Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Purulia

মানুষের চাহিদা জেনে তৈরি হোক পরিকল্পনা, শিবিরে বার্তা দিল প্রশাসন

তবে একটি পরিকল্পনার সঠিক রূপায়ণ তখনই সম্ভব, যদি তাতে কোনও ত্রুটি বা ঘাটতি না থাকে।

প্রশিক্ষণ: গ্রাম পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান নিয়ে কর্মশালা। মঙ্গলবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

প্রশিক্ষণ: গ্রাম পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান নিয়ে কর্মশালা। মঙ্গলবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:০৭
Share: Save:

এলাকার মানুষ কী চাইছেন, তা ঠিকঠাক জেনে নেওয়ার পরেই চলতি অর্থবর্ষে পরিকল্পনা করতে হবে। তবেই এলাকার প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। মঙ্গলবার সিউড়ির ডিআরডিসি হলে গ্রাম পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান বা জিপিডিপি বিষয়ক একটি এক দিনের কর্মশালায় জেলার সমস্ত পঞ্চায়েতকে এমনই বার্তা দিলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের মতে, বরাদ্দ এবং নজরদারি নিশ্চয়ই জরুরি। তবে একটি পরিকল্পনার সঠিক রূপায়ণ তখনই সম্ভব, যদি তাতে কোনও ত্রুটি বা ঘাটতি না থাকে।

এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রশান্ত অধিকারী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দীপ্তেন্দু বেরা, মহকুমাশাসক (সদর) রাজীব মণ্ডল, জেলার অন্যান্য আধিকারিক, প্রতিটি ব্লকের বিডিও এবং প্রতিটি পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত কর্মীরা। কী ভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে এসেছিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের রাজ্য স্তরের আধিকারিকেরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত চতুর্দশ অর্থ কমিশন এবং আইএসজিপি— এই দু’টি প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত অর্থ এলাকার কোন কোন উন্নয়নমূলক কাজে খরচ করা হবে, তার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ১০০ দিনের কাজের সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ, প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় অনেক বেশি মানুষের উপস্থিতিতে হওয়া গ্রাম সংসদ সভা, পাড়া বৈঠকে উঠে আসা মানুষের প্রকৃত চাহিদা জেনে পরিকল্পনা নিতে হবে। কোন কোন বিষয় নজরে রেখে এগোতে হবে, সে বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। পরিকল্পনা হয়ে গেলে একশো শতাংশ নজরদারিতে সেই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। কারণ রাজ্যে পঞ্চায়েতগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যায় কর্মী রয়েছেন। প্রথম পরিকল্পনা তাই দায়সারা করে তৈরি করে পরে একের পর এক ‘সাপ্লিমেন্টারি’ বা সংযোজিত পরিকল্পনা জেলায় পাঠালে (যা অতীতে হয়েছে) তা যে ভাল ভাবে নেওয়া হবে না, সে কথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।

জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান ও কর্মীদের উদ্দেশে জেলাশাসক বলেন, ‘‘আপনি বা আমরা কী ভাবছি, সেটা বড় কথা নয়। এলাকার মানুষ কী চাইছেন, সেটাই পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি।’’ জেলাশাসক ১০০ দিনের কাজ নিয়ে পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে একটি ভিন্ন প্রেক্ষিতের দিকে সব পঞ্চায়েতকে নজর দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গড় কর্মদিবস বাড়ানোর লক্ষ্যের পিছনে না ছুটে এলাকার সব মানুষ যেন কাজ পান, সেটা দেখতে হবে।’’ প্রশাসন সূত্রেই খবর, সব জবকার্ডধারীকে নয়, মুষ্টিমেয় কয়েক জনকে কাজ দিয়ে গড় কর্মদিবস বাড়ানোর একটা চেষ্টা চলে জেলায়। গত জুনে সিউড়ি ২ ব্লকের কোমা পঞ্চায়েতের চাতরা গ্রামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ১০০ দিনের কাজের টাকা বিলি করার ঘটনা সামনে আসার সময় এমনই অভিযোগ উঠেছিল। প্রশাসন অবশ্য সেটা মানতে চায় নি। তবে এ দিন জেলাশাসকদের কথায় যেন তারই ইঙ্গিত। তিনি বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজ কেমন হল, সেটা কতগুলো সূচক ধরে ঠিক করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে গড় কর্মদিবস। গতবার আমাদের জেলায় গড় কর্মদিবস ছিল ৭০ দিন। কিন্তু, সেই তথ্যের থেকেও বড় কথা, এলাকার মানুষ কাজ চাইলে কাজ পাচ্ছেন কিনা।’’ একই সঙ্গে পরিকল্পনা করার সময় জল সংরক্ষণ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপরে নজর দিতে বলেছেন জেলাশাসক।

গত অর্থবর্ষে ভাল পরিকল্পনা করার জন্য প্রথম হয়েছে ইলামবাজার গ্রাম পঞ্চায়েত। যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় হয়েছে নানুরের বড়সাওতা, সিউড়ি ২ ব্লকের কোমা এবং তৃতীয় স্থান মুরারইয়ের আমডোল গ্রাম পঞ্চায়েতের। এই চার পঞ্চায়েতকেই এ দিন পুরস্কৃত করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দীপ্তেন্দু বেরার কথায়, ‘‘পরিকল্পনা তৈরির সময় গ্রাম সভায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের উপস্থিতি ছিল কিনা, মানুষকে বলতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিনা, এমন নানা দিক খতিয়ে দেখে ওই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বাছা হয়েছে। এই পুরস্কার আগামী দিনে বাকি পঞ্চায়েতগুলিকেও সঠিক পরিকল্পনা নিতে অনুপ্রাণিত করবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia District administration People's demand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE