প্রার্থীর নাম ঘোষণা এখনও ঢের দূর। তার আগেই পুরভোটের প্রার্থী নির্বাচন ঘিরে শাসক দল তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল ক্রমেই ছড়াচ্ছে জেলায় জেলায়। এ বার তা বীরভূমে। তালিকা নিয়ে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন সাঁইথিয়া শহরের আদি তৃণমূল নেতত্ব উপ-পুরপ্রধান শান্তনু রায়(সঞ্জু)। শুধু শান্তনুবাবুই নন, প্রার্থী না করায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ি কাউন্সিলার মমতা দাসের (সাহা) স্বামী নন্তু দাসও। প্রার্থী না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শহর তৃণমূলের আরেক আদি নেতা মানস সিংহ।
সারা জেলা জুড়েই অবশ্য পুরভোটের প্রার্থী নিয়ে শাসকদলের এই কোন্দল এখন নিত্য দিনের ঘটনা। রামপুরহাটের পর এ বার সরব সাঁইথিয়াও। সাঁইথিয়া শহরে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠীর বিবাদ অবশ্য নতুন নয়। একসময় শহর সভাপতি মানস ও বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান শান্তনুকে নিয়েই বিব্রত ছিল জেলা নেতৃত্বও। অন্য দিকে বিদায়ী পুরপ্রধান বিপ্লব দত্তরা শাসক দলে যোগ দেওয়ার পর ত্রিমুখি গোষ্ঠী কোন্দল সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। ময়দানে নামতে হয়েছে স্বয়ং জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও।
দলীয় সূত্রের খবর, কিছুদিন আগে সাঁইথিয়ার দায়িত্বে থাকা লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম শহরের তিন গোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ২০-২২ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তাতে সব গোষ্ঠীর নেতাদেরকে রাখা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় মনিরুলকেই। বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও এলাকার সাংসদ হিসাবে শতাব্দী রায়কেও কমিটিতে রাখা হয়।
রবিবার আসন্ন পুরভোটে প্রার্থী ও রণকৌশল ঠিক করতে সাঁইথিয়া দলীয় কার্যালয়ে কমিটির বৈঠক ডাকেন চেয়ারম্যান মনিরুল। সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। দলীয় সূত্রে খবর, ওই খবর দেওয়া সত্বেও বৈঠকে যাননি দলীয় প্রতীকে জেতা একমাত্র কাউন্সিলর সাত নম্বর ওয়ার্ডের শান্তুনু রায়। তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “বৈঠকের আধঘন্টা আগে পিনাকীবাবু আমাকে ফোন করে বৈঠকের কথা জানান। ওনাকে পরিস্কার জানিয়ে দিই, আমার পূর্ব কর্মসূচি থাকায় বৈঠকে যাওয়া সম্ভব নয়।” প্রার্থী তালিকা নিয়ে পৃথক মতামতের প্রসঙ্গ তুললে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, “যাঁরা এতদিন থেকে দল বা সংগঠন করে এসেছেন, দলে আজ তাঁরা ব্রাত্য। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের যাঁরা আমার সঙ্গে সংগঠন করে এসেছেন, তাঁদের কাউকে বা পুরনো কর্মীদেরকে টিকিট দেওয়া হয়নি। যাঁরা দলের পৌষমাস বা সুদিনে দলে নাম লিখিয়েছেন তাঁদেরকেই প্রাধান্য বা টিকিট দেওয়া হয়েছে। এরকমটা যে হবে এটা আগে থেকেই আঁচ করে ছিলাম।” তাঁর দাবি, পুরসভার ছটি আসন।
প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখেননি প্রাক্তন শহর সভাপতি মানস সিংহও। ঘটনা হল, সাঁইথিয়ায় দলে কোনও গোষ্ঠী কোন্দল নেই- শহরবাসীকে তা জানান দিতে বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জের দুটি উপ নির্বাচনে জয়কে উপলক্ষ করে শহরে একটি বিজয় মিছিল বের করেছিল তৃণমূল। মনিরুলের সঙ্গে সেই মিছিলে পা মেলান মানস, শান্তনু ও বিপ্লববাবু। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে তুষের আগুন জ্বলছিল, সে কথা জানতেন জেলা নেতৃত্ব।
মানসবাবু বলেন, “সিপিএম ও এই শহরের কংগ্রেসের সঙ্গে অনেক লড়াই করে কেস খেয়ে আমরা সংগঠন করেছি। যাঁরা আমার সঙ্গে দলের দুর্দিনে ছিলেন তাঁদের অনেকেই প্রার্থী হওয়ার যোগ্য। তাঁদের অনেকেরই ইচ্ছা হয় দলের হয়ে অন্তত পুর নির্বাচনে লড়াই করার। কিন্তু এখানে দেখছি সবই অন্যরকম।” জেলা তৃণমূলের একটি মহল সূত্রের খবর, রবিবারের বৈঠকে প্রার্থী নিয়ে মানসবাবু কিছুটা বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন অনুব্রতবাবুর সঙ্গে। মানসবাবুর এক অনুগামী করালি সিংহ বলেন, “সাতটি আসনের দাবি ছিল। সাতটির মধ্যে অন্তত পাঁচটি আসন না পেলে পুর নির্বাচনে আমরা কোনও প্রার্থী দেব না।”
অন্যদিকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর মমতা দাসকে প্রার্থী না করায় তাঁর স্বামী নন্তু দাস কার্যত ক্ষোভে ফুঁসছেন। সেই ক্ষোভ উগরে তিনি বলেন, “মাস খানেক আগে বোলপুরে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যদি ওয়ার্ড না বদলায়, তাহলে গত বারের জেতা কাউন্সিলরদেরকেই প্রার্থী করা হবে। এমনকী বৈঠকের আগের দিন পর্যন্তও তাই ঠিক ছিল। সে সব কোথায় গেল?” তৃণমূলের শহর সভাপতি পিনাকী দত্ত দলীয় কোন্দল উড়িয়ে বলেন, “কোনও গোষ্ঠী কোন্দল নেই। রবিবারের বৈঠকের ব্যাপারে চেয়ারম্যান সেভাবে কাউকে দায়িত্ব দেননি। যে যাঁকে পেরেছেন বলেছেন। নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় বৈঠকের কথা শান্তনুবাবুকে সন্ধ্যায় জানিয়েছিলাম। এতে কোনও রাজনীতি নেই।”
তাঁর দাবি, “প্রার্থী নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কমিটির অধিকাংশ সদস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও মনিরুল ইসলাম বসে সর্বসম্মতভাবে ঠিক করেছেন।” তাহলে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ উঠে আসছে কেন? পিনাকীবাবুর উত্তর, “কয়েকটি আসন নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে, আশা করছি দু’ এক দিনের মধ্যে সে সব মিটে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy