রামপুরহাট আদালতের মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে অবস্থান আইনজীবীদের। শুক্রবার অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।
কোথাও বিচারকের এজলাস বয়কট। কোথাও গোটা আদালতেই কর্মবিরতি।
শ্রীরামপুর আর রামপুরহাটকে মিলিয়ে দিয়েছে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগে ফেলে আইনজীবীদের ‘আন্দোলন’! শ্রীরামপুর আদালতের বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ৭ জানুয়ারি থেকে লাগাতার তাঁর এজলাস বয়কট করছেন আইনজীবীরা। আর বীরভূমের রামপুরহাট আদালতে আইনজীবীরা গত বুধবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন সহকর্মীদের উপরে আক্রমণে অভিযুক্তদের পুলিশ ধরতে না পারার যুক্তি দেখিয়ে।
দু’টি ক্ষেত্রেই কিন্তু দিনের শেষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যাঁরা, তাঁরা হলেন সাধারণ বিচারপ্রার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত রবিবার নলহাটি থানার আকালিপুর গ্রামে রামপুরহাট থানায় কর্মরত এক পুলিশকর্মীর জমি মাপজোক করতে গিয়েছিলেন রামপুরহাট আদালতের তিন আইনজীবী অরুণ মুখোপাধ্যায়, নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও রিয়াজুল ইসলাম। তাঁরা এলাকায় পৌঁছতেই তাঁদের লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ৩ আইনজীবী এবং তাঁদের গাড়ির চালক জখম হন। অরুণবাবু ওই দিনই নলহাটি থানায় ওই পুলিশকর্মীর দুই পড়শির বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ করেন। প্রদীপ ভট্টাচার্য নামে ওই পুলিশকর্মীর অভিযোগ, “আমার বাড়ি লাগোয়া কিছু জমি নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝামেলা চলছে। সেই জমি পরিমাপ করে গেলে হামলা চালানো হয়।”
পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আর তাতেই গোসা হয়েছে আইনজীবীদের। সহকর্মীদের উপরে আক্রমণে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে রামপুরহাট আদালতের প্রায় তিনশো আইনজীবী বুধবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। শুক্রবার আদালতে গিয়ে দেখা গেল, মূল প্রবেশদ্বারের সামনে বেঞ্চ লাগিয়ে আইনজীবীরা অবস্থানে বসেছেন। রামপুরহাট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সামসুল ইসলাম বলেন, “অ্যাসোসিয়েশন থেকে রেজোলিউশন করে আমাদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্তের কথা মাননীয় রাজ্যপাল, আইজি, ডিআইজি, কলকাতা বার কাউন্সিল, জেলার মুখ্য বিচারক এবং প্রশাসনের সর্ব স্তরে জানানো হয়েছে। কিন্তু, পুলিশ কাউকে ধরেনি।” তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, “সোমবার পর্যন্ত দেখব। অভিযুক্তেরা ধরা না পড়লে আরও বড় আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেন এখানকার আইনজীবীরা।”
ওই কর্মবিরতিতে প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা গিয়েছে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী দাদা কল্যাণ ও ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। দু’জনেই বলছেন, “বার অ্যাসোসিয়েশন থেকে দলমত নির্বিশেষে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই আমরাও প্রতিবাদে সামিল হয়েছি।”
ওই কর্মবিরতির জেরে তিন দিন ধরে রামপুরহাট আদালতের দেওয়ানি, ফৌজদারি, দায়রা আদালত-সহ মোট ১২টি এজলাসে একটি মামলাও ওঠেনি। বিচারকেরা এবং আদালতের কর্মীরা এলেও আইনজীবী না থাকায় কোনও মামলারই শুনানি হয়নি। কর্মবিরতির জেরে জেল হাজতের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া বন্দিকেও আদালতে হাজির করানো যায়নি। শ্রীরামপুর আদালতের মতো এখানেও দূর-দূরান্ত থেকে এসে অনেকেই হয়রান হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এ দিনই আদালতে এসে ফাঁপরে পড়লেন মুরারইয়ের পাইকর থেকে আসা পিঙ্কি ঘোষ। তিনি বলেন, “আজ আমার খোরপোস মামলার শুনানি ছিল। এত দিন পরে তারিখ পেয়েছিলাম। খুব সমস্যায় পড়লাম। ফের কবে মামলা উঠবে, কে জানে!”
অভিযুক্তদের কেন ধরা হচ্ছে না? এসডিপিও (রামপুরহাট) জেবি থমাস কে-র দাবি, “কর্মবিরতি শুরুর আগেই নলহাটি থানার ওসি-কে অভিযুক্তদের ধরার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু, অভিযুক্তেরা পলাতক। তার জন্যই একটু সময় লাগছে। তবে, শীঘ্রই ওদের ধরা হবে। আমাদের একটু তো সময় দিতে হবে!” আইনজীবীদের একাংশেরও মতে, পুলিশকে আরও কিছু দিন সময় দেওয়া উচিত ছিল। হুট করে কমর্মবিরতির মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগে ফেলাটা ঠিক নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে দাবি জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর। যদিও অবস্থান থেকে সরার ইঙ্গিত এখনও দেননি আইনজীবীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy