ওয়ার্ডে পায়চারি করতে করতে হঠাৎ চিৎকার করে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করেন দিন পাঁচেক আগে অস্ত্রোপচার করা এক বধূ। স্বাস্থ্যকর্মীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সিঁড়ি ভেঙে তিন তলা থেকে নীচে নেমে ভবনের বাইরে ঘুরপাক খেতে থাকেন। কর্মীরা ধরতে গেলে তিনি নিজেই পেটের অস্ত্রোপচার করা জায়গার সেলাই কেটে হুলস্থূল বাধিয়ে দেন।
বুধবার বিকেলে বাঁকু়ড়া মেডিক্যালের ঘটনা। জরুরি ভিত্তিতে সব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বিশেষ দল গড়ে রাতের মধ্যেই ওই বধূর ফের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পরে প্রায় সুস্থ হয়ে আসা ওই বধূর হঠাৎ এমন অস্বাভাবিক আচরণের পিছনে তেমন কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না চিকিৎসক ও তাঁর পরিজনেরা।
বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের সেলাই কেটে নিজের পেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে চরম ক্ষতি করে ফেলেন ওই বধূ। হাসপাতাল সুপারকে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বিশেষ দল গড়ে দ্রুত ওই বধূর অস্ত্রপচার করতে বলি। তাঁকে সিসিইউ-তে ভর্তি রাখা হয়েছে।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওন্দার রামসাগরের বাসিন্দা স্বান্তনা মুর্মু নামের বছর পঁয়ত্রিশের ওই বধূকে বুধবার বাঁকুড়া মেডিক্যালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার তাঁর ডিম্বাশয়ে থাকা ছোট টিউমারের অস্ত্রোপচার করা হয়। ক্রমশ তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। দিন দুয়েকের মধ্যেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবছিলেন চিকিৎসকেরা।
কিন্তু বুধবার বিকেলেই বিপত্তি বাধিয়ে ফেলেন তিনি। হাসপাতালের কর্মীরা জানাচ্ছেন, ওই বধূ স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগে ভর্তি ছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি চিৎকার করে দৌড়তে দৌড়তে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যান। হাসপাতালের কর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন।
ঘেরাটোপের মধ্যে পড়ে গিয়ে আরও উগ্র হয়ে উঠে ওই বধূ নিজের পেটের সেলাই টেনে ছিঁড়ে দেন। শুধু তাই নয়, পেটের ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দেন। ওই অবস্থায় জনা আটেক স্বাস্থ্যকর্মী তাঁকে আটকাতে গেলেও প্রথমে কেউই ওই বধূর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেননি। পরে কোনও ক্রমে তাঁকে ধরে ওয়ার্ডে ফিরিয়ে আনেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:গবেষণায় চুরি ধরবে প্রযুক্তি-গোয়েন্দা
বধূর দিদিমা বাদলি মুর্মু সেই সময় জল আনতে বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ওয়ার্ডে এসে শুনি নাতনি ‘ওরা আমাকে মেরে দেবে ওষুধ খাইয়ে, তোমরা সবাই সাক্ষী দেবে’ বলতে বলতে দৌড়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। কেন এমন হল বুঝতে পারছি না।’’
বধূটির স্বামী লক্ষ্মীকান্ত মুর্মু বিষ্ণুপুর পুরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীর কোনও মানসিক সমস্যা ছিল না। কেন এমন হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ তাঁদের একমাত্র ছেলে মনোজিৎ বলেন, ‘‘মাকে নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছি আমরা। যে ভাবেই হোক মাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’’
হাসপাতালের মনোবিভাগের প্রধান অরবিন্দ কুমার বলেন, ‘‘এটা হচ্ছে ‘অ্যাকিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন’। ওই বধূর সঙ্গে তাঁর স্বামীর কোনও বিষয় নিয়ে মতান্তর হয়েছিল। তা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবার জন্য এমনটা হয়ে থাকতে পারে।’’ তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘এই ধরনের রোগীদের অল্প সময়েই সুস্থ হয়ে ওঠেন।’’
কিন্তু চিকিৎসকদের চিন্তা, তাঁর পেটের ভিতরে যেন সংক্রমণ না হয়ে যায়। হাসপাতাল সুপার শুভেন্দু বিকাশ সাহা বলেন, ‘‘ওই বধূর পেটের মধ্যে সংক্রমণ ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy