শোকার্ত স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছে তিনি। হঠাৎ সারদা কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর থেকে একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার ওই এজেন্ট মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন এবং তারই জেরে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে পরিবারের দাবি। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটে বীরভূমের সদাইপুর থানা এলাকার বড়িহাট গ্রামে। মৃতের নাম বৈদ্যনাথ মিত্র (৪৯)। বৈদ্যনাথবাবু সিপিএমের স্থানীয় লোকাল কমিটির সম্পাদকও ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কড়িধ্যা লোকাল কমিটির সম্পাদক বৈদ্যনাথবাবু এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত ৯ বছর ধরে সিউড়ি ১ ব্লকের ভুরকুনা, কড়িধ্যা, নগরী ও মল্লিকপুর এই চারটি অঞ্চলের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি। স্ত্রী শিখা সাহা(মিত্র) সক্রিয় ভাবে সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। আগে ভুরকুনার প্রধান ছিলেন এবং বর্তমানে কড়িধ্যা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেত্রী। এলাকায় তৃণমূলের উত্থানেও খুব একটা সমস্যা হয়নি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে। এ দিন ভোরে ঘুম ভাঙতেই স্ত্রী শিখাদেবী দেখেন ঘরে স্বামী নেই। ভেবেছিলেন কাছে-পিঠে কোথাও রয়েছেন। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পরে ঘরে না ফেরায় বাইরে বেরিয়ে শিখাদেবী দেখেন উঠোনের দরজা খোলা। সন্দেহ হওয়ায় সকলকে ডেকে খোঁজ করতে শুরু করেন। পরে বাড়ি থেকে ১৫০ মিটার দূরে পুকুর পাড়ে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বৈদ্যনাথবাবুর মৃতদেহ।
সত্যিই কী আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ আসছিল? হুমকি কি কেউ দিচ্ছিল? দাদা কাশীনাথ মিত্র বলেন, “ওই বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার হয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা তুলেছিল ভাই। ঘরে জমানো টাকা পয়সা, কিছু জমি বিক্রি করে এবং তার শ্বশুরবাড়ি থেকে আসা টাকা পয়সা দিয়ে অনেক আমানতকারীর টাকা ফেরত দিয়েও ছিল সে। আমানতকারীরা টাকা চেয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে এমনটা নয়। কিন্তু মানসম্মান হারিয়ে যাচ্ছে এই ভাবনা থেকে ভাই ক্রমাগত অবসাদে ভুগছিল। বাড়ি থেকে কম বের হত। কথা কম বলত। খাওয়া, ঘুম কমে গিয়েছিল। এমনটা ঘটতে পারে বুঝতে পেরে ওকে অনেক বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরও অনুমান, মোটা অঙ্কের ঋণের বোঝা ওঁর উপরে ছিল এবং অবসাদেও ভূগছিলেন। এলাকার এক আমানতকারী হীরু ডোম বললেন, “খুব ভাল মানুষ ছিলেন। ওঁর কাছে পাঁচ হাজার টাকা জমা রেখেছিলাম। বলেছিলেন ১০ হাজার টাকা হবে। কয়েক মাস আগে একদিন এসে আমাকে বলেন, ‘কোম্পানি ডুবেছে। তোমার আসল টাকাটা আমি দিয়ে দেব।’ আমি বলেছিলাম, এতে আপনার কী দোষ। এখনই টাকা দিতে হবে না। উত্তরে তিনি বললেন, ‘কিন্তু সবাই এমনটা মানবে কেন।” সকলের টাকা ফেরত দিতে পারবেন না এই মানসিক চাপের কারণে এ বারের নির্বাচনে দলের হয়ে প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা নেননি বলে পরিবারের দাবি।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ বড়িহাট গ্রামে বৈদ্যনাথবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দেহ ময়না তদন্তের জন্য সিউড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাড়ির সামনে বসে রয়েছেন বৈদ্যনাথবাবুর দাদা কাশীনাথ মিত্র-সহ আরও অনেকে। সমানে কেঁদেই চলেছেন স্ত্রী শিখাদেবী। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “চিটফান্ড কেলঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্ত হলে এবং দোষীরা ধরা পড়লে এ ভাবে নিরপরাধদের মরতে হত না। মরতে হত না বৈদ্যনাথকেও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy