদের ঘরে ঢুকে পড়েন, নিজের জিনিসপত্র অন্যদের ঘরে জোর করে রাখেন, ইত্যাদি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ওই ছাত্রী সকলকে পুলিশের হুমকি দিচ্ছেন। যেহেতু তিনি ইতিমধ্যেই কলাভবনের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছেন, তাই বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারছেন না হস্টেলের বাসিন্দারা। তাই ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে “কঠোর ব্যবস্থা” নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে চিঠিতে।
ওই হস্টেলের বাসিন্দা কলাভবনের বেশ কিছু ছাত্রী ওই অভিযোগপত্রে সই-ও করেন। তবে বিদ্যাভবন এবং সঙ্গীতভবনের ছাত্রীরা জানিয়েছেন, তাঁরা ওই অভিযোগে সই করেননি। বিদ্যাভবনের ছাত্র একটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের সদস্য টিপু সুলতান বলেন, “হস্টেলের বাসিন্দা বিদ্যাভবনের মেয়েরা কেউ ওই অভিযোগপত্রে সই করেননি বলে আমাকে জানিয়েছেন।”
সেরামিকের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁকে হস্টেলের বাসিন্দারা এই সব অভিযোগের বিষয়ে গত দু’বছরে কিছুই জানাননি। “বিভাগীয় প্রধান গৌতম দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরেই কেন আমার বিরুদ্ধে এই সব কথা বলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না,” সোমবার বলেন তিনি।
সেরামিকের ওই ছাত্রীর আরও দাবি, “রাত্রি ১২টা নাগাদ আমাকে হস্টেলের কমনরুমে ডেকে ওরা একটি সভা করে। সভা শেষ হয় রাত ২টো নাগাদ। সেখানেও ওরা ধমকি দিয়ে সতর্কবার্তা দেয় আমাকে।”
ওই অভিযোগপত্র তৈরি করে ছাত্রীদের দিয়ে স্বাক্ষর করায় উদ্যোগ নেন যে ছাত্রীরা, তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে বারবার ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হয় সোমবার। তাঁরা ফোন ধরেও কেটে দিয়েছেন। মোবাইলে মেসেজ করলে উত্তর দেননি। মিডিয়া ইন্টারফেস কমিটির চেয়ারপার্সন সবুজকলি সেন বলেন, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” সেরামিকের ওই ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অভিযোগ, চাপ তৈরির প্রক্রিয়া অবশ্য চলছেই। একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত মঙ্গলবার কলাভবন চত্বরে নোটিস দিয়ে ডেকে ভবনের ছাত্র সংগঠন একটি বৈঠকও করে। সেখানে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী সকলকে সতর্ক করে বলে, “ওই ছাত্রী শিক্ষকদের নামে মিথ্যে বলছে। প্রয়োজন হলে ওর বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।” ওই ছাত্রীর মানসিক ভারসাম্য নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতে সেরামিকের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর পাশে রয়েছেন তাঁর বাবা। এ দিন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি মেয়েকে বিশ্বভারতী থেকে ফিরিয়ে আনব না। ওকে বলেছি, এটা তোমার লড়াই। তোমাকে লড়তে হবে, আমি পাশে রয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy