গড় পঞ্চকোটে চলছে সংরক্ষণের কাজ। ইনসেটে, উদ্ধার হওয়া প্রত্নসামগ্রী। ছবি: সঙ্গীত নাগ
পঞ্চকোট রাজবংশের রাজধানী, পুরুলিয়ার গড় পঞ্চকোটের প্রত্নস্থলগুলির সংরক্ষণের কাজ হাতে নিয়েছে ‘রাজ্য হেরিটেজ কমিশন’। পাহাড় ঘিরে থাকা রঘুনাথ মন্দির-সহ আরও কিছু প্রাচীন ভগ্নপ্রায় মন্দির, রাজবাড়ির মূল দুর্গ, ‘কাছারি বাড়ি’, ‘রানিমহল’ সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। পাহাড়ে খনন-কাজের সময়ে বেশ কিছু প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার হয়েছে বলে নিতুড়িয়া ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার ওই সামগ্রীগুলি দেখতে দুই আধিকারিক পাহাড়ে যান, জানান বিডিও (নিতুড়িয়া) অজয়কুমার সামন্ত। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাথরে খোদাই করা একটি বিষ্ণুমূর্তি, একটি হনুমানের মূর্তি-সহ পোড়ামাটির তৈরি কিছু ভাঙা পাত্র, ফুলদানি, প্রদীপ উদ্ধার হয়েছে।
জেলার লোক-গবেষকদের একাংশের মতে, গড় পঞ্চকোটের পাহাড়ে ছিল পঞ্চকোট রাজবংশের তৃতীয় রাজধানী। লোক-গবেষক দিলীপ গোস্বামীর মতে, কীর্তিনাথ শিখর আনুমানিক ৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে পাড়া থেকে নিতুড়িয়ার পঞ্চকোট পাহাড়ে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। পাহাড়ে রাজধানী ছিল ১৭৫০ পর্যন্ত। ওই পর্বে প্রায় আটশো বছরে ৩২ জন রাজা রাজত্ব করেছেন। পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছিল রাজধানীর ব্যাপ্তি। রাজধানীর চার প্রবেশপথে ছিল চারটি তোরণ। এখন শুধু দুয়ারবাঁধ তোরণটিই টিকে আছে। পাহাড়ের পাঁচশো ফুট উপরে ছিল মূল দুর্গ। আর তার পাদদেশে ছিল অন্দরমহল, যা স্থানীয় ভাবে ‘রানিমহল’ নামে পরিচিত।
হেরিটেজ কমিশনের সংরক্ষণ স্থপতি অঞ্জন মিশ্র জানান, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে সব মন্দির বা অন্য নির্মাণ ভেঙে পড়ছে, সেগুলিকে টিকিয়ে রাখা। বছর সাত-আটেক আগে, হেরিটেজ কমিশনই পাহাড়ের মন্দিরক্ষেত্রের পঞ্চরত্নের মন্দির সংস্কার করে নতুন ভাবে তৈরি করে, যা বর্তমানে পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষণ। স্থানীয়দেরও দাবি, পঞ্চরত্নের মন্দিরের মতো আমূল সংস্কার করা হোক অন্য মন্দির ও রাজধানীর অন্য নির্মাণগুলিকে। দিলীপবাবু বলেন, “পঞ্চকোট রাজবংশের রাজধানীর বিভিন্ন নির্মাণ-সহ মন্দিরগুলিকে সংরক্ষণের দাবি বিভিন্ন মহল থেকে অনেক আগেই জানানো হয়েছিল। কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। আগামী প্রজন্মের কাছে ওই এলাকার ইতিহাস অন্তত বেঁচে থাকবে।”
তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মাধ্যমে সংরক্ষিত মন্দির-সহ অন্য নির্মাণগুলির রক্ষণাবেক্ষণের ভাবনা রয়েছে হেরিটেজ কমিশনের। অঞ্জনবাবু বলেন, “সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের পিছনে মূল বিষয় হল যেগুলিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তার প্রতি আবেগ কতটা রয়েছে। স্থানীয়দের পাহাড় ঘিরে আবেগ আছে। তাই সংরক্ষণের কাজে পাহাড় ঘিরে থাকা গ্রামগুলির বাসিন্দাদের একাংশকে কাজে লাগানোর ভাবনা রয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “সংরক্ষণেই কাজ শেষ হয় না। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না-হলে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি ফের নষ্টের আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয়েরাই কাজটি ভাল ভাবে করতে পারবেন।” আগামী এক বছরের মধ্যে সংরক্ষণের কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, জানান তিনি।
পাহাড়ের মন্দির-সহ অন্য নির্মাণকে সংরক্ষণ করে পর্যটন বিকাশের লক্ষ্য থাকলেও নিয়ন্ত্রিত পর্যটনের ভাবনা রয়েছে প্রশাসনের। বিডিও (নিতুড়িয়া) বলেন, “সংরক্ষণের কাজ শেষ হওয়ার পরে, পাহাড়ে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন চালুর ভাবনা আছে। এমনিতেই পাহাড়ে এখন ডিজে বাজানো, প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পাহাড়ের যেখানে-সেখানে পিকনিক বন্ধ করা ও মন্দিরক্ষেত্র এলাকায় ছোট ঝুপড়ি খাবারের দোকান বন্ধের পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের।” তিনি আরও জানান, পর্যটন ঘিরে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে কিছু যুবককে চিহ্নিত করে তাঁদের এলাকার ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করিয়ে ‘গাইড’ হিসাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনানিয়েছে প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy