বেহাল: ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মায়াসরোবর যাওয়ার রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র
বছরের পরে বছর কেটে যায়। কিন্তু ঝালদা শহরের নিকাশির ব্যবস্থার উন্নতি আর হয় না— এমনই অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের। তাঁদের আক্ষেপ, মহকুমা শহরের মর্যাদা পেলেও ঝালদার নিকাশি ব্যবস্থার ‘বেআব্রু’ ছবিটা বদলায়নি। বহু দিনের পুরনো নিকাশি নালাগুলি এখনও শহরের জল নিষ্কাশনের প্রধান পথ। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য নতুন করে কোনও নালা তৈরি হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
শহর ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু ওয়ার্ডের নিকাশি নালাগুলি আবর্জনায় বুজে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। যার ফলে, সামান্য বৃষ্টিতেই সেই এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। তারাপদ মণ্ডল, রেণুকা দাসের মতো অনেক শহরবাসীর বক্তব্য, ‘‘এলাকায় অপরিসর নালাগুলির অধিকাংশই বুজে গিয়েছে। বৃষ্টি হলেই দরজার সামনে জল দাঁড়িয়ে যায়। এই সমস্যার বিহিত হওয়া প্রয়োজন।’’
ঝালদার তৃণমূল পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার নির্বাচিত হয়েছিলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। তাঁর ওয়ার্ডের ডোমপাড়ার বাসিন্দা কাশীনাথ চন্দ্রের অভিযোগ, ‘‘নাম কে ওয়াস্তে নর্দমা সাফাই হয়। আবর্জনার একটা অংশ থেকেই যায় নালায়।’’
কী বলছেন পুরপ্রধান?
প্রদীপবাবুর দাবি, ‘‘আগের তুলনায় নিকাশি ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত। হাতে গোনা কয়েকজন সাফাইকর্মী নিয়ে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শহরে বেশ কিছু নতুন নালা এবং হাইড্রেন তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।’’
পুরপ্রধানের দাবিকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, পুরভোটের মুখে মানুষকে ‘বোকা বানানোর জন্য’ তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দিচ্ছে। ঝালদা শহর কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব কয়ালের দাবি, ‘‘নিকাশি সমস্যা মেটাতে পুরসভা কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। শহরের বেশির ভাগ নালা আবর্জনায় বুজে গিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই নালার জল রাস্তায় চলে আসে।’’
শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘদিন পরিষ্কার না হওয়ায় অনেক নালা মশামাছির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাড়ছে রোগের প্রকোপ।
ঝালদা শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নিকাশি নালার এমনই হাল যে, সামান্য বৃষ্টি হলেই নোংরা জল উপচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়।
শহর লাগোয়া পাটঝালদা যাওয়ার রাস্তা, পোকাবাঁধ বস্তি, কুমোরপাড়া, এসজি জালান রোড, ডোমপাড়া, মাছুয়ারপাড়া, কুইরিপাড়া, পোদ্দারপাড়া, পঞ্চমুখীমোড় থেকে বাগদিপাড়া যাওয়ার রাস্তা, জেলিয়াপাড়া— সর্বত্র একই চিত্র দেখা যায় বলে অভিযোগ ওই এলাকার অনেক বাসিন্দার। শহরবাসীর দাবি, নতুন নিকাশি নালা এবং হাইড্রেন তৈরি করে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অনেকের মতে, পরিকল্পনাহীন ভাবে শহরে যত্রতত্র বাড়ি এবং বহুতল নির্মাণ হওয়ায় নিকাশি সমস্যার তীব্র হয়েছে। তাদের দাবি, ‘‘অনেক জায়গায় নিকাশি নালার প্রায় উপরেই বাড়ি হয়েছে। বোঝার উপায়ই নেই যে সেখানে একটি নালা রয়েছে।’’
শহরের এক প্রবীণ বাসিন্দা রসিকতার সুরে বলেন, ‘‘সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরভবন চত্বরে জল জমা হয়। পুরভবনই যদি জলে ডুবে থাকে, তবে বাকি এলাকার কী অবস্থা হয়, তা অনুমান করা খুব সোজা।’’
নিকাশি নিয়ে পুরবাসীদের একাংশের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই নালায় পড়ে থাকা আবর্জনা তুলতে আসেন না সাফাইকর্মীরা। উল্টোদিকে, সেই সাফাইকর্মীদের একাংশের দাবি, অনেক সময় সাফাইয়ের কাজে পর্যাপ্ত কোদাল, গাঁইতি এবং অন্য জিনিসপত্র মেলে না। অস্থায়ী সাফাই কর্মীদের পারিশ্রমিক কম হওয়ায় এখন তাঁদের অনেকেই কাজে অনীহা প্রকাশ করে। যদিও এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন পুরপ্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy